রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ।। ২১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫


হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবিরোধী ১৩ টি অভিযান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর সারাদেশে ১৩ টি অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। এসব অভিযানে এ পর্যন্ত ৭০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। অভিযানে গিয়ে জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ-র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের আট সদস্য। আহত হয়েছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৯ জন সদস্য।

অপারেশন থান্ডার বোল্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল অভিযান। জঙ্গিবিরোধী সর্বশেষ অভিযান ছিল চলতি বছরের ১১ জুন রাজশাহীর তানোরে ‘অপারেশন রি-বার্থ’। এক নজরে দেখে নিন অপারেশনগুলো।

গুলশানের ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’

গত বছরের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি।

পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ছয় জন নিহত হয়। আইএস এর পক্ষ থেকে এদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের 'সৈনিক' বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

কিশোরগঞ্জের ‘শোলাকিয়া হামলা’

গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়। হামলার দিনই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি। পরে পাঁচ আগস্ট র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নামে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়।

কল্যাণপুরের ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’

২০১৬ সালের ২৬ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে ‘অপারেশ স্টোর্ম ২৬’ নামে একটি অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওইদিন মিরপুর থানা পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বিভিন্ন মেসে তল্লাশি চালাচ্ছিল। এলাকার পাঁচ নম্বর রোডের ‘জাহাজ বাড়ি’ নামক একটি বাড়িতে ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান চলে। এতে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা যায়নি।

নারায়ণগঞ্জে ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’

ওই বছরের ২৭ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালান হয়। ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এক জঙ্গির তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যসরা এ অভিযান চালায়। শহরের পাইকপাড়ার ‘বড় কবরস্থানের পাশের একটি তৃতীয় তলা অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার অভিযানে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তার সহযোগী আরও দুই জঙ্গি নিহত হয়।

রূপনগর জঙ্গি অভিযান

২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে রূপনগর আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর সড়কের ছয়তলা একটি ভবনে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সেখানে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন ফকির ও এসআই মো. মোমেনুর রহমান আহত হন। নিহত হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’  অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরয়ে মেজর জাহিদ। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেন। নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদুলের।

আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় হামলা

ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। অভিযানে নিহত হয় ‘নব্য জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য’ তানভীর কাদেরি ওরফে শমসেদ ওরফে আবদুল করিম। তার স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, তাদের ছেলে তাহরীন কাদির রাসেল, আফরিন ওরফে প্রিয়তী ও শায়লা আফরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদর মধ্যে খাদিজা ও শায়লাকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গাজীপুরে অপারেশন ‘স্পেইট-এইট’

সরকারের জঙ্গি দমনের আরেকটি সফল দিন ৮ অক্টোবর । এদিন পুলিশ ও র‌্যাব গাজীপুর, আশুলিয়া ও টাঙ্গাইলের চার আস্তানায় অভিযান চালায়। গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি, টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি এবং আশুলিয়ায় নিহত হয় জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা।

আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

২০১৬ সালের সর্বশেষ জঙ্গি বিরোধী অভিযান ছিল দক্ষিণখানের আশকোনায়। ২৪ ডিসেম্বর আরেকটি সফল জঙ্গি নির্মূল অভিযান সফল করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পুলিশি অভিযানে জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলসহ নিহত হয়েছেন দুজন। এর মধ্যে একজন নারী আত্মঘাতি গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন। আত্মসমর্পন করেছেন দুই নারী এবং তাদের দুই মেয়ে।

'অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬'

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকার দোতলা বাড়ি 'ছায়ানীড়ে' চলতি বছরের ১৫ মার্চ অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬ চালায় পুলিশ। এতে চার জঙ্গি নিহত হয়। তাদের মধ্যে দু'জন নব্য জেএমবির কামাল ও তার স্ত্রী। ওই অপারেশনে তাদের আট বছরের এক সন্তানও মারা যায়। এ ছাড়া নিহত হয় জঙ্গি শোয়েব।

সিলেটে 'অপারেশন টোয়াইলাইট'

চলতি বছরের ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে টানা ১১১ ঘণ্টা জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়। তবে অভিযানের মধ্যেই জঙ্গিদের টাইম বোমার বিস্ফোরণে পুলিশের দুই পরিদর্শক চৌধুরী মো. আবু কয়ছর ও মনিরুল ইসলাম নিহত হন। জঙ্গিদের বোমায় প্রাণ হারান আরও চারজ ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহিম, ছাত্রলীগ কর্মী অহিদুল ইসলাম অপু, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ও আলোকসজ্জাকারী খাদিম শাহ। জঙ্গিদের বোমায় আহত হন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ অর্ধশত ব্যক্তি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান র‌্যাবের চৌকস এ কর্মকর্তা।

'অপারেশন হিট ব্যাক'

চলতি বছরের ২৯ মার্চ ভোরে মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে সিটিটিসি পরিচালিত 'অপারেশন হিট ব্যাক' জঙ্গি লোকমান হাকিম ওরফে সোহেল রানা, তার স্ত্রী ও ৫ শিশু নিহত হয়। একই সময় মৌলভীবাজারের বড়হাটে 'অপারেশন ম্যাক্সিমাসে' নিহত হয় এক নারী জঙ্গিসহ মোট তিন জঙ্গি। তাদের মধ্যে ছিল নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা ও আশরাফুল আলম নাজিম।

'অপারেশন সান ডেভিল'

চলতি বছরের ১০ মে রাতে পুলিশ রাজশাহীর গোদাগাড়িতে 'অপারেশন সান ডেভিল' চালায়। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিন নিহত হন। আহত হন সাত পুলিশ সদস্য। অভিযানে জঙ্গি সাজ্জাদ ও তার পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়।

'অপারেশন ঈগল হান্ট’

এর আগে ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ত্রিমোহনী শিবনগর এলাকায় পরিচালিত 'অপারেশন ঈগল হান্ট’ এ জঙ্গি রফিকুল ইসলাম আবুসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।

এছাড়া দেশের বেশ কিছু এলাকায় আরও কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলে। এগুলোর মধ্যে কুমিল্লায় 'অপারেশন স্ট্রাইক আউট', ঝিনাইদহে 'অপারেশন শাটল স্পিল্গট' ও 'অপারেশন সাউথ প' অন্যতম। এ ছাড়া ঢাকার অদূরে সাভার ও গাজীপুরে একাধিক দফায় অভিযান চালানো হয়।

মুসলমানদের প্রথম কিবলায় অব্যাহত ইসরাইলি হঠকারিতা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া


সম্পর্কিত খবর