শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কুরআন-সুন্নাহর আদর্শ ছাড়া রাজনীতি জায়েয নেই: ড. শামছুল আলম  ‘সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন’ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসানের ইন্তেকালে খেলাফত মজলিসের শোকপ্রকাশ কাল ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ যেসব সুপারিশ সংস্কার কমিশনের বাংলাদেশিদের সুখবর দিলো ইতালি, পুনরায় ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনে কোনো সাফাই নয়: সারজিস মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে সিলেট মহানগর জমিয়তের শোক

‘এইচআরডব্লিউ’ মিথ্যে নয় সত্য প্রকাশ করেছে: মীনাক্ষী গাঙ্গুলি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) প্রকাশিত ‘তিনি আমাদের কাছে নেই: বাংলাদেশে গোপনে আটক ও গুম’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সমালোচনা করায় বাংলাদেশ সরকারকে পাল্টা জবাব দিয়েছে সংস্থাটি।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, সত্য বলাটা মিথ্যা প্রচারণা নয়। ’এইচআরডব্লিউ’ যা প্রকাশ করেছে তা সত্য প্রকাশ করেছে।

গত বুধবার এইচআরডব্লিউ ‘তিনি আমাদের কাছে নেই : বাংলাদেশে গোপনে আটক ও গুম’ শীর্ষক ৮২ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।এতে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ’ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করে গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে।

এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ রিপোর্টকে ‘মিথ্যা প্রচারণা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার এইচআরডব্লি’কে ভাড়াটে সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে  শুক্রবার পাল্টা জবাব দিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

‘নো, বাংলাদেশ, দ্য ট্রু–থ ইজ নট এ স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ (সত্য বলাই মিথ্যা প্রচারণা নয়) শীর্ষক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে গোপন আটক ও গুম নিয়ে ৮২ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ রিপোর্টকে ‘স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ বা মিথ্যা প্রচারণা বলে দাবি করেন।

যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান বা সে বিষয়ে উত্তর পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে তা কঠিনভাবে উপেক্ষা করছেন তিনি। প্রতিবেদনের সমালোচনা করে স্থানীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, কাকে আপনি গুম বলবেন? অনেক ব্যবসায়ী তাদের ঋণ ফাঁকি দিতে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক মানুষ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের পর নিখোঁজ রয়েছেন।’

সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সেই মানুষকে নিখোঁজ ব্যক্তি (ডিজঅ্যাপেয়ার্ড পারসন) বলা হয়, যাকে রাষ্ট্রের কোনো এজেন্ট আটকে রাখে বা স্বাধীনতা বঞ্চিত করে রাখা হয়, অথবা তিনি কোথায় আছেন তা জানা না যায়। এমন অবস্থায় তাকে এমন স্থানে আটকে রাখা হয়, যেখানে তাকে আইনি সুরক্ষা দেয়া হয় না। তিনি লিখেছেন, ২০১৩ সাল থেকে কয়েকশ’ মানুষকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মী। তাদের অনেককে আটকে রাখা হয়েছে গোপন স্থানে।

এ ক্ষেত্রে এইচআরডব্লিউ বেশকিছু ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছে। অনেককে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। র‌্যাব, ডিবি বা প্রশাসনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। কিন্তু তা যখন করা হয়নি, তখন তাদের পরিবারের সদস্যরা বারবার হয়তো পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু তারা এসব স্বজনকে আটক রাখার কথা অস্বীকার করেছে। কয়েক সপ্তাহ বা মাস তাদের কাউকে কাউকে অবৈধভাবে আটক রাখার পর যদিও বা আদালতে হাজির করা হয়েছে, তবে অন্য অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তাদেরকে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে অনেককে। তাছাড়া অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ।’

মিনাক্ষী আরও লিখেছেন, ‘এসব ঘটনার তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরিবর্তে আসাদুজ্জামান খান ঘোষণা দিয়েছেন, তার সরকার এ রিপোর্ট পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধানের পদে বসে তিনি দাবি করেছেন, গুম নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেনি জাতিসংঘ।

প্রকৃতপক্ষে এসব নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে মন্তব্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কিন্তু জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সের পাঠানো ওই চিঠি বারবার অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ সরকার। হিউম্যান রাইটস কমিটিও কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে।’

মিনাক্ষী লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তিনি বারবারই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি হাইলাইট করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতায় গেলে এগুলো বন্ধ করবেন। এখন তার সরকারের পর্যায়ক্রমিক দ্বিতীয় মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার পূর্বসূরিদের মতো শুধু প্রতিধ্বনিই তুলছে না, একই সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গোপনে আটক করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ও সমালোচকদের গুম করে দিচ্ছে। এ ছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তবে এর আগে বিরোধী দলের সহিংসতা ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর বিষয়টি তিনি অবজ্ঞা করেছেন। মীনাক্ষী বলেন, আসলে বাংলাদেশ এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত।’

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ