এএসএম মাহমুদ হাসান
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম
ঈদকে সামনে রেখে এ দেশে কত কিছুরই না বিতর্ক ওঠে। কোনো বছর রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা, কোনো বছর লঞ্চ যাত্রার নিয়ন্ত্রহীন ব্যবস্থাপনা, কোনো বছর রোড এক্সিডেন্টের জন্য ড্রাইভার সমাচার। কিন্তু এবার ঈদকে সামনে রেখে বিতর্ক উঠেছে এপার বাংলার বাংলা সাহিত্যের পথ প্রদর্শক “বাংলা একাডেমির” একটি অবিবেচক কর্মকাণ্ডে।
বিতর্কের সূত্রপাত ‘ঈদ’ শব্দটি লিখতে গিয়ে। কারণ বাংলা একাডেমির ‘আধুনিক বাংলা অভিধানে’ ‘ঈদ’ শব্দটির ভুক্তি রয়েছে দু’টি। এর মধ্যে একটি লেখা হয়েছে ‘ঈ’ ব্যবহার করে, অন্যটি ‘ই’ ব্যবহার করে। এর মধ্যে ‘ঈদ’কে প্রচলিত ও অসংগত বানান এবং ‘ইদ’কে সংগততর ও অপ্রচলিত বানান বলছে বাংলা একাডেমি। আর দুই ধরনের বানান নিয়েই এখন মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
ভাষাবিদরা বলছেন, বাংলা একাডেমি তার মূল কাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে অহেতুক বিতরক ও শিরোনামে আসার জন্য এমনটা করেছে। বিগত দুই বছরে বাংলা একাডেমি চোখে পড়ার মত কোনো কাজ করতে পারেনি ।হয়ত দীর্ঘ বিরতীর পর খবরের শিরোনামে আসার জন্য এমনটা করেছে ।মানুষের মধ্যে ‘সংশয়’ তৈরির প্রয়োজন নেই। সংস্কার করলেও উচ্চারণগত বিষয় মাথায় রেখেই সে সংস্কার করা উচিত ছিল।
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ইদ’ শব্দটির ভুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইদ/ইদ্/[আ.]বি. ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব; (ইদুল ফিতর বা ইদুল আজহা); খুশি, উৎসব; ঈদ-এর সংগততর ও অপ্রচিলত বানান। ইদ মোবারক /ইদ্ মোবারক্/বি. ইদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে উচ্চারিত অভিবাদন।’
অন্যদিকে, অভিধানের ‘ঈদ’ ভুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘/ইদ/[আ.]বি. ইদ-এর প্রচলিত ও অসংগত বানান।’
আবার বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘ইদ’ শব্দের ভুক্তিতে নির্দেশ করা হয়েছে ‘ঈদ’ শব্দকে। প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত ‘ঈদ’ শব্দের পাশাপাশি অভিধানে ‘ইদ’ শব্দের অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলেম, লেখক ও গবেষক মুফতি ইউসুফ সুলতান আওয়ার ইসলামকে বলেন, বাংলা একাডেমি একটা বালখিল্য আচরণ করেছে। ঈদ একটি ঐতিহ্যগত শব্দ। বিনা কারণে ঠুনকো অযুহাতে বিদেশী শব্দের দোহায় দিয়ে ঈদকে ইদে পরিণত করা বাংলা একাডেমির চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
বিশিষ্ট আলেম ও সাংবাদিক মুফতি এনায়েতুল্লাহ আওয়ার ইসলামকে বলেন, দীর্ঘদিন বাংলা একাডেমির কোনো কাজ নেই। তারা কাজও করে না। হঠাৎ বাংলা একাডেমির পরিচালক শিরোনামে আসতে এমন অসংলগ্ন কাজটি করেছেন। বাংলা একাডেমির দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত কেউ মানবে না।
যারা বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন, তাদের জামায়াতে ইসলামী ও উগ্রবাদী আখ্যা দিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক ড.শামছুজ্জামান খান। এ ব্যপারে মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, ইতোমধ্যে শাহবাগী অনেক বড় বড় লেখক ও বাংলা সাহিত্যের দিকপালরা বাংলা একাডেমির এ ইদ সংস্কারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। তাহলে তারাও কি জামাত ও উগ্রবাদী? তাছাড়া বিভিন্ন বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া বাংলা একাডেমির বানান ফলো করে না । তাহলে মিডিয়াগুলোও কি উগ্রপন্থী ও জামাতে ইসলামী? জামাতে ইসলামী এত কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে না। শুধু শুধু জামাতের দোহায় দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটা হচ্ছে এবং জামাতকে ফেভারে আনা হচ্ছে। সুতরাং আমাদের কথা স্পষ্ট, ঈদকে ইদে রুপান্তর করে একাডেমি কর্তৃপক্ষ ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। বাংলা একাডেমির এ চক্রান্ত হালে পানি পাবে না।
উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকা সে দেশের সিনে তারকা সালমান খানের বানান সলমন খান লেখে। কিন্তু এ বানান অনুযায়ী সে দেশের কেউ কি সলমন লেখে বা সলমন বলে ডাকে? ভারতীয় হিন্দু পন্ডিতরা তাদের লেখায় মুচলমান (চ-দিয়ে) লিখত, কিন্তু সেটার কি প্রচলন ঘটেছে? সে দেশের সবাই মুসলমান বানানই তো লিখছে। সুতরাং ঐতিহ্যগত বানান ও উচ্চারণের কাছে বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই হালে পানি পাবে না। এ অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত থেকে তাদের ফিরে আসা উচিত।
গবেষক, আলেম ও ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মামুনুর রশীদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, আরবী শব্দ থেকে চয়ন করা ঈদ শব্দটি আরবী ভাষার সাথে যথেষ্ট মিল রযছে কিন্তু দীর্ঘ-ই বাদ দেওয়ার পর ইদ শব্দটি এখন কোন ভাষার সঙ্গতি বহন করল! আরবী ভাষা ঠিক থাকল কিন্তু বানান পরিবর্তন হয়ে গেল, তাহলে কি শব্দটি আসলেই বাংলা শব্দে রূপান্তর হয়ে গেল? বাংলা ভাষা বহুজাতিক ভাষা। এখানে ভাষা প্রশ্নে সংমিশ্রনের সুযোগ থাকলে বানান কেন নির্ধারিত ভাষায় প্রকাশের সুযোগ থাকবে না ! আর কেনই বা বাংলা ভাষায় দীর্ঘ- ই (ঈ) বর্ণের ব্যবহার ছিল? সুতরাং আমাদের বুঝতে হবে, হাজার হাজার দৃশ্যমান ভুল বানান ও কঠিন যুক্তবর্ণের বানান ঠিক না করে ঈদের পেছনে পড়ার বাংলা একাডেমির হয় ভুল সিদ্ধান্ত নতুবা কোনো চংক্রান্ত ।
কেমন আছেন নুরানী পদ্ধতির আলো হাতে ঘুরে বেড়ানো কারী বেলায়েত হুসাইন?