শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান ঢাকাস্থ চাঁদপুর ফোরামের সেতুবন্ধন সভা অনুষ্ঠিত অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়: প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিস্ময়কর হাফেজ শিশুর সঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহ মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন ১৬ টি বছর জুলুম-ষড়যন্ত্রের মধ্যে ছিল মাদরাসার ছাত্ররা: ড. শামছুল আলম 

ধর্মে এত বিবাদ কেনো? আত্ম কলহের নয়া ক্রুসেড ০১

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহমদ সেলিম রেজা : মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার; সবাই বলে দস্যি ছেলে, বকিস নে আর খবরদার। ছোট কালে এই কবিতা মুখস্ত করতে হয়েছিল। পাঠ্যপুস্তকে ছিল। কিন্তু সেই কবিতার ফাপড় থেকে আমার প্রজন্মের অনেকেই এখনো বেরুতে পারিনি। আর বর্তমান প্রজন্মের এতো এতো প্রশ্ন শুনে মনে হয়, তাহলে এভাবেই কী মানুষ যুগে যুগে ফেরকাবন্দি হয়ে পড়েছিল?

অতীত কালে কী এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর খুজঁতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত মানুষ তওরাত, জবুর ও ইঞ্জিল শরীফ থেকে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে গিয়েছিল? তারই ধারাবাহিকতায়ই কী একসময় জাযক ও শাসকেরা ঈশ্বরের প্রতিনিধি হতে হতে একসময় নিজেরাই নিজেদের মতো করে সবাই স্রষ্টার প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিল?

তারপর মেতে উঠেছিল দুনিয়ার শাসন ও ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য নিজ নিজ সিদ্ধান্ত মানুষ ও সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার লড়াইয়ে? সেই স্বার্থের লড়াইয়ে উম্মত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরেই কী একে একে সমাজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল জ্ঞানী ব্যক্তিরা? তারই পরিণতিতে কী সমাজে ধীরে ধীরে চেপে বসেছিল নানা গোত্রীয় বিশ্বাস ও আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিরোধিতা বা ধর্ম বিরোধী আচার-আচরণ?

পৃথিবীর সমাজ ও রাজনীতির ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? সভ্যতার উত্থান পতনের ইতিহাস জুড়ে চলছে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। যার শুরুটা হয়েছে চিন্তা ও জ্ঞানের বিতর্ক দিয়ে তারপর ধীরে ধীরে এক সময় তা বিবাদে রূপ নেয়। তারপর চাবুক বা তরবারির ডগায় তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি চলমান এই লড়াইয়ে আপাত ইতি টেনে ছিল ইসলাম। চৌদ্দশ বছর আগে।

কীভাবে? স্রষ্টাকেই একমাত্র শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করে ইসলাম। কেউ শ্রেষ্ঠ নয় আল্লাহ ছাড়া- এই সার্বভৌম শ্রেষ্ঠত্বে ঘোষণা দিয়ে। আর ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হয় এক জীবন বিধান। আল-কোরআন। যেখানে বলা হয়, নবীর জীবন হলো কোরআনের বর্ণিত উপদেশের বাস্তব প্রতিচ্ছিবি। এজন্য কোরআনের পর হাদিস গ্রন্থ পায় দ্বিতীয় সবোর্চ্চ মর্যাদার আসন। আর কোরআন ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিধান ঘোষিত হয়। এভাবেই দুনিয়ায় ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ইতি টানা হয়।

কিতাবি এই বয়ানে ঈমান এনে এখন আছি ফাঁপড়ে। দুনিয়া জোড়া সব জায়গায় ইহুদি, খৃস্টান, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, পার্সিক, আস্তিক-নাস্তিক কাউকে ফারাক করতে পারছি না। সবাই লড়ছে-শ্রেষ্ঠতের লড়াই। এই লড়াইয়ে সবারই পুঁজি নিজেদের মেধা ও মনন। এই মেধা ও মননকে খাটাচ্ছে সবাই যার যার মতো। ধর্মের বিধান কেউ মানছে না। আল্লাহর বিধান মানা তো দূরের কথা কোরআন ও সুন্নাহকে এখন পণ্য করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মত্ত সবাই।

কোনো ধর্মে সমকামিতার অনুমোদন নেই; পশু সমাজেও নেই: গাজী আতাউর রহমান

কে শ্রেষ্ঠ তুমি না আমি? মু’মিন না আলেম? শিয়া না সুন্নী? কওমি-দেওবন্দিরা না আলিয়া নেছাবিরা? মুফতি না মাওলানা? খতিব না ইমাম? উস্তাদ না শাগরেদ? কবি না সাংবাদিক? গল্পকার না ঔপন্যাসিক? ধনী না গরিব? রাজনীতিবিদ না ব্যবসায়ী? বাড়িওয়ালা না ভারাটিয়া? মুসলমান না কাফের?

এখন ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র সবার বড়াই ও বিতর্কের বিষয় অস্ত্রের শক্তি, ক্ষমতার শক্তি, টাকার শক্তি ও জনবলের শক্তি নিয়ে। আল্লাহর শক্তির উপর ভরসা করার লোক এখন গরিব ও অসহায় মানুষ ছাড়া খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মানুষ ছুটছে নানা প্রশ্ন ও মিমাংসার সন্ধানে। কে বড়? সৌদি আরব না আমেরিকা? চীন না রাশিয়া? ভারত না বাংলাদেশ? ইরান না পাকিস্তান? ইসরাইল না ফিলিস্তিন?

ধর্মের দর্শনে সত্য কোনটা? মানুষের প্রতি শান্তি-ভালোবাসার আহবান না আইএসের মতো উগ্র কর্মকাণ্ডের  নয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন? ইরাকের মসুলের প্রাণ কেন্দ্রে মসজিদে আন নূরী সুন্নী মসজিদটি টিকে ছিল গত সাড়ে ৮শ বছর ধরে। এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১১৭২ সালে। ক্রুসেড-এর সময় সিরিয়া, আলোপ্পো, মসুলের শাসক ছিলেন নূর উদ্দীন আল মাহমুদ। ক্রুসেডাররা তাকে ডাকতো নূরুদ্দীন জঙ্গী বলে। তারই সেনাপতি ছিলেন জেরুজালেম বিজয়ী বীর সালাহ উদ্দীন গাজী। তিনি ১১৮৭ সালে জেরুজালেম বিজয়ের পর মসজিদের মিনারে চাঁদতারা সিম্বল প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। নূর উদ্দীন আল মাহমুদ এর ইন্তেকালের পর তিনি আইয়ুবী উপাধী গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন। সেই মসজিদের ১৮৪ ফিট উঁচু আল হাবাদা মিনারটি তার আমলে নির্মিত। এই মসজিদটি ছিল একদিকে সুন্নী মুসলমানদের গৌরবের স্মারক অপরদিকে শিয়া সুন্নীসহ মুসলিমদের ঐক্যের কেন্দ্র। এই ভুখণ্ডে ইতিহাসের নানা বাঁকে নানা যুদ্ধ বিগ্রহেও মসজিদটি ছিল অক্ষত। মঙ্গলদের আক্রমন, অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান, সাদ্দামের যুগে ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসন-সব থেকেই ক্রুসেডের স্মৃতিবিজরীত এই মসজিদ ও মিনারটি রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু ধ্বংস করে দিল তারা। কেন?

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ