শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


কওমি মাদরাসায় একই ভর্তি পদ্ধতি প্রবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে: যোবায়ের আহমদ চৌধুরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

৭ শাওয়াল থেকে সারা দেশের কওমি মাদরাসায় প্রায় একযোগেই শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তির কার্যক্রম। কওমি মাদরাসায় পুরাতন ছাত্রদের ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় এক হলেও নতুন ছাত্রদের ভর্তিতে রয়েছে যথেষ্ট ভিন্নতা। ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো কোনো মাদরাসা শুধু বোর্ডের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে। আবার কোথাও বোর্ডের ফলাফল গুরুত্বই পাচ্ছে না। কোথাও মৌখিক পরীক্ষা, কোথাও বা নেয়া হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা আবার কোথাও দুটোই।

আওয়ার ইসলামকে কওমি মাদরাসার ভর্তি পরীক্ষার এ ভিন্নতার কারণ জানিয়েছেন কওমি ধারার সর্ববৃহৎ শিক্ষা বোর্ড বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরীর। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : একই বোর্ডের অধীন হওয়ার পরও কওমি মাদরাসার ভর্তি প্রক্রিয়ায় এতো ভিন্নতা কেনো?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : পূর্ব থেকেই ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি হিসেবে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়। তবে কোনো কোনো মাদরাসায় ভিন্নতা দেখা যায়। ধীরে ধীরে মাদরাসার ভর্তি পরীক্ষা আরও উন্নত হচ্ছে। উন্নয়নের ধারা সব জায়গায় সমান গতিশীল না বলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা চোখে পড়ে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি মনে করছেন, চলমান ভর্তি প্রকিয়া চলতে পারে?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : আমি মনে করি, ভর্তি প্রক্রিয়া আরও উন্নত হওয়া উচিৎ। তবে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি চাপিয়ে দিতে চাইবো না। কেননা ছাত্র যাচাইয়ে পরীক্ষকের প্রত্যাশাই মূল। তিনি ইচ্ছে করলে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য শিক্ষার্থী বেছে নিতে পারেন। আবার তার ইচ্ছে না হলে তিন রকম পরীক্ষা নেয়ার পরও অযোগ্য ছেলে ভর্তি হয়ে যাবে।

আওয়ার ইসলাম : শোনা যায়, ফেল করার পরও অনেক শিক্ষার্থী একই মাদরাসায় বা অন্য মাদরাসায় পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : ফেল করার পরও পরবর্তী জামাতে (শ্রেণিতে) ভর্তি করিয়ে নেয়া কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। অত্যন্ত গর্হিত নিন্দনীয় কাজ। এর মাধ্যমে ছাত্রের জীবন নষ্ট করা হয়। আদরের নামে সর্বনাশ করা হয়।

আওয়ার ইসলাম : বেফাক বা অন্যান্য বোর্ডগুলো কী অভিন্ন ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে পারে না?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : কওমি বোর্ড গঠিত হয়েছে, পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও দীনি সম্পর্কের ভিত্তিতে। এ সম্পর্কের ভিত্তিতে আমরা বোর্ড পরিচালনা করি। সাধারণ বোর্ডগুলো এর ব্যতিক্রম। সেখানে সরকার বোর্ডের মাধ্যমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা পরিচালনা করে। তারা সরকারের পক্ষ থেকে বহু সুবিধা লাভ করে। বোর্ডে না থাকলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বোর্ড চাইলেই যে কোনো বাধ্যতামূলক করতে পারে। কিন্তু আমরা পারি না।

প্রতিটি কওমি মাদরাসা স্বশাসিত। আমরা তাদের বুঝিয়ে পরামর্শ দিয়ে এদের ধরে রেখেছি। এখন যদি আমরা তাদের উপর কোনো বিষয়ে কড়াকড়ি করি তাহলে তারা বলবে, আপনারা বেতন দিবেন? আমরা বোর্ডে থাকবো না। আমরা চলে গেলাম এমন একটি মানসিকতা আমাদের উলামায়ে কেরামের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিরাজমান। বিশেষত মফস্বলের মাদরাসাগুলো যারা পরিচালনা করে।

আওয়ার ইসলাম : নিশ্চয় এ মানসিকতা একটি সফল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধা। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : এ মানসিকতা দূর করে একটি সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে এবং সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ছাত্র ভর্তির ব্যাপারেও বেফাকের নীতিমালা রয়েছে। আমরা তা বেফাকের বিভিন্ন মিটিং ও সম্মেলনে উপস্থাপন করেছি। ধীরে ধীরে সবকিছুই শৃংখলায় আসছে। একটু সময় লাগবে।

বেফাকের গঠনতন্ত্রে মাদরাসা পরিচালনা বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেগুলোকে আবশ্যিক বললেও, মাদরাসাগুলো তা ঐচ্ছিক হিসেবেই গ্রহণ করে।

আওয়ার ইসলাম : ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে বেফাকের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

যোবায়ের আহমদ চৌধুরী : হ্যাঁ পরিকল্পনায় রয়েছে, ভবিষ্যতে বেফাকভুক্ত জামাতে উত্তীর্ণ না হলে পরবর্তী জামাতে ভর্তি করা হবে না- এমন নিয়ম আবশ্যিক করা। কওমি শিক্ষার মান উন্নয়নে বেফাকের এমন আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।

কওমি মাদরাসায় ভর্তির সময় টিসি জরুরি; দ্রুত আইন করা উচিত: আল্লামা আনোয়ার শাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ