বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

চিকুনগুনিয়ায় ওষুধ ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুনীরউদ্দিন আহমদ

চিকুনগুনিয়ায় ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক হোন

চিকুনগুনিয়া বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম। চিকুনগুনিয়া রোগের নায়ক দুজন—এক. মশা, নাম এডিস এজিপ্টি (Aedes aegypti); দুই. ভাইরাস।

বহু দিন ধরে মানুষ জেনে এসেছে, মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়। কয়েক বছর আগে শুনলাম, মশার কামড়ে ডেঙ্গুও হয়। এখন নতুন করে শুনছি, মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া হয়; যদিও রোগটি তেমন নতুন নয়। তবে সমস্যা হলো, সাধারণ সর্দিজ্বর হলেও মানুষ ইদানীং একে চিকুনগুনিয়া বলে অভিহিত করছে। অন্যদিকে ডেঙ্গুকেও চিকুনগুনিয়া বলে মনে হতে পারে অনেকের কাছে। কারণ দুটি রোগের কারণই মশা এবং রোগগুলোর উপসর্গও মোটামুটি একই রকম।

সরকারের রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআরের খবরে প্রকাশ, চিকুনগুনিয়ার জন্য ঢাকার ২৩টি এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে চিকুনগুনিয়া বিস্তার প্রতিরোধ সংক্রান্ত সভায় এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর। এলাকাগুলো হলো ধানমণ্ডি ৩২, ধানমণ্ডি ৯/এ, উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর, মধ্য বাড্ডা, গুলশান-১, লালমাটিয়া, পল্লবী, মগবাজার, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, রামপুরা, তেজগাঁও, বনানী, নয়াটোলা, কুড়িল, পীরেরবাগ, রায়েরবাজার, শ্যামলী, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, মিরপুর মনিপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মিরপুর ও কড়াইল বস্তি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর এই ২৩টি এলাকায় চিকুনগুনিয়ার বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার প্রতিরোধে এডিস মশা এবং এর লার্ভা নিধনের, ‘ক্র্যাশ প্রগ্রাম’ অব্যাহত রাখতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার আশপাশের এলাকাসহ সারা দেশে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার ঘটতে পারে। ঢাকা শহরের বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর খবর আসছে। তাই আমাদের সজাগ থাকা প্রয়োজন এবং আশপাশের এলাকাসহ ঢাকা শহরের সব এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমি একটি কথা অতি গুরুত্ব দিয়ে বলি ও লিখি। আর তা হলো, রোগের প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সব দিক থেকে উত্তম। বছর কয়েক আগে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ায় কিছু লোকের মৃত্যুর ফলে আমরা নড়েচড়ে বসেছিলাম এবং মশা মারার জন্য ভীষণ তৎপর হয়ে উঠেছিলাম।

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যাওয়ার কারণে মশা নিধনের কর্মসূচির গতি আবার মন্থর হলো। এখন আবার চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সরকার ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মশা নিধনে ভীষণ তৎপরতা দেখাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মশা মারার জন্য আমরা সবাই ওষুধ ছিটানোর কথা বলছি, কিন্তু মশা প্রতিরোধের জন্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের কথা আমরা কজন বলছি? এই ঢাকা শহরটাকে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর ও আবর্জনাময় করার পেছনে আমাদের সবার কম-বেশি অবদান রয়েছে। আমি বলি না, হাজার চেষ্টা করেও মশামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে। তবে আমি মনে করি, আমরা সচেষ্ট হলে, যুক্তিসংগত আচরণ করলে, সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে, একটু সভ্য হতে চেষ্টা করলে, বিবেকবুদ্ধি খাটালে, অতিমাত্রায় স্বার্থপরতা না দেখালে, অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি মমত্ববোধ থাকলে, পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসচেতন হলে পরিস্থিতি অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকত, আমরা অনেক ভালো থাকতাম এবং অনেক সাধারণ রোগ-বিমারি থেকে রক্ষা পেতে পারতাম।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত রোগ। মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়ায়। এডিস প্রজাতির এডিস এজিপি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশা থেকেই চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি টোগা ভাইরাস গোত্রের। ভাইরাসটি মশা দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার কারণে একে আরবোভাইরাসও বলা হয়ে থাকে। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম এই রোগ ছড়ানোর কথা জানা যায়। সেখানকার কিমাকোন্ডিস ভাষা থেকে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় চিকুনগুনিয়া শব্দের অর্থ হলো মোচড় দেওয়া। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয় ও মোচড়ায়।

মনে রাখা দরকার, ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণও প্রায় একই রকম। এ কারণে চিকুনগুনিয়াকে ডেঙ্গু বলে অনেকেই ভুল করতে পারে। তাই রোগের প্রকৃত ধরন জানার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সংক্রামক মশা কামড়ানোর চার থেকে সাত দিনের মধ্যে দেহে চিকুনগুনিয়ার বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। চিকুনগুনিয়ার উল্লেখযোগ্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে, হঠাৎ করে ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট তীব্র জ্বর। এই জ্বরে অনেকের ক্ষেত্রে কাঁপুনি থাকে, কারো ক্ষেত্রে থাকে না। অন্যান্য জ্বরের মতো চিকুনগুনিয়া জ্বর ঘাম দিয়ে ছাড়ে না। এই জ্বর সর্বোচ্চ সাত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যেতে পারে। সাধারণত হাঁটু, গোড়ালি, পিঠ, হাত, ঘাড়ে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। শরীরের অস্থিগ্রন্থির তীব্র ব্যথা মাঝেমধ্যে অসহনীয় মনে হতে পারে। মাংসপেশি ও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, প্রচণ্ড ক্লান্তি বা দুর্বলতা রোগীকে খুব কাহিল করে ফেলে। চিকুনগুনিয়া রোগে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দেয় জ্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় দিনের মধ্যেই। সাধারণত মুখ, ঘাড় ও পিঠে ফুসকুড়ি দেখা যায় বেশি। তবে পায়ে বা শরীরের অন্য অংশেও এই ফুসকুড়ি হতে পারে। ডেঙ্গুতে র‌্যাশ দেখা দেয় ষষ্ঠ দিনে। ফুসকুড়ির সঙ্গে চুলকানি থাকাও অস্বাভাবিক নয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখ, হৃপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও অন্ত্রের সমস্যার কথাও শোনা যায়। সচরাচর চিকুনগুনিয়া জটিল আকার ধারণ করার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি না করেই চিকুনগুনিয়া রোগ পুরোপুরি সেরে যায়। জ্বর সেরে গেলেও ব্যথা থাকতে পারে বেশ কিছুদিন। চিকুনগুনিয়ার কারণে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বিরল। সাধারণত দুই থেকে তিন দিনেই রোগী সুস্থ হতে শুরু করে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস থাকে। এ সময়ের রোগীকে মশা কামড়ালে সেটিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ও ভাইরাসটি ছড়ায়। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাসবাহী মেয়ে মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়। সাধারণত দুই জাতের এডিস মশা চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গু জীবাণু বহনের জন্যও এডিস মশাকে দায়ী করা হয়।

চিকুনগুনিয়া রোগ নিশ্চিত নির্ণয়ের অন্যতম উপায় হলো কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা। অনেকেই অন্য কোনো রোগকে চিকুনগুনিয়া ভেবে বসে। রক্ত পরীক্ষা, আরএনএ ভাইরাস পরীক্ষা, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। রক্তের সিরামে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম অ্যান্টিচিকুনগুনিয়া অ্যান্টিবডির উপস্থিতির মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয় করা হয়।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত রোগ বলে এই রোগে বিশেষ কোনো ওষুধ কার্যকর নয়। মনে রাখা একান্ত দরকার যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। তাই চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ শুধু অযৌক্তিকই নয়, শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকরও বটে। চিকুনগুনিয়া প্রতিকারে কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই, টিকাও নেই। তবে উপসর্গ দেখে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রফেন, ডাইক্লোফেনাক, কিটোরোলাক, ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। এসব ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই এমন কাপড়চোপড় পরা দরকার, যাতে শরীরে মশা বসতে না পারে এবং কামড়াতে না পারে। দিনের বেলায় যাদের ঘুমানোর অভ্যাস, তাদের অবশ্যই ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা উচিত। শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

চিকুনগুনিয়া ছাড়াও মশা আরো অনেক রোগের কারণ। ম্যালেরিয়া তার মধ্যে অন্যতম। তাই এসব রোগ প্রতিরোধে অনেক রোগের বাহক মশার উৎপত্তি ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক শ্রেয়। তাই আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত সব রোগের প্রতিরোধের ব্যবস্থা খোঁজা, প্রতিকার বা চিকিৎসা নয়। মশা কোথায় জন্মায়, কিভাবে এর বংশবিস্তার ঘটে—এসব আমরা অনেকেই জানি। তার পরও প্রসঙ্গক্রমে বলা প্রয়োজন, বদ্ধ জলাশয়, পানিসমৃদ্ধ ড্রাম, ফুলের টব, ঘরের আশপাশে পড়ে থাকা মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, বালতি, পরিত্যক্ত শিশিবোতল বা কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা বা পুকুরের বদ্ধ জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে। তাই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে যেসব স্থানে মশা জন্মায় ও বংশবিস্তার করে সেসব স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে। জলাবদ্ধ জায়গা শুকিয়ে ফেলতে হবে। পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যকেও বিরত রাখতে হবে। তাই পদক্ষেপগুলো বর্ষা শুরুর আগে ও পরে করলে উত্তম। চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়লে ঘরে মশানাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। মশানাশক ওষুধ ব্যবহারের সময় শিশুদের দূরে রাখুন।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গেলে নিম্নবর্ণিত পরামর্শগুলো গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

এক. ঘন ঘন প্রচুর পানি ও তরল খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করুন, যদিও এ সময় কিছুই খাওয়ার প্রবৃত্তি হবে না। মনে রাখবেন, সব রকম ভাইরাস সংক্রমণে শরীরের নিজস্ব মেটাবলিক সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটে। ভাইরাসের বংশবিস্তারের জন্য শরীরে পুষ্টিঘাটতি অবশ্যম্ভাবী। তাই রোগাক্রান্ত অবস্থায় সব রকম পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

দুই. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। অবশ্য চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে জ্বর ও তীব্র ব্যথা-বেদনার জন্য চলাফেরা বা কাজকর্ম করা সহজসাধ্য নয়।

তিন. গিটের ব্যথার স্থানে ঠাণ্ডা সেক দিতে পারেন। ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে জয়েন্ট ও হাড়ের ব্যথার স্থানে ধরে রাখলে আরাম পাবেন। তবে এসব স্থানে গরম সেক দেবেন না।

চার. জ্বর ও ব্যথার জন্য শুধু প্যারাসিটামল গ্রহণ করতে পারেন। প্যারাসিটামলের মাত্রা সর্বোচ্চ ১ গ্রাম ছয় ঘণ্টা পর পর বা চার বেলা। তবে দিনে চার গ্রামের বেশি প্যারাসিটামল গ্রহণ ঠিক নয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল প্রদানে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়। প্যারাসিটামল সিরাপ বা সাসপেনশন কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। নামকরা কম্পানির প্যারাসিটামল সিরাপ বা সাসপেনশন কিনুন, যাতে আপনার শিশু নকল বা ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ বা সাসপেনশন খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আগেই বলেছি, অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রফেন, ডাইক্লোফেনাক, কিটোরোলাক, ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিক, কর্টিকোস্টেরয়েড, অ্যাসপিরিনের মতো নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগের অযৌক্তিক ও যথেচ্ছ ব্যবহার থ্রোম্বসাইটোপেনিয়া (রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া, যা রক্তক্ষরণ বন্ধে সাহায্য করে) গ্যাস্ট্রাইটিস (পাকস্থলির দেয়ালে প্রদাহ, জ্বালা-যন্ত্রণা ও ক্ষত সৃষ্টি হওয়া), অন্ত্রের রক্তক্ষরণ ও কিডনি বিকলের মতো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যা পরবর্তী সময়ে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। তাই চিকুনগুনিয়া চিকিৎসায় এসব ওষুধ ব্যবহারে যথেষ্ট সাবধান হওয়া দরকার।

পাঁচ, চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় চুলকানির ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলা, ছোট শিশু, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী, বয়স্ক মানুষ, ডায়াবেটিক, ডেঙ্গু, টিবি, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, এইডস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানির রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন। রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে। ওপরে বর্ণিত বেশি ঝুঁকিতে থাকা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও শিশু-বয়স্কদের বেলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করা আবশ্যক। উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, শরীরের কোনো স্থানে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়া, চিকিৎসা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময়েও তীব্র ব্যথা ও জ্বরের কোনো উন্নতি না হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই রোগে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই, সাবধানতা অবলম্বনের দরকার আছে। অনেক ভাইরাস জ্বরের মতো এটিও এক ধরনের ভাইরাস জ্বর। তবে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের চেয়ে চিকুনগুনিয়ার জ্বর ও ব্যথার তীব্রতা বেশি। শুধু মশার মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়, মায়ের দুধের মাধ্যমে ছড়ায় না। তাই শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা বা কোনো সম্পর্ক স্থাপন করলেও সমস্যা নেই।

লেখক : অধ্যাপক, ফার্মাসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
drmuniruddin@gmail.com
সুত্র: কালের কন্ঠ।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ