শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


আল কুরআনের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন আল্লামা হুসাইনী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রবীণ আলেম ও খ্যাতিমান ওয়ায়েজ সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসিরে কুরআন শায়খুল হাদিস আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী ঢাকার সায়েদাবাদ অবস্থিত আল-কারীম জেনারেল হাসপাতালে বুধবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছে। তার মৃত্যেুতে গোটা আলেম সমাজে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।

আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী রহ. এর সহকর্মী আরেক বিখ্যাত দাঈ মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থেকে দেখেছেন তাকে। আওয়ার ইসলামের সঙ্গে সদ্য আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া এ মুফাসসিরকে নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করলেন।

মুঠোফোনে বলা স্মৃতিকথাগুলো সাজিয়েছেন আতাউর রহমান খসরু জামিল আহমদ

অত্যন্ত ব্যথাভরা হৃদয় নিয়েই আজ আপনার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রবীণ আলেম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমি আজই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছিলাম এবং তার পরিবারকে বলেছিলাম, হজরতের চিকিৎসায় যেনো কোনো কমতি না হয়। টাকা-পয়সার ব্যবস্থা দরকার হলে আমরাও করবো।

হজরতের সঙ্গে আমার পরিচয় সুদীর্ঘকালের আমি যখন কিশোর বয়সী তখনই তিনি দেশের তারকা বক্তা। সারা দেশের মানুষ তাকে  এক নামে চেনে। বাংলাদেশে আমার দৃষ্টিতে চারজন লোক ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলের মাধ্যেমে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তারা হলেন, খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ রহ., এরপর পর আসেন আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী, তার ১৫ বছর পর মাঠে আসেন আল্লামা হাবিবুল্লাহ মেসবাহ এবং বর্তমানে মাঠে আছেন আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী।

আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী রহ. যুবক বয়সেই বয়ান শুরু করেছেন এবং মুফাসসিরে কুরআন হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তার অনেক পরে এসে আরও পনের বছর আগে চলে যান মাওলানা হাবিবুল্লাহ মেসবাহ রহ.। কিন্তু আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী রহ. এই ঈদের দিন পর্যন্ত দুআ মাহফিল করেছেন।

৫৭ বছর মাঠে ময়দানে ওয়াজ মাহফিল করে মুসলমানের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন,  তেমনিভাবে ইসলামের সঠিক আকায়েদ আমাল নির্বিঘ্নে প্রচার করেছেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। তিনি ইসলামের প্রচার ও ইলমে দীনের খেদমতে যে কাজ করেছেন এটার নজির বিরল এই দেশে ও দেশের বাইরেও।

আমার মনে পড়ে আমি তখন কিশোর বয়সী। তখন আমার বয়স হবে ১০/১২ বছর, তখনকার সময় তিনি ফেনী বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আসতেন, আমরা তখন ভালোভাবে বুঝতামও না। এতোটুকু বুঝতাম মানুষ তার বয়ান শুনতে চায়। তার জন্য অপেক্ষা করে। সেই সময় আমার বয়স যদি ১২ বছর ধরা হয় আর এখন আমার বয়স ৫৭ বছর। ১২ বছর বয়সে আমি যখন দেখেছি তখন তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন; তাহলে বুঝুন তিনি কতো দিন ধরে কুরআনের সেবা করেছেন! আমার ধারণা মতে উনি ৫৭ বছর  মানুষকে কুরআনের তাফসির শুনিয়েছেন।

বয়সের ব্যবধান বেশ হলেও এবং কাজে-অভিজ্ঞতায় অনেক নবীন হলেও আমার সঙ্গে হজরতের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। আজ থেকে ২০ বছর আগে থেকেই আমরা সহকর্মীর মতো সারা বাংলাদেশে ইসলামী মহাসম্মেলন করে আসছি।আওলাদে রাসুল সায়্যিদ আবদুল মাজিদ নাদিম যখন বাংলাদেশে আসতেন তাকে নিয়ে আমরা সারা দেশ সফর করতাম। আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী ও আমিসহ তিনজন দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে ঘুরে মাহফিল করতাম।এসব ইসলামী মহাসম্মেলনের আয়োজন করতেন ফকীহুল মিল্লাত আল্লামা আবদুর রহমান রহ.। ইসলামী সম্মেলনের  জেলাওয়ারী বিশাল মাহফিলে আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী প্রধান অতিথি/ আলোচক হিসেবে বয়ান করতেন এবং সফরে অধিকাংশ সময় আমি আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী ও আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী এক গাড়িতে যাতায়াত করতাম। রংপুর দিনাজপুর ফেনী চট্রগ্রাম বিভিন্ন স্থানে । বেশ কিছু মাহফিল একসাথে করার কারণে হুজুরের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়।

হজরতের বিশেষত্ব ছিলো, তিনি কুরআন মাজিদের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বের করে ব্যাখ্যা করতেন এবং বুঝাতেন। তিনি আমাদের বড় বড় আকাবিরের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ রহ. তাদের অন্যতম। বিশেষত্ব আল্লামা হুসাইনী প্রথমত তাফসির বিষয়ে তিনি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় বের করতে পারদর্শী ছিলেন। দ্বিতীয়ত সাহাবায়ে কিরামের মহব্বত ছিলো আপরিসিম। সাহাবায়ে কিরামদের যে দ্বন্দ্ব হয়ে ছিলো ইহুদীদের কারণে তার সুষ্ঠু সমাধান দিতেন এমনভাবে যে, এসব ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তার কোন বিকল্প নাই।তিনি যে ব্যাখ্যা দিতেন তা বিস্ময়কর ও বিরল।

যদি তিনি জিহাদের বয়ান দিতেন তাহলে মনে হতো এখনি জিহাদের ময়দানে রওয়ানা হচ্ছি। আমরা একসঙ্গে চললেও তিনি ছিলেন আমার বয়সে অনেক বড়। কিন্তু কখনোই তার আচরণে মনে হয়নি সেটা।

রাসুল সা, নিষ্পাপ ও সাহাবায়ে কিরামের সম্মানের বিষয়ে যে মতানৈক্য গুলো বের করে তিনি আকাবিরদের নিয়মানুযায়ী তার সমাধান করতেন যা অত্যন্ত সুন্দর ছিলো। যা আমি অনেকের ক্ষেত্রে দেখি নাই।

ইলমের অবস্থা হলো তিনি ছিলে আলিয়া মাদরাসার ছাত্র তবে দেওবন্দের অনেক বড় বড় আলেম ছিলেন তার উস্তাদ আর শায়খুল ইসলাম সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর অন্যতম খলিফা তানুয়ার হযরত মাওলানা দোলোয়ার সাহেব রহ. ও হাঠহাজারীর হযরত আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. এর খলিফা ছিলেন।
আর তিনি তাসাউফের ক্ষেত্রে মাদানী সিলসিলার উচু তাবকার বুযুর্গ ছিলেন।

আল্লামা মোস্তফা আল হুসাইনী আর নেই


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ