শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

‘বাবার চিঠি পাঠানো দেখে ছাত্ররা বলতো এমন সন্তানপাগল লোক আর দেখিনি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাতির আধ্যাত্মিক রাহবার উলামায়ে কেরামকে আমরা শুধু একজন দাঈ হিসেবেই চিনি। তাদের বিস্তৃত জীবনের বাইরের অংশটুকুই আমরা জানি। কিন্তু একজন বাবা হিসেবেও তারা যে ছিলেন অতুলনীয় এবং পরিবার গঠনেও যে তারা আমাদের আদর্শ হতে পারেন তা হয়তো কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ভাবনার আড়ালে থাকা সেসব শ্রেষ্ঠ বাবাদের পাঠকের সামনে তুলে ধরছে ourislam24.com।

ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের তৃতীয় পর্বে থাকছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ও আধ্যাত্মিক আলেম ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আতহার আলী রহ.। প্রিয় বাবাকে নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে স্মৃতিগল্প বলেছেন তার বড় ছেলে মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ। সেটি তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু

আব্বা খুব ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একসঙ্গে এতো কাজ করতেন যে এ যুগের অনেকেই কল্পনা করতে পারবে না। তিনি একাধারে খানকা, মাদরাসা, মসজিদ, রাজনীতিসহ সামাজিক বিভিন্ন দায়িত্বে ব্যস্ত থাকতেন। তাই দিনের বেলা খুব বেশি সময় দিতে পারতেন না।

রাতের বেলা আমরা এক সাথে খেতাম। খাওয়ার সময় তিনি ঘর সংসার ও সন্তানদের খোঁজ খবর নিতেন। তবে ভাইদের ভেতর আমি আব্বাকে অন্যদের তুলনায় বেশি কাছে পেয়েছি। বড় সন্তান হিসেবে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন। এ হিসেবে আমি ভাগ্যবান।

আব্বা মেজাজি মানুষ ছিলেন। কোনো অনিয়ম ও বিশৃংখলা পছন্দ করতেন না। তাই বলে তিনি মুখ কালো করে রাখতেন বা রাগ করতেন এমনও না। তার ব্যক্তিত্ববোধ এমন প্রখর ছিলো যে কেউ তার সামনে কথা বলার সাহস পেতো না। তার চোখের দৃষ্টি আমাদের কাছে বেতেরও চেয়েও ভারি মনে হতো। সবমিলিয়ে তিনি ঘরে বাইরে তিনি ছিলেন একজন ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। একজন পরিপূর্ণ মানুষও বটে। এজন্যই হজরত আশরাফ আলি থানবি রহ. তাকে খেলাফত দেন।

আব্বার ভেতর সন্তানের জন্য পাগলপারা ভাবটা ছিলো না। কিন্তু তার ভেতর কোমল একটা হৃদয় ছিলো। সন্তানদের জন্য তার মায়া বোঝা যেতো যখন আমরা কেউ দূরে যেতাম। যেমন আমি করাচি পড়ালেখা করেছি। ওখানে থাকাকালীন তিনি আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিতেন। তার অনেক বন্ধুজন আমার শিক্ষক ছিলেন তাদের মাধ্যমে খবর নিতেন। তারা রসিকতা করে বলতেন, তোমার বাবার মতো সন্তানপাগল লোক আমরা দেখি নি।

আব্বা মূলত দেশ ও জাতির জন্য চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। তবে ছেলে-সন্তানদের ব্যাপারে বেখবরও ছিলেন না। আব্বা আমাদের জন্য খুব বেশি সময় দিতে পারতেন না। তাই মাদরাসার সেরা সেরা শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতেন তাদের নেগরানি করার। যেমন আমি কুরআন শরিফ তেলাওয়াত শিখেছি হজরত মাওলানা নেছার আলী রহ. কাছে। তিনি আব্বার খলিফা ছিলেন। আমি আম্মাকে নিয়ে সিলেটে তার বাড়িতে দেড় দুই মাস অবস্থান করি এবং সবক নিই।

আব্বা যেমন আমাদের আদর করতেন তেমন আমাদের কড়া শাসনেও রাখতেন। তবে আব্বা যখন শাসন করতেন সাথে সাথে মন গলে মোমের মতো হয়ে যেতো। তিনি তার জন্য কিছু করতে অস্থির হয়ে উঠতেন। আমাদের যখন শাসন করতেন একটু পরেই আবার ডেকে আদর করতেন। মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিতেন। বাসায় ভালো খাবারের আয়োজন করতেন।

একবার আমি মাদরাসার সামনের দোকানে যেয়ে দুষ্টুমি করি। খবর পেয়ে আব্বা খুব পেটালেন। একটু পর আম্মাকে বললেন, ওর যা খেতে পছন্দ করে রান্না করে খাওয়াও। আসলে আব্বাকে দেখে যতোটা কঠোর মনে হতো তার ভেতরটা ঠিক ততোটাই নরম ছিলো।

আমাদের সময় ঈদে এতো জমকালো আয়োজন ছিলো না। বিশেষত আব্বা আমাদের শিখিয়েছিলেন ঈদ একটি পবিত্র উৎসব। সাধ্যানুযায়ী ভালো খাবার ও কাপড়ের ব্যবস্থা তিনি করতেন। আমরা ছোটরা আনন্দ করতাম। তিনি তাতে অংশ নিতেন না। আবার নিষেধও করতেন না। ঈদের উৎসব আব্বার দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারতো না।

আব্বা চাইতেন আমরা যেনো তার মতো হই। তিনি আমাদের কোনো দুর্বলতা দেখলে মনোঃক্ষুণ্ন হতেন। কখনো কখনো শাসাতেন, এটা পারো না কেনো? এটা শেখো না কেনো? আব্বার প্রত্যাশ্যা আমরা পূরণ করতে পেরেছি সে দাবি করবো না। তবে আমাদের সব ভাই দীনি খেদমতের সাথেই জড়িত। শুধু একটা ভাই ব্যবসা করেন।

পিতৃত্বের দুটি দিক। একটি হলো, সন্তানের জীবন ও জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতন। অন্যদিক হলো, সন্তানের আমল আখলাখ ও পরকালীন জীবনের শিক্ষা দেয়া। আমার এবং আমাদের সময়ের অধিকাংশ আলেম পিতা সন্তানদের আমল, আখলাক ও পরকাল নিয়ে চিন্তা করতেন। কিন্তু এ যুগের আলেমরাও সন্তানের জাগতিক উন্নতির কথাই বেশি ভাবে। এ ক্ষেত্রে আব্বার ভেতর চমৎকার ভারসাম্য ছিলো তিনি আমাদের যেমন নিঃস্ব রেখে যান নি, তেমনি আমাদের দীনি শিক্ষা ও আমল আখলাকে সমৃদ্ধ করে গেছেন।

আব্বার কাছ থেকে সবচেয়ে বড় যে সম্পদ আমরা পেয়েছি তা হলো দোয়া। আব্বা আমাদের জন্য প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রচুর দোয়া করতেন। এখনও মনে হয় বাবার দোয়ার বরকতেই জীবনের সব সংকট উৎরে যাই আমরা।

আগের পর্ব

বাবার মৃত্যুর পর কোনো বিরোধ লাগলে তা নিষ্পত্তির জন্য পারিবারিক কমিটি করে গেছেন

বাবা হিসেবে শায়খ ছিলেন অতুলনীয়

পর্বটি চলবে ইনশাআল্লাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ