গত ২০ জুন মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে দেশের সর্ববৃৎ ‘কওমি শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড’ বেফাকের ৪০তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ফলাফল। প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী ঈর্ষণীয় সংখ্যক বোর্ডস্ট্যান্ড করে মেধা তালিকার শীর্ষে রয়েছে দেশের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার কিতাব বিভাগের ৬টি মারহালায় মোট বোর্ড স্ট্যান্ডের সংখ্যা ৯৩টি। ফযীলত বা মেশকাতে ২য় স্থান ও ৩য় স্থানসহ ৭ জন, সানাবিয়া উলয়া বা শরহে বেকায়ায় ৫জন, মুতাওয়াসসিতা বা নাহবেমিরে ১ম ও ৩য় স্থানসহ ৪৩ জন, ইবতিদায়্যাহ বা তাইসিরে ৩৮জন শিক্ষার্থী বোর্ড স্ট্যান্ড করেছে।
জামিয়ার ওয়েব সাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ আল্লামা আজিজুল হক রহ. ১৯৮৬ সালে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত এ দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ভালো ফলাফলেও রয়েছে ঈর্ষণীয় ধারাবাহিকতা। জামিয়ার ভালো ফলাফল ও তার রহস্য, ভালো করার মূলতন্ত্র জানার চেষ্টা করেছিলেন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু। কথা বলেছিলেন আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সুযোগ্য পুত্র ও জামিয়ার বর্তমান প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হকের সঙ্গে। তাদের আলাপচারিতায় উঠে এসেছে জামিয়ার ভালো লেখাপড়া ও ফলাফলের অনেক অজানা রহস্য।
আওয়ার ইসলাম : জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া এবার বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। আপনার অনুভূতি কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : রেজাল্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। ফলাফল হাতে পেয়েই আমি খুবই খুশি হয়েছি। সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছি। এ প্রতিষ্ঠান মুরব্বিদের আমানত। তারা যেভাবে সুনামের সাথে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে গেছেন, আমরা ছোট হয়েও সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারছি; এটা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। সাথে সাথে মাদরাসার নাজেমে তালিমাতসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের চেষ্টা ও মেহনত এবং ছাত্রদের ভালো প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি। আমি সবাইকে মোবারকবাদ জানাই।
আওয়ার ইসলাম : প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জামিয়া রাহমানিয়া ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। এর রহস্য কী?
মাওলানা মাহফুজুল হক : জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর ব্যবস্থাপকগণ লেখাপড়ার ও ছাত্রদের তারবিয়্যাত; এ দুই বিষয়ে কোনো আপোষ করেন নি। আমরা চেষ্টা করছি সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। জামিয়া রাহমানিয়া আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাজনৈতিক অঙ্গণে কিছু ভূমিকা রাখছে এবং ইসলামের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখছে। কিন্তু সর্বোচ্চা গুরুত্ব সব সময় লেখাপড়াতেই দিয়ে আসছে। ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা এভাবেই রক্ষা পেয়েছে।
আমরা ছাত্র নেয়ার সময়ও যাচাই-বাছাই করে নিই। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ ও ছাড় দেয়া হয় না।
মাদরাসার শিক্ষকগণ সার্বক্ষণিক নেগরানি করেন। নেগরানির মাধ্যমে ক্লাস টাইমের বাইরের সময়টা কাজে লাগানোর একটা চেষ্টা শুরু থেকেই অব্যাহত আছে।
আওয়ার ইসলাম : পড়ানোর ক্ষেত্রে কোন কোন দিক গুরুত্ব দেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : পাঠদানের ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই ক্লাসে পূর্ববর্তী দিনের সবক আদায় করার উপর। শহরে বেকায়া পযন্ত ক্লাসে পূর্ববর্তী দিনের পাঠ বুঝে নেয়া অনেকটা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ খুবই আন্তরিক্।
বছরে আমরা তিন থেকে চারবার শিক্ষকদের পাঠদান প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজ নিই। তিনি কিভাবে পড়াচ্ছেন? সবক নিচ্ছেন কিনা? ইত্যাদি বিষয়গুলো পযালোচনা করা হয়। শিক্ষকদের কোনো দুর্বলতা ধরা পড়লে আমরা কাটিয়ে ওঠতে বুদ্ধি, পরামর্শ, অনুরোধ এমনকি কখনো কখনো কঠোরতাও অবলম্বন করি।
আমাদের একটি ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের এখানে অধিকাংশ শিক্ষক আমাদের ছাত্র। ফলে তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, পাঠদান পদ্ধতির সাথে পূর্ব থেকেই পরিচিত।
আওয়ার ইসলাম : আপনার আলোচনায় ভালো ফলাফল করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য কি হওয়া উচিৎ তা উঠে এসেছে। কিন্তু যেসব ছাত্র ভালো ফলাফল করতে চায় তাদের ব্যাপার আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
মাওলানা মাহফুজুল হক : বর্তমানে বেফাকে সে স্টাইলে প্রশ্ন হচ্ছে তাতে শুধু পরীক্ষা কেন্দ্রিক লেখাপড়া করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। বেফাকে এখন যে পরিমাণ প্রতিযোগিতা তাতে ভালো ফলাফলের জন্য সারা বছর নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া করতে হবে। হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে এবং উপস্থাপনা শৈলী ভালো হতে হবে।
তাহলে তিনটি বিষয় দাঁড়ালো, সারা বছর নিয়মতান্ত্রিক লেখাপড়া করা, হাতের লেখা সুন্দর করা ও সুন্দর উপস্থাপনার যোগ্যতা অর্জন করা।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, বানান ও উদ্ধৃতি যেনো শুদ্ধ হয়। ভুল বানান ও ভুল উদ্ধৃতি ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা।
আওয়ার ইসলাম : আগামীতে যারা জামিয়া রাহমানিয়া ভর্তি হতে চায়, তাদের আপনি কি পরামর্শ দিবেন?
মাওলানা মাহফুজুল হক : রহমানিয়া ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত ভর্তি পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তীর্ণ হওয়া। নতুন ছাত্রদের ভর্তি শুরু হবে ৮ শাওয়াল। প্রতি জামাতে দুটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়। ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী বিষয় দুটি জেনে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে পারে।
এ বছর থেকে আমরা একটি নতুন নিয়ম করেছি। যারা গত বছর বেফাকে পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাদের যদি মোমতাজ নম্বর থাকে, তাহলে তাদের গড় নম্বরকে একটি বিষয় ধরা হবে এবং তার পছন্দ মতো একটি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।