শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হঠাৎ ভাঙ্গণে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : হঠাৎ তিস্তায় ভাঙ্গণ দেখা দেয়ায় দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ। সারা বছর শুষ্ক থাকা তিস্তায় হঠাৎ-ই ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি সাথে ভারত থেকে ঢলের পানিতে এমন তীব্র ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর আহাজারিতে এখন ভারী হয়ে উঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস। তিস্তার ভাঙ্গন থেকে বাড়িঘর কোন রকম রক্ষা করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি মূল্যবান গাছপালা। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এসব পরিবার আজ দিশেহারা।

এমনই দৃশ্য দেখা গেছে,বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে।

তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রবলস্রোতে মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২ সংলগ্ন এলাকা ও গোবর্ধন ৭ নং ও ৮ নং ওয়ার্ডের কিছু অংশে আঘাত হানে।

বুধবার রাত এগারটার দিকে সলেডি স্পার-২ এর ভাটিতে থাকা ৮টি পরিবারের বাড়িঘর মাত্র ৩০ মিনিটের মাথায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী ও স্থানীয় এলাকাবাসী তিস্তা নদীর হাত থেকে এসব পরিবারের বাড়িঘর উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নেন। কিন্তু এসব পরিবারের মূল্যবান গাছপালা চোখের পলকে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আর সলেডি স্পার-২ এর বাঁধটি তিস্তা নদী আঘাত হানতে শুরু করে। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২ বাঁধটি রক্ষার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪শ জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই সাথে মজুদ রাখা দেড় হাজার সিসি ব্লকও ফেলা হচ্ছে তিস্তা নদীতে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সলেডি স্পার-২ এর উজানে গোবর্ধন ৭ নং ওয়ার্ডে তিস্তায় তীব্র আকার ভাঙ্গন দেখা গেছে। এসময় নিমিষেই সেখানে প্রায় ১২টি পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

গত এক সপ্তাহ পূর্বে তিস্তায় ২২টি পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে গরীবের হাসপাতাল নামে পরিচিত গোবর্ধন কমিউনিটি ক্লিনিকটি। যে কোন মূহুর্তেই এটি তিস্তার কড়াল গ্রাসে বিলীন হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী জানান।

৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হামিজার রহমান জানান, সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে তিস্তা নদীতে ১৪টি পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হলেও এসব পরিবার মূল্যবান গাছপালা রক্ষা করতে পারেনি। তিনি আরও জানান, এসব পরিবার এখন তিস্তার নদীর ওপারে চাঁদের চরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, পানি কমার সাথে সাথে তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন বলে তিনি দাবী করেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নদী ভাঙ্গনের স্বীকার পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে সরকারীভাবে ২৭ মেঃ টন জিআর চাল, ২ লক্ষ টাকা আর ২শ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কুমার সরকার জানান, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে সকাল থেকে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে। তবে সলেডি স্পার-২ বাঁধটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।


সম্পর্কিত খবর