শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কওমি মাদরাসায় চলছে ভর্তি; ক্লান্তি শেষে উৎসবের আমেজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান: প্রতি বছর শাওয়াল মাস শুরু হলেই কওমি মাদরাসাগুলোতে শুরু হয় ভর্তি উৎসব। ফরম উঠানো, ভর্তি পরীক্ষা, খানা জারি করতে দৌড়ঝাপের ব্যস্ততা লেগে থাকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। যারা আগের মাদরাসাতেই ভর্তি হন তাদের তো ঝক্কি নেই। কিন্তু নতুনদের বেলায় হিসেবটা অন্যরকম। সময় মাত্র দুইদিন। এরমধ্যেই অন্তত দুই তিনটা মাদরাসা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। সময় শেষ হলেই অপেক্ষাকৃত ভালো মাদরাসাগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে।

চলতি বছর ৭ শাওয়াল থেকেই কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে ভর্তি পরীক্ষা। কোথাও আবার ৮ শাওয়াল। প্রতিবছর এ সময়টাইতে কওমি মাদরাসাগুলোতে একযোগে ভর্তি শুরু হয়। মাদরাসাগুলোতে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিবছরই ভর্তি নবায়ন করতে হয়।যে কারণে ভিড়টা মোটা দাগে চোখে পড়ে সবার।

আওয়ার ইসলামের প্রতিনিধিরা কয়েকটি মাদরাসা ঘুরে দেখেছেন ভর্তি চিত্র। বিশেষ প্রতিবেদক হাসান আল মাহমুদ ছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সবচেয়ে বড় মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়ায় (শায়েখুল হাদিস রহ.)। তিনি বলেন, ৩ জুলাই সোমবার পুরো মাদরাসা ঘুরে দেখা গেছে অন্যরকম ব্যস্ততার চিত্র। কেউ ফরম তুলছেন, কেউ সেটা পূরণ করছেন, কেউ পরীক্ষার জন্য যাচ্ছেন ফরম নিয়ে। এভাবেই কয়েকশ শিক্ষার্থীর উৎসুক চিত্র ধরা পড়ে প্রতিবেদকের চোখে।

এখানে ভর্তি ইচ্ছুদের আরেকটা ব্যস্ততা ছিল ছবি তোলার। ভর্তির ফরমের সঙ্গে বিগত কয়েকবছর ধরে ছবি আবশ্যক হওয়ায় সাধারণত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পকেটেই পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকে না। এ কারণে মাদরাসার ব্যবস্থাপনায় নিচেই রাখা হয়েছে একজন ফটোগ্রাফার। সেটা মুহূর্তে প্রিন্টের ব্যবস্থাও। যাদের ছবি নেই তাদের লম্বা ভিড় দেখা গেল এখানে।

এদিকে জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় (আলী এন্ড নূর রিয়েল এস্টেট) ঘুরেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন হাসান আল মাহমুদ। দাওরায়ে হাদিসে এখানে ১০৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তবে এখানে এসে ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর করুন আরতি নাড়া দিয়েছে।

সুদুর লালমনিরহাট থেকে এসেছেন আবদুল্লাহ (ছদ্মনাম)। অনেক আশা নিয়েই এসেছিলেন, কাফিয়া জামাতে ভর্তি  হবেন রাহমানিয়ায়। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা ভালো হয়নি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে আশার দরজা। মনমরা দেখে তাকে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন এসব। তারপর জানতে চাইলেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা কিভাবে যেতে হয়?

এদিকে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে ছিলেন প্রতিবেদক মুহাম্মদ রাকিব হাসান।  সারাদেশ থেকে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের ভেতরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তার ছাপ থাকলেও তাদের চেহারায় নতুন মাদরাসায় ভর্তির আমেজ ঠিকই লক্ষ করেন তিনি।

সিলেট থেকে ঢাকার প্রথম সারির এ মাদরাসায় ভর্তি হতে আসা মুহাম্মাদ সালমান তার ভর্তি অভিজ্ঞতা নিযে বলেন, ফজর পর থেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আছর গড়িয়ে ভর্তির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সারাদিন অনেক কষ্ট হলেও, ভর্তি হতে পেরে অনেক খুশী হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ!

জামিয়া শারইয়্যাহয় জালালাইন জামাতে ভর্তি হওয়া আবদুল্লাহ মারুফ জানান, ৪ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের ভর্তি চলছে এখন। তিনি জানান, দাওরায়ে হাদিসে এখন পর্যন্ত ৩৭ জন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তবে ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এখনো পুরো সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।

মালিবাগে এবার নতুন করে আদব বিভাগ খোলা হয়েছে। এখানে এখনপর্যন্ত ১৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে ঢাকার মাদরাসার গুলোতে বোর্ড স্ট্যান্ডের তালিকায় অগ্রগামী মিরপুর জামেউল উলুম ১৪ নম্বর মাদরাসায় দেখা গেছে অভিন্ন চিত্র। এখানে তুলনামূলক আসন সংখ্যা সীমিত। যে কারণে ছাত্রদের ভর্তির জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে।

এখানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়েছিলেন মুহাম্মদ মাহফুজুল হক। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানালেন, আমি দাওরা হাদীসে ভর্তি হতে এসেছিলাম। কিন্তু ভর্তি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় সম্ভব হয়নি। এখন অন্য কোথাও চেষ্টা করছি।

এদিকে রাজধানীর আরেক শীর্ষস্থানীয় মাদরাসা জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী। মুহাম্মদ রাকিব হাসান জানান, এখানে শরীয়তপুর থেকে ভর্তি হতে আসা আল-আমিন বলেন, সোমবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে ওইদিন আর জমা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি, পরদিন মঙ্গলবার ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করি।

তিনি জানালেন, যাত্রাবাড়ী মাদরাসা এ বছর বেফাকভুক্ত হওয়ায় দাওরা হাদিসে ভর্তি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল তুলনামুলকভাবে অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি। সোমবার ফরম বিতরণের দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম সংগ্রহ করেছিল।

রাজধানীর আরেক শীর্ষস্থানীয় মাদরাসা জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ। এখানে দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হওয়া আওয়ার ইসলামের নিয়মিত পাঠক আহমাদ হাবিব জানান,  ৪ জুলাই রাতের মধ্যেই ভর্তি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৫ জুলাই সকালে শুরু হয়েছে আসন বিন্যাস।

আহমদ হাবিব জানান, এবার দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হয়েছেন ১০০৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর দাওরার শিক্ষার্থী ছিলেন ১২ শ।

ভর্তি পরীক্ষায় ‍উৎসবের আমেজ থাকলেও ভোগান্তিও কম ছিল না। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি ফরম উঠানো, পরীক্ষার সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা আর পাশ ফেলের উৎকণ্ঠা সর্বক্ষণ ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করে। তবে এসবই উধাও হয়ে যায় ভর্তির পর। এমনটাই ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন মুন্সীগঞ্জের দেওভোগ মাদরাসায় ভর্তি হওয়া ইবনে সাবীল।

অনেকেই ঝক্কি পেরিয়ে ভর্তির কাজ শেষ করার পর ফেসবুকে পোস্ট করে দোয়া চেয়েছেন যেন হক্কানি আলেম হতে পারেন।

ঢাকার বাইরের মাদরাসাগুলোতেও একই নিয়মে ভর্তি চলছে। তবে জানা গেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ঢাকামুখি হওয়ায় গ্রামে তুলনামূলক ছাত্র কম। অবশ্য খ্যাতি পাওয়া মাদরাসাগুলোর হিসাব আলাদা।

দিন কয়েক পড়েই শুরু হবে ক্লাস। কোথাও কোথাও চলতে তার প্রস্তুতি। তারপর যথারীতি আবার ডুবে যাবে সব শিক্ষার্থী। শুরু হবে পড়ার উৎসব। ভর্তির এ উৎসব যেন পড়ার উৎসাহে কমতি না আনে। সেই কামনা করছেন উস্তাদগণ।

৫ টাকার এক ডিমের জন্য কর্নেলের স্ত্রীর বর্বর আচরণ; অন্ধ প্রায় শিশু সাবিনা

বেহেশতী জেওর কি মাওলানা আশরাফ আলী থানবী’র লেখা?

ছবি ক্যাপশন: জামিয়া রাহমানিয়ার মূল ভবনের নিচে ভর্ভিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ছবি তুলে প্রিন্ট কপির জন্য অপেক্ষা করছেন। 

ছবি তুলেছেন হাসান আল মাহমুদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ