ওয়ালি খান রাজু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
বাংলাদেশে নানা শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান, বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, আলিয়া মাধ্যম, কওমি মাধ্যম। সেক্যুলার আর ব্রাক্ষন্যবাদী প্রভাবে বাংলা মাধ্যম যখন প্রভাবিত, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে ইংরেজি মাধ্যমও যখন সঠিক আদলে নেই তখন দুই মাধ্যমের সমন্বয় সাধন করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষা বিস্তার করছে দেশের হাজারো আলিয়া মাদরাসা। ইসলামি জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মতো আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আলিয়া মাদরাসাগুলোর অবদান অনস্বীকার্য, আর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। বিগত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষস্থান তামিরুল মিল্লাতেরই দখলে।
জাতীয় পর্যায়ে চারবার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা। তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্টি বোর্ডের পরিচালনায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের তিনটি শাখা রয়েছে, যাত্রাবাড়ী শাখা, মাতুয়াইল মহিলা মাদ্রাসা শাখা এবং টংগী শাখা। তিন শাখা মিলে তামিরুল মিল্লাতের বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ হাজারের কাছাকাছি।
১৯৬৩ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। তারপর কালের বিবর্তনে
আজ তা পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়ে বিরাট মহীরূহে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সফলতা ও দ্বীনি শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সনে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী ক্যাম্পাসের শুভ সূচনা হয়। এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, আবাসন ব্যবস্থা ও মনোরম পরিবেশ রয়েছে। মুসলিম মেয়েদের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষণীয়, কিন্তু সেই তুলনায় তাদের জন্য মানসম্পন্ন স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান অপ্রতুল।
নারী গড়তে পারে একটি আদর্শ পরিবার ও সুন্দর সমাজ, সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিক বিপর্যয় থেকে মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা এবং নারীকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ২০০০ সনের শুরুতে রাজধানীর উপকণ্ঠে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট সূচনা করে- তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা। এরই ফলশ্রুতিতে ঢাকার অদূরে মাতুয়াইল চিটাগাং রোডের পাশে মনোরম পরিবেশে আবাসিক সুযোগ সুবিধাসহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘‘তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদ্রাসা ক্যাম্পাস’’। অভিভাবকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ২০১২ সাল হতে টঙ্গী ক্যাম্পাসে কামিল পর্যন্ত শরীয়ত সম্মতভাবে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা বালিকা শাখা টঙ্গীও তাদের যাত্রা শুরু করেছে।
মাদরাসায় প্রথম শ্রেণি থেকেই পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে, প্রতি শ্রেণিতে রয়েছে দুইটি করে সেকশন।
যুগের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে দাখিল, আলিম স্তরে বিজ্ঞান ও আইসিটি বিভাগ এবং কামিল এম.এ শ্রেণিতে হাদিস, তাফসির ও ফিকহ বিভাগ চালু রয়েছে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায়, এছাড়া ২০১০ সাল থেকে চালু হয়েছে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাযিল অনার্স কোর্স।
যারা আলেম হতে চান তাদের জন্য মাদরাসার কামিল শ্রেণিতে রয়েছে মুহাদ্দিসদের দ্বারা ছাত্রদের বুখারি শরিফ খতম করার বৈশিষ্ট্য। এছাড়া ফাযিল শ্রেণিতে আদব, বিভিন্ন হাদিসের কিতাব পড়ার সুযোগ।
অন্যান্য কার্যক্রমেও পিছিয়ে নেই তামিরুল মিল্লাত। মাদ্রাসায় রয়েছে মিল্লাত সাংস্কৃতিক জোট, তামিরুল মিল্লাত ছাত্র সংসদ, মিল্লাত ইউটিউবারসহ প্রভৃতি সংগঠন।
আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষিত হয়েও যে দেশের আধুনিক শিক্ষা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের উপর ছড়ি ঘুরানো যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ম্যাথ, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ পর্যায়ে প্রায়ই বিজয়ের মুকুট লাভ করেন, এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় এ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাফল্য নজরকাড়া।
লাখো শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ও ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৫, ২০১৭ সালে প্রথম হয়েছে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার দুই ছাত্র যথাক্রমে আব্দুর রহমান ও আব্দুল্লাহ।
এছাড়া মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও তামিরুল মিল্লাতের ছাত্রদের মধ্য থেকে অনেকেই প্রতি বছর উত্তীর্ণ হয়ে চান্স পায়।
দেশের বাইরের বিভিন্ন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আল আজহার, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউরোপের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়েও তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীদের পদচারণা বিদ্যমান।
২০১৬ সালে ব্রিটিশ রাণীর হাত থেকে ইয়ং লিডার পদকে ভূষিত হওয়া দেশের উজ্জ্বল সন্তান উসামা বিন নুর হাই স্কুল জীবনে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসারই ছাত্র ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপনার করছেন তামিরুল মিল্লাতের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলেম, ইসলামি স্কলার, ব্যাংকার,সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হিসেবে, কবি, সাহিত্যিক হিসেবে তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীরা কর্মরত আছেন।
দীর্ঘদিন ধরে তামিরুল মিল্লাতের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষাবিদ ও আলেম অধ্যক্ষ মাওলানা জয়নুল আবেদীন। বিভিন্ন শাখায় শতাধিক শিক্ষককে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার গুরু দায়িত্ব তিনি পালন করছেন।
অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা এ অঞ্চলে ইসলামি ও আধুনিক শিক্ষালয় হিসেবে যুগ যুগ ধরে জ্বলন্ত আলোকবর্তিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকুক এমনটিই চেয়েছেন তামিরুল মিল্লাতের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীদের মত ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীও প্রত্যাশা করেন, তামিরুল মিল্লাত যেন এ অঞ্চলের মুসলিম মিল্লাতের জনগোষ্ঠীর পথ প্রদর্শক হিসেবে নেতৃত্ব দেয়।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আন্তঃমাদরাসা প্রতিযোগিতার আয়োজন