শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাদানের অপূর্ব পন্থা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল আজিজ রুমান : জনৈক মহিলা একটি বিষ্ময়কর ঘটনা বলছিলেন, আমার এক বান্ধবীর সাথে সাক্ষাৎ করতে তার বাসায় গিয়েছিলাম।এসময় তার তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে আমাদের কাছে আসলো যে অ আ ক খ আলিফ-বা পড়ে। সে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে কাপড়ের আঁচল টেনে বললো 'মা আজ আমরা জান্নাতে প্রাসাদ বানাবো না? আমার মনে হল এটা ভুল শুনেছি। ওমা এ কী! একথাটা সে বার বার বলছে! কিছুক্ষণ পর তার সাথে তার অন্য বোনেরা এসেও একি কথা বলছে। শিশুর মমতাময়ী মা আমার বিস্মিত দৃষ্টি দেখে মুচকি হেসে বললেন 'আমি আর আমার সন্তানেরা জান্নাতে কিভাবে প্রাসাদ নির্মাণ করি তা কি আপনি দেখতে চান! আমি তার কথায় সায় দিয়ে তাদের অদ্ভুত কর্মকাণ্ড দেখতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখলাম মা এবং সন্তানেরা গোল হয়ে বসলো। বাচ্চাদের বয়স তিন থেকে দশের ভেতরে। তারা সবাই প্রাসাদ বানাবার প্রস্তুতি নিয়ে চুপ হয়ে বসে আছে। তখন মা সুরায়ে ইখলাস 'কুলহুআল্লাহু আহাদ আল্লাহুস্সামাদ.
.......পড়তে লাগলেন। বাচ্চারাও তার সাথে পড়তে শুরু করল। এভাবে দশবার তারা সুরাটি পড়ল। পড়া শেষ হলে আনন্দিত হয়ে সু-উচ্চ স্বরে তারা একসাথে বলতে লাগলো 'আলহামদুলিল্লাহ' আমরা জান্নাতে প্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছি!
এরপর মা বাচ্চাদের জিগেস করলেন তোমাদের প্রাসাদের প্রান্তসীমায় কতটি খেজুরবৃক্ষ রোপন করতে চাও! তখন তারা সমস্বরে রবের সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করলো। অতঃপর মা সন্তানদের লক্ষ্য করে বললেন 'তোমরা প্রাসাদোদ্যানের সৌন্দর্য বাড়াতে কতটি ফুলগাছ লাগাবে! তখন তারা একসাথে সুবহানাল্লাহ আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে লাগল। মা আবার বাচ্চাদের জিগেস করলেন 'তোমরা প্রাসাদে কী রাখতে চাও'! উত্তরে কোমলমতি শিশুরা বললো 'ফার্নিচার হীরা মনি মুক্তো রাখতে চাই! তখন তারা লা-হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা....মুখে মুখে আওড়াতে লাগলো। মা পূনরায় বাচ্চাদের জিগেস করলেন 'কে চাও যে প্রিয় নবীজি তোমার কাছে এসে হাওজে কাওসার থেকে এক পেয়ালা পানি পান করাবেন, ফলে আর কখনো সে পিপাসিত হবে না'! তখন তারা সকলেই পড়তে লাগল 'আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মদ ওয়ালা...............! আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদ ওয়ালা...........!
এরপর তারা নিজ নিজ কাজে চলে গেল। কেউ ক্লাসের পড়া মুখস্ত করল, কেউ অন্য কাজে মনোনিবেশ করল।

আমি বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলাম এ অভাবনীয় কাজ তুমি কিভাবে করলে! সে জানালো বাচ্চারা আমাকে নিয়ে তাদের মধ্যখানে বসিয়ে একসাথে বসে গল্প করতে ভালোবাসে। আমি ভাবলাম এসময়ে তাদেরকে (দীনি বিষয়) শিক্ষা দিলে এবং আল্লাহর যিকিরে অভ্যস্ত করতে পারলে ভালোই হবে। তাই আমি এ দু'আগুলো নির্বাচন করে তাদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ওদের সম্মুখে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চাইলাম যাতে তাদের কঁচি হৃদয়ে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে। কারণ তারা শিক্ষালয়ে যাত্রাকালে অনিন্দ্য সুন্দর মনোরম প্রাসাদ দেখে ওদের ভেতরে সেগুলোতে বাস করার প্রবল ইচ্ছে জাগে। বড় বিজন্যাসম্যানদের মত কাঁড়ি কাড়ি টাকা কামানোর বাসনা জাগে!!

পূনশ্চ: সন্তানদের জন্য মায়ের এ শিক্ষাপদ্ধতিটি আপন আপন সন্তানদের উন্নততম আখলাক শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অপূর্ব এক মডেল হতে পারে। এশিক্ষা যেন এক প্রকার সদকায়ে জারিয়া যার সুমিষ্ট ফল মা-জাতি ভক্ষণ করবে মাঠির নিচে অন্ধকার কবরে বসে বসে।
(আল-আযহার ইউনিভার্সিটির আকিদা ও ফালসাফা অনুষদের প্রবীণ অধ্যাপিকা ড.ইলহাম মুহাম্মদ শাহিন [বুড়ি দাদুর] ওয়াল থেকে)

-এজেড


সম্পর্কিত খবর