মাওলানা মিরাজ রহমান
দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিম-জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অবস্থিত দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্যাটিজিক স্টাডিজ সেন্টার দ্বারা পরিচালিত একটি আয়োজন। যারা মূলত বিশ্বব্যাপি প্রতিবছর প্রভাশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি জরিপ পরিচালনা করে থাকে। এটি একটি সম্পূর্ণ বেসরকারি স্বাধীন গবেষণা সংস্থা। প্রতি বছরের মতো ২০১৭ সালে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের নাম। ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের নাম নির্বাচন করার পর আরো দুই ধাপে দুটি জরিপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয়।
২০১৭ সালের নির্বাচিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্ব কারা নির্বাচিত হয়েছেন? চলুন জেনে নেই বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
১. অধ্যাপক ড. শেখ আহমদ মুহাম্মদ আল-তৈয়ব: বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার প্রথমে রয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। তার দেশ মিশর। জন্ম- ১৯৪৬ সালে। মূলত প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তিনি প্রভাশালী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। বর্তমানে তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রান্ড শায়খ এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের গ্রান্ড ইমাম হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। এরপূর্বে তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় সাত বছর এবং মিশরে সবচেয়ে শক্তিশালী ধর্মীয় নেতা বা গ্র্যান্ড মুফতি হিসাবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
২. কিং আবদুল্লাহ (দ্বিতীয়) ইবনে আল হুসাইন: বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৬ সালের জরিপে তিনি প্রথম ছিলেন। তার দেশ জর্ডান। জন্ম- ১৯৬২ সাল অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৫৪ বছর। রাজনীতি এবং ঐতিহ্যবাহী বংশের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী নির্বাচিত। তিনিও একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম নেতা। বর্তমানে তিনি জর্ডানের হাশেমাইট কিংডমের রাজা এবং জেরুজালেমের বিভিন্ন অঞ্চলের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। মুসলিম বিশ্বের দুটি বিরাট দ্বন্দ্ব নিরসনে ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে কিং আবদুল্লাহ (দ্বিতীয়) বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হন।
৩. কিং সালমান বিন আবদুল আজিজ কিন আল সৌদ: বিশ্বের সবেচেয় প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। তার দেশ সৌদি আরব। জন্ম- ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ মোতাবেক তার বয়স ৮০ বছর। রাজনৈতিক ক্ষমতার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিং সালমান বিন আবদুল আজিজ মর্ডারেট সালাফি মুসলিম নেতা। বর্তমানে তিনি রয়েল সৌদি আরবের বাদশাহ এবং সৌদি আরবে অবস্থিত পবিত্র দুই মসজিদের জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি এই পদে আসীন হন। এর পূর্বে তিনি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে সৌদি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪. সাইয়্যেদ আলী খোমেনি: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি চতুর্থ স্থানের অধিকারী ছিলেন। তার দেশে ইরান। ১৭ জুলাই ১৯৩৯ সালে জন্ম মোতাবেক তার বয়স এখন ৭৭ বছর। রাজনীতি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার কারণে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী শিয়া মুসলিম। পাশাপাশি একজন বিপ্লবী শিয়া নেতা। তিনিই বর্তমানে ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সবোর্চ্চ নেতা।
৫. কিং মুহাম্মাদ (ষষ্ঠ): বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার পঞ্চম ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি পঞ্চম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার দেশ মরক্কো। ২১ আগস্ট ১৯৬৩ সালে জন্ম মোতাবেক তার বয়স ৫৩ বছর। রাজনীতি, প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং উন্নয়নের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মালেকি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। বর্তমানের তিনি মরক্কোর বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিং মুহাম্মাদ (ষষ্ঠ) সরাসরি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বংশধর এবং তার পরিবারের সদস্যরাই বিগত ৪০০ বছর যাবত মরক্কো শাসন করছেন।
৬. বিচারপতি শায়খ মুহাম্মাদ তাকি উসমানি: বিশ্বের সবেচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপে তিনি ২২তম স্থানে ছিলেন। তার দেশ পাকিস্তান। ০৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে জন্ম মোতাবেক তার বর্তমান বয়স ৭৩ বছর। পাণ্ডিত্যপূর্ণতা এবং বংশধারার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। ইসলামিক আইনশাস্ত্র ও ইসলামিক অর্থনীতি বিষয়ে তিনি বিশ্ববিখ্যাত স্কলার। ১৯৮২ সাল থেকে ২০০২ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারকও ছিলেন তিনি।
৭. সাইয়্যেদ আলী হুসাইন সিস্তানি: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার সপ্তম স্থানে রয়েছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপে তিনি টপ টেন তালিকাতে ছিলেন না। তবে ২০১৪/১৫ সালের জরিপে সপ্তম স্থানের অধিকারী ছিলেন। তার দেশে ইরান। তিনি ০৪ আগস্ট ১৯৩০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বর্তমান বয়স ৮৬ বছর। পাণ্ডিত্যপূর্ণতা এবং বংশধারার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব বিবেচিত। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী শিয়া মুসলিম। তিনি ইরানের একজন বিপ্লবী নেতা হিসেবে পরিচিত।
৮. প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়িপ এর্দোগান: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার অষ্টম ব্যক্তিত্ব তিনি। ২০১৬ সালের জরিপেও তিনি অষ্টম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার দেশ তুরস্ক। ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সালে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স ৬২ বছর। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আধিপত্যের বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত। ২০১৪ সাল থেকে বর্তমানে তিনি তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। এর আগে তিনি টানা ১১ বছর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সারা বিশ্বব্যাপি তিনি একজন সমাদৃত মুসলিম নেতা হিসেবে বিবেচিত।
৯. শায়খ আবদুল্লাহ বিন বায়াহ: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার নবম স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। ২০১৬ সালের জরিপে তিনি ২৩তম স্থানে ছিলেন। পাণ্ডিত্যপূর্ণতার বিবেচনায় তিনি প্রভাবশালী মুসলিম নির্বাচিত হয়েছেন। তার দেশ মরিতানিয়া। তিনি ১৯৩৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৮১ বছর। তিনি বর্তমানে ফোরাম ফর প্রোমোটিং পিস ইন মুসলিম সোসাইটি নাম বিশ্ব্যব্যাপী সমাদৃত সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মালেকি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে তিনি একজন ঐতিহ্যবাহী সুন্নি মুসলিম। তিনি পূর্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র মৌরিতানিয়ার হাইকোর্ট বিচার বিভাগের শরীয়াহ বিষয়ক প্রধান বিচারক ছিলেন।
১০. আমির হাজি মুহাম্মাদ আবদুল ওয়াহহাব: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০জন মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকার দশম স্থানে রয়েছেন তিনি। ২০১৫/১৬ সালের জরিপেও তিনি দশম স্থানের অধিকারী ছিলেন। তার দেশে পাকিস্তান। তার জন্ম ১৯২৩ সালে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার লিডার হিসেবে তিনি প্রভাবশালী মুসলিম নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তাবলীগ জামাতের পাকিস্তান অধ্যায়ের আমির। এছাড়া আন্তর্জাতিক তাবলীগ জামাতের গুরুত্বপূর্ণ মুরুব্বি। পাশাপাশি তিনি একজন ধর্মীয় রক্ষণশীল ও আধ্যাত্মিক নেতা। হানাফি মাজহারে অনুসারী হিসেবে তিনি ঐহিত্যবাহী সুন্নি মুসলিম।
সূত্র : দ্য ওয়ার্ল্ডস ফাইভ হানড্রেড মোস্ট ইনফ্লুনসিয়াল মুসলিম। প্রিয় ডটকম