শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


দিল্লিতে গুড়িয়ে দেয়া হলো মসজিদ, আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে মুসলমান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : ভারতের রাজধানী দিল্লির অম্বে বিহার নামের এলাকায় একটি সদ্য নির্মিত মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ার পরে সেখানকার মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আনুমানিক চারশো থেকে পাঁচশো লোক বাইরের এলঅকা থেকে এসে ওই মসজিদটি গত বুধবার ভেঙ্গে দেয়।

মসজিদটি ভাঙ্গার ঘটনাটি দেখেছেন মুশতার আহমেদ, যিনি ওই মসজিদের দুটো বাড়ি পরেই থাকেন। তিনি জানান যে রমজান মাসের শুরু থেকে ওখানে নামাজ পড়া শুরু হলেও সেদিন কিছু লোক এসে মসজিদটা ভেঙ্গে দিয়ে যায়।

তৈরী পোশাক শিল্পে ছোটখাটো কাজ করেন মুশতাক। অনেক কিছু বলতে চাইছিলেন তিনি - তবে হুমকি আসছে নিয়মিত, তাই গোটা পরিবার নিয়ে ভয়ে রয়েছেন মি. আহমেদ।

কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস করতে প্রধানমন্ত্রীকে আল্লামা শফীর চিঠি; যা আছে চিঠিতে

মসজিদ ভাঙ্গার সময় পবিত্র কুরআনেরও অপমান করা হয় বলে জানান মুশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মসজিদটা ভেঙ্গে দেওয়ার থেকেও তাঁর বেশী খারাপ লাগছে কোরআনের অসম্মান করাটা।’

তবে মুশতাক আহমেদের স্ত্রী আমিনা বলছিলেন যে বিষয়টা থিতু হয়ে এলে এর ফল নাকি ভুগতে হবে সবাইকে, এমন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে বেশ কিছু মুসলমান পরিবার অম্বে কলোনি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

শাহরুখ (প্রতীকী নাম) নামে এক ব্যক্তিকে তাঁর চুল কাটার সেলুন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাড়ির মালিক নাকি শাহরুখকে বলেছেন দোকান ছেড়ে চলে যেতে। এখন শাহরুখ নিজের ঘরেই সেলুনটা আবারও চালু করার কথা ভাবছেন।

পূর্ব দিল্লিতে যমুনার পাড় বরাবর বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষেরই বসবাস। সকাল হলে সবাই কাজে বেরিয়ে যান। গত বুধবারও সবাই কাজে চলে যাওয়ার পরেই ঘটনার শুরু।

মসজিদ যারা ভাঙতে এসেছিল, তাদেরকে দেখেছিলেন বিমলেশ মৌর্য। তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচশো লোক জড়ো হয়েছিল। ওই লোকগুলো কোথা থেকে এসেছিল বলতে পারবো না। তবে ওরাই মসজিদটা ভেঙেছে।’

তবে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে কোরআনের শপথ নিয়েছে এবং  ভেঙ্গে দেওয়া মসজিদের ওপরেই একটা চাটাই বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন।

মুশতাক আহমেদ আর কলোনির অন্য মুসলমান বাসিন্দারা বলছিলেন যে মসজিদটা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল কয়েক মাস আগেই, তবে নামাজ পড়া শুরু হয় রমজান মাস থেকে। একটা ছোট মাদরাসাও চালানো হয় ওখানে, যাতে বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যায়।

মি. আহমেদ জানিয়েছেন মসজিদের জমির জন্য এলাকারই বাসিন্দা আকবর আলী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়েছিল, আর বলা হয়েছিল যে তাঁর প্রাপ্য টাকা-পয়সা ধীরে ধীরে মিটিয়ে দেওয়া হবে।

কৃষ্ণপাল শর্মা কিছুদিন আগেই বাগপত থেকে ছেলের কাছে থাকতে এসেছিলেন।

বিমলেশ মৌর্য অবশ্য স্পষ্টই বললেন যে এলাকার লোকজন চাইছিলো না যে ওখানে একটা মসজিদ হোক।আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে এমন মেসেজও ছড়ানো হচ্ছে যে অম্বে কলোনীর ওই জায়গায় ৮-১০ ঘর মুসলমান থাকে, তাই সেখানে কেন একটা মসজিদ বানানো হবে।

সেসব মেসেজের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে যে 'ইসলামিকরণের প্রক্রিয়া' যেন সবাই মিলে বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়।

উত্তরপূর্ব দিল্লির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র আর্য বলছেন, ‘পাহারা দেওয়া ছাড়াও বিকেলের দিকে ইফতারের সময়টায় প্রত্যেক রাস্তা আর গলিতে টহল দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী।’

পুলিশ জমির মালিক আকবর আলীর অভিযোগ অনুযায়ী আট জনের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করেছে। দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, মসজিদের পাশেও বসেছে পুলিশী পাহারা।

সূত্র : বিবিসি

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ