শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি ‘মহাবিপর্যয়কর’: জেলা প্রশাসক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি টানা বর্ষণে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা। জেলা শহরের সাথে পাশ্ববর্তী  জেলা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সড়কপথে যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে এক থেকে দেড় মাস সময় লেগে যাবে।

তবে প্রশাসন বলছে, আগামী তিনদিনের মধ্যেই রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রাম সড়কে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু করা যেতে পারে ।

এদিকে পাহাড়ধসের ঘটনায় শনিবারও দুজনের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে পাঁচ জেলায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৮ জনে। শুধু রাঙ্গামাটিতেই উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১১০ জনের মরদেহ।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসন এমন ভয়াবহ দূর্যোগকে 'মহাবিপর্যয়কর' পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছে।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, আমরা এক মহাবিপর্যয়ক অবস্থা  পার করছি। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটির রাস্তা আমাদের লাইফ লাইন, আমাদের সকল খাদ্যদ্রব্য বা অন্য কোন কিছু পরিবহনের জন্য আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকি।

এছাড়া খাগড়াছড়ির সঙ্গে সংযোগ রাস্তা এবং কাপ্তাই হয়ে বান্দরবান হয়ে চট্টগ্রাম যাবার যে রাস্তা ছিল সেটাও বিপর্যস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানজারুল মান্নান।

তিনি জানান, সড়ক যোগাযোগ পুন:স্থাপন করার জন্য জোরেশোরে কাজ করছে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন। তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগে।

এখন আপাতত সব কাজই নৌপথে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।

তবে খাদ্য সংকটের ব্যাপার তিনি বলছেন, খাদ্য সংকটের মতো পরিস্থিতি এখনো সেখানে তৈরি হয়নি, যথেষ্ট খাদ্য মজুত রয়েছে।

তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির বাজারে বিভিন্ন গোডাউন আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি কোনো সংকট হতে পারে কিনা। আগামী পনের দিনও যদি চাল,ডাল, তেলের সাপ্লাই না আসে তাহলেও কোনো সংকট হবে না ।

[caption id="" align="aligncenter" width="528"] পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত ঘর[/caption]

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসকের মতে, এ মুহুর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ঘরবাড়ি হারানো মানুষের পুনর্বাসন। । তিনি আশঙ্কা করছেন, আগের জায়গায় ঘর তুলে দিলে একই ভাগ্য হতে পারে।

আবারো ভারী বর্ষণে বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে, আর এমন ভূমিধসের পরে সবাই সচেতন হলেও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে।

"স্মরণকালে যা ঘটেছে, একশো বছরে বা তারও আগে রাঙ্গামাটির পাহাড়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটে নাই। আমরা আগের তুলনায় সচেতন হয়েছি। কিন্তু ভারী বৃষ্টিপাত হলে আশঙ্কাতো আছেই, এমনকি একন বৃষ্টি দেখলে আমিও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি"।

[caption id="" align="alignnone" width="660"]উদ্ধারকাজ চলছে মাটি খুঁড়ে লাশ তুলে আনছেন উদ্ধারকর্মীরা[/caption]

তিনি বলেন, এতগুলো লাশ দেখার পরে কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারে না। এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই মানুষগুলোর পুনর্বাসন করা। আমরা যদি আগের জায়গাতেই তাদের পুনর্বাসন করি তাহলে ‌এমন নির্মম পরিস্থিতিতে আবারো পড়তে হবে।

রাঙ্গামাটিতে যথেষ্ট পরিমাণ 'প্লেইন ল্যান্ড' বা সমতল ভূমি না থাকায় পুনর্বাসনটা চ্যালেঞ্জের কাজ বলেই মনে করছেন তিনি।

"প্লেইন ল্যান্ড থাকলে আমরা সহজেই তাদের পুনর্বাসন করতে পারতাম। যদি সমতলে তাদের ঘর তুলে দেয়া যেতো তাহলে সরকারি সহায়তায় ঘরবাড়ি তুলে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা ভালোভাবে নিশ্চিত করা যেত"।

এখন পুনর্বাসনের কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য সঠিক যাচাইবাছাই প্রয়োজন এবং সেটি চলছে বলে জানান মানজারুল মান্নান।

জেলা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত রাঙ্গামাটির ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার চারশো জন অবস্থান করছে।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ