শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বৃদ্ধাশ্রমে যেভাবে ঈদ কাটে অবহেলিত বাবা-মা'র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাসিম মুমতাজী

স্বপ্নময় শৈশব ছিলো তাদের ৷ রঙিন কৈশোরও ছিলো ৷ ছিলো গর্বের যৌবন ৷ ছোটোবেলায় তারাও তৃপ্তিভরে উপভোগ করেছেন ঈদআনন্দ ৷ দুরন্ত কৈশোরে ঘুরে বেরিয়েছেন, আমোদ-প্রমোদে ঈদ উদযাপন করেছেন ৷

যৌবনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কতো আনন্দই না করেছেন! সন্তানের সব চাওয়া পুরণ করেছেন ৷ তাকে সঙ্গে নিয়ে কতো জায়গায় ঘুরেছেন ৷ সন্তানের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, তার পূর্ণ খেয়াল রেখেছেন ৷ ঈদউৎসবে সন্তানের প্রত্যেকটি বায়না মিটিয়েছেন ৷ তার সব আবদার রক্ষা করেছেন ৷ সন্তানের সুখের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন ৷ কী করেন নি এই সন্তানের জন্য? রাত-দুপুরে দৌড়াদৌড়ি, হাসপাতালে ছুটাছুটি, পরের বাড়ি কামলা খাটা, সাহেবদের ধমক উপেক্ষা করা— সবই করেছেন ৷ আর আজ?!

আজ সে সন্তানরা বৃদ্ধ বাবা মাকে বোঝা মনে করে রেখে আসছে বৃদ্ধাশ্রমে ৷ ফেলে আসছে দূর ঠিকানায় ৷ তাদের রাখে না খোঁজ খবর ৷ অসুস্থ হয়ে, সুবিধাবঞ্চিত হয়ে তারা সেখানে জীবনের শেষ দিনগুলো গুনছে ৷ কিন্তু সন্তানের সেবা তাদের কপালে জুটছে না ৷ দেশের প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমে একই পরিস্থিতি বিরাজমান ৷

সন্তান চাকরি করে মাস শেষে ব্যাঙ্কে টাকা জমায়, ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে দিন কাটায়, আর বৃদ্ধ পিতা মাতা অনাদর অবহেলায় বৃদ্ধাশ্রমের খোয়াড়ে দিন কাটায় ৷ প্রতিটি উৎসব-দিবসে নতুন কাপড়, বাহারি খাবারের প্রতিযোগিতা চলে, আর বৃদ্ধাশ্রমে তার পিতা মাতা নামকাওয়াস্তে খাবার খেয়ে না খেয়ে চোখের জলে বুক ভাসায়৷ দেশের প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমের একই দশা ৷

গাজীপুরের বৃদ্ধাশ্রম
গাজীপুর সদর উপজেলায় ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের বিশিয়া কুড়িবাড়ী (বি. কে. বাড়ি) এলাকায় ৭২ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বেসরকারি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র ৷ এর বাসিন্দা দু'শতাধিক ৷ আশাভঙ্গের যন্ত্রণা আর হারানো দিনের সুখস্মৃতি বয়ে বেড়ানো বাবা-মা তারা ৷ আপনসন্তানরা ভুলে যায় তাদের; কিন্তু তারা ভুলতে পারেন না কিছুতেই ৷ তাই নিয়মিত কাঁদেন তারা ৷ এমনকি ঈদের দিনেও তাদের চোখে থাকে অশ্রুবন্যা ৷

ঈদের দিনে তাদের খাবার-পোশাক
ঈদুল ফিতরে সকালে মুড়ি ও সেমাই দেয়া হয় তাদের ৷ সেগুলো খেয়েই ঈদের নামাজ পড়তে যান তারা ৷ বৃষ্টি থাকলে বয়স্করা আশ্রয়কেন্দ্রের মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করেন ৷ নামাজের পর ভুনা খিচুড়ি খেতে দেওয়া হয় তাদের ৷ ঈদ উপলক্ষে পুরুষদের ফতুয়া, লুঙ্গি এবং মহিলাদের শাড়ি দেওয়া হয় ৷ যারা ফতুয়া নিতে রাজি নন তাদের দেওয়া হয় পাঞ্জাবি ৷

এই ঈদের দিনেও তারা সাধারণ খাবার ও পোশাকে পার করে দেন, যেখানে তাদের সন্তানরা আয়েশ করে কোরমা পোলাও খায় ৷ যে সন্তানরা অভাবের দোহাই দিয়ে, লজ্জা শরম উপেক্ষা করে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে, পরিবারের বোঝা মনে করে যে সন্তানরা, তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়েই এই পিতা মাতারা নিজেদের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করেন না ৷ আহ! সন্তানের অবহেলা সত্বেও কারা সন্তানের মুখপানে চেয়ে থাকেন ৷ সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন ৷ এত নির্দয় আচরণের পরও তারা সন্তানদের ভুলতে পারেন না ৷ অশ্রুভেজা চোখে পথপানে তাকিয়ে থাকেন, এই বুঝি সন্তান এসে তাদের নিয়ে যাবে ৷ কিন্তু না! সন্ধেবেলা নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের ৷ এভাবে আর কতো! কবে বোধোদয় হবে এ সন্তানদের! কবে তারা মুক্তি পাবেন মানবেতর জীবন থেকে? আছে কোনো জবাব বা প্রত্যাশা!!

এরশাদ ও বি চৌধুরীকে ইসলামের জন্য কাজের অঙ্গীকার করালেন আল্লামা মাহমুদুল হাসান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ