আহমদ সেলিম রেজা
আল্লাহ একজন। আখেরী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন। কোরআন শরীফ একটি। তাহলে হাদিস শরীফ এতোগুলি কেন? ইসলামের শরিয়তও একটি। তাহলে ধর্মের নামে দেশে দেশে আলেম ওলেমাদের এতো মতভেদই বা কেন? সবই কী শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই? তাইলে সেক্যুলারিজমের দোষ কী?
ধার্মিক লোকেরা কী দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বে জন্য লড়াই করে না আখিরাতের শ্রেষ্ঠত্বে জন্য লড়াই করে?
ইসলামে ধার্মিক কে? যার কুর্তা পাগড়ি ও দাঁড়ি যত লম্বা তা দিয়েই কি ধার্মিক নির্ধারিত হয়? নাকি কার ভক্ত মুরিদ বা অনুসারী কত-সেই সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হয়? নাকি যিনি আল্লাহকে ভয় পান এবং নবীজির পথে চলেন তিনিই ধার্মিক। নাকি ধার্মিক হতে হলে শিয়া-সুন্নী বা হানাফি না রফে হতে হয়?
সঠিক দর্শন কোনটা? উম্মি মুসলমান হিসেবে দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব বাছাই করব কিভাবে?
কঠোর স্বভাবের ওহাবী, সালাফী দর্শন না কোমল স্বভাবের তরিকতের পথ? জিহাদের পথ কোনটা আর শাহাদাতে কারবলার পথ কোনটা? শাহাদাতে কারবালার পথ কী জিহাদের পথ ছিল না সিরাতুল মোস্তাকিমের পথ ছিল? ইমাম হোসাইন রা. কী যুদ্ধ করতে করবালায় এসেছিলেন না যুদ্ধ করে এজিদকে পরাজিত করতে চেয়েছিলেন? তিনি যুদ্ধ না করে মদিনায় ফিরে যেতে চেয়েছিলেন কেন? বাইয়্যাত কী? কুফাবাসীরা কেন বাইয়্যাত হতে চেয়েছিল? বাইয়্যাতের খবরে রাষ্ট্রের প্রশাসক উদ্বিগ্ন ও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল কেন? ইসলাম কী বাইয়্যাত সমর্থন করে? এসব প্রশ্নের মিমাংসা কী?
আমার এক বাতেনী হুজুর আছেন। ঘরকুনো। খুব একটা বাইরে বের হন না। তো তাকে একা পেলেই আমার যেন প্রশ্নের শেষ নেই। উনিও চুপচাপ শুনে যান। কখনো মৃদু মৃদু হাসেন। কখনো উত্তর দেন। কখনো দেন না। কখনো নিজের মধ্য খুঁজে দেখতে বলেন। সেদিন তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, আরো কোন প্রশ্ন আছে? না হয় আমি উঠবো। তারপর বল্লেন, শুধু মনে রাখিস বেশি প্রশ্ন করা শয়তানের খাইছিয়াত। তবে জানার জন্য মিমাংসার জন্য জায়েজ।
হুজুর আমার প্রশ্নের শেষ নাই। তবে প্রশ্ন করে আপনারে জ্বালাতন করার কোন ইচ্ছা আমার নাই। কিন্তু মিমাংসা তো চাই। তিনি বললেন, বল।
- ধর্মের বয়ানে আসা খারেজী কী? মুতাজিলা বা রাফেজী কী? শরিয়ত কী মারেফাত কী? তরিকত বা হাকিকতই বা কী? শিয়া কী সুন্নী কী? হাম্বুলি, শাফেয়ী বা মালেকি কী? হুজুর হাসেন।
আচ্ছা বলতে পারেন, বিবিসি হঠাৎ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসাইনের ফাঁসি দেওয়ার সময় আমেরিকান সৈন্যদের কান্নার কথা ফলাও করে প্রচার করা শুরু করলো কেন? সাদ্দামের ফাঁসির পর মার্কিনীরা যখন কাঁদছে তখন মুসমানরা তার লাশের ওপর থু থু ছিটাচ্ছে-এই গোপন তথ্য হঠাৎ সগৌরবে প্রকাশের কারণই বা কী? লেবাননে কবে সিরিয়ান আর্মি গিয়েছিল কবে তারা ফিরে এসেছিল, তাদের সাথে লেবানিজ সুন্নীদেও আচরণ কেমন ছিল এই গবেষণায় মেতে উঠল কেন? তারপর তাদের বায়ু উঠল ইসলামের যাকাতের বিধান নিয়ে। কেন? আয়কর দিলে মুসলমানদের যাকাত দিতে হবে কীনা হঠাৎ তাদের এই মাথা ব্যথা উঠল কেন?
সব তারছিঁড়া কারবার। আমার যেমন প্রশ্নের কোন খৈ বা ধারাবাহিকতা নেই। মুসলমানদের পাক ভূমি সৌদি আরবের রাজা বাদশাদেরও তার তার ছিঁড়া গেল কি-না আল্লাহই জানে। রোজার মাসে তারা কাতার সীমান্ত বন্ধ করে দিল। সাথে সাথে কোরাস ধরল মিশর, আরব আমিরাত, বাইরাইন । বন্ধ, বন্ধ। আকাশ বন্ধ, পানি বন্ধ, বন্ধ মাটি ও বালুকাময় মুরুভূমি। নোনা পানি ঘেরা দ্বীপ দেশ মালদ্বীপও বলে হুক্কা হুয়া। আমিও আছি। বন্ধ।
নবীজী নাকি বলেছিলেন, আরব-আজম বলে ইসলামে কোন পার্থক্য নাই। মুসলমান মুসলমানের ভাই। কাতার তো আরব জাতিরই অংশ। আমাদের মতো আজম বা অনারব নয়। তাহলে মুসলমান মুসলমানের ভাই- এই দর্শন থেকে মুসলমানদের সরিয়ে দিলো কে?
আবার যেই তুরস্ক আধা মুসলমান আধা খৃস্টান বা ইউরোপীয় বলে আরব বিশ্বে উপহাসের পাত্র। তবে তারা আবার সুন্নী মুসলমানদের দেশ। সেই তুরস্ক খাদ্য পানীয় নিয়ে গিয়ে দাঁড়াল সুন্নী মুসলমানদের দেশ কাতারের পাশে। আরেক অনারব রাষ্ট্র ইরান, শিয়া মুসলমানদের দেশ । সুন্নী মুসলমানরা তাদের অচ্ছুৎ মনে করে অর্থাৎ সুন্নী মুসলমানদেশে তাদের কোন মান মর্যাদা নাই । তারাও বিমান ও জাহাজ ভর্তি খাদ্য বস্তু নিয়ে গিয়ে দাঁড়াল কাতারী সুন্নী মুসলমানদের পাশে। হঅৎ হুজুর বলে ওঠেন,আল্লাহ মেহেরবান।
-হুজুর, খোদার কারবার তো কিছু বুঝে আসে না! সব দেশের মুসলমানরাই তো আল্লাহও মানি রাসূলও মানি। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলের সুন্নাত পালন করতাছে কে? দুই পবিত্র ঘরের খেদমতগাররা সুন্নী মুসলমানদের রাহবরদাররা হঠাৎ কার হুকুমে অপর সুন্নী মুসলমানদের খাদ্য-পানীয় বন্ধ করে দিলেন?
ইয়েমেনী মুসলমানদের খাদ্য পানীয় চিকিৎসা সামগ্রী বন্ধের পাশাপাশি তাদের ওপর যুদ্ধই চাপিয়ে দিলেন কেন?
হুজুর বলেন, মনে পড়ে? ইসলামের প্রথম যুগে নবীজীকে নির্বাসনে পাঠিয়ে খাদ্য পানীয় বন্ধ করে দিয়ে ছিল কাফের কুরাইশরা? আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় দেই। হ্যা মনে পড়ে। বলি, এখানে তো কাফের নেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র মুসলামান। তাহলে যারা এটা করলেন, মানে সৌদি আরবের শাসকেরা এটা করলেন কেন? শ্রেষ্ঠত্বে অহঙ্কারে নাকি ক্ষমতার মসনদে নিজের লোকটিকে রাখারা জন্য?
হুজুরের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি। নাকি রাগ বুঝতে পারছি না। এবার তিনি আমাকেই প্রশ্ন করা শুরু করলেন। ক্ষমতায় বসানোর মালিক কে? আমি দ্রুত জবাব দেই-আল্লাহ। আর আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ কে? আমি চুপ থাকি। হুজুর সূত্র ধরিয়ে দিয়ে আবার প্রশ্ন করেন। বল কে-যে বেশি অহঙ্কারী না যে বেশি বিনয়ী? দ্রুত জবাব দেই-যে বেশি বিনয়ী।
মনে পড়ে কী নবীজীর পথে কাঁটা বিছিয়ে নামাজে যেতে বাধা দিত এক কাঁটা বুড়ি। আবারো মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেই। হ্যাঁ মনে পড়ে।
তিনি বলেন, নবীজীর পথ অবরোধকারীনী সেই কাঁটাবুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খাদ্য পানীয় ওষুধ পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলা সাহায্যকারী মানুষটি কে ছিলেন?
তড়বড় করে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইলাইহে ওয়া সাল্লাম। স্বয়ং সেই নবীর সুন্নাত থেকে আমাদের বিচ্যুত করল কে?
কটমট করে চেয়ে থাকেন হুজুর। আমি বলি হুজুর এর কারণ নিশ্চয়ই আমার প্রশ্ন নয়? আমার পিঠে এটা কিল বসিয়ে দিয়ে উনি হেসে বলেন, বাড়ি যা। চলবে...
প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন ধর্মে এত বিবাদ কেনো? আত্ম কলহের নয়া ক্রুসেড ০১
পরিচিতি: সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক