আওয়ার ইসলাম: রাশিয়ায় ইসলামের আগমনের ইতিহাস হাতড়ালে আমরা দেখতে পাই সামরিক বিজয়ের পথে সেখানে ইসলাম যায়নি। সেখানে ইসলাম প্রচারের সূচনাটা হয় ব্যবসা ও মুসলমানের সঙ্গে রাশিয়ানদের মেলামেশার পথ ধরে। বর্তমান রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অনেক এলাকা মুসলিম বাহিনীর অভিযানে ইসলাম বিজয়ী হলেও তার প্রভাব রাশিয়ার মূল ভূখন্ডে পড়েনি। কারণ, আবহমানকাল থেকেই মধ্য এশিয়ার জাতিগুলো স্বাধীনভাবে বসবাস করে আসছে।
তবে হ্যাঁ, রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত অল্প সংখ্যক মুসলিম দেশ যেমন চেচনিয়া এবং সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণকারী মুসলিম দেশ যেমন তাজিকিস্তান রুশদের মাঝে ইসলাম প্রচারে অল্প-বিস্তর ভূমিকা পালন করেছে।
কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষ তা সহজে মেনে নিতে পারেনি। রাশিয়াতে ১৯৩১ সালে মসজিদ ছিল ২৬ হাজার ২৭৯টি, সে রাশিয়াতেই সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র Soviet Warnews-এর ভাষ্য অনুযায়ী, মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত মসজিদ ছিল মাত্র ১ হাজার ৩১২টি। ১৯৬৪ সালে ফরাসি ভাষায় তাশখন্দ সম্পর্কিত একটি বুলেটিন প্রকাশিত হয়।
এতে বলা হয়, কাজাখস্তানসহ গোটা মধ্য-এশিয়ায় মসজিদের সংখ্যা মাত্র ২৫০টি। বলশেভিক বিপ্লবের পদতলে ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন (৬ কোটি বা ৬ কোটি ৫০ লাখ) মুসলমান প্রাণ হারায়। এই মুসলমানরা পৃথিবীর যে ভূখ-জুড়ে ছড়িয়ে ছিল, তার আয়তন প্রায় ১৫ মিলিয়ন বর্গমাইল (আফ্রিকা মহাদেশের আয়তনের চেয়েও বেশি)।
শুধু তাই নয়, ইসলামবৈরিতা ও মুসলিমবিদ্বেষের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করে আলেম-ওলামা নিধনেও। ১৯১৭ সালে (বোখারা ও খিভা ব্যতীত) আলেম-ওলামা ৪৫ হাজার ৩৩৯ জনের কম ছিলেন না। কিন্তু ১৯৫৫ সালে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫২ জনে। কারণ ৩০’র দশকে অধিকাংশ আলেম-ওলামাকে হত্যা করা হয়েছিল। ধর্ম পরিপালনে এখন কিছুটা ছাড় থাকলেও তখন এ দ্বার ছিল একেবারেই রুদ্ধ। জাকাত প্রদান ছিল নিষিদ্ধ। হজ করাও ছিল অসম্ভব। ১৯৪৫ সালের পর হজের অনুমতি দেয়া হয়।
কিন্তু ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত, এমনকি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত হজ পালনকারী ব্যক্তির সংখ্যা ১০০’র বেশি ছিল না। আর রমজান মাসের রোজা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ না হলেও কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। রোজা রাখা ছিল অসম্ভব। অবশেষে কয়েকজন মুফতি মুসলমানদের এই ফতোয়া দিতে বাধ্য হন, তারা যেন তিন দিন রোজা রাখে, যাতে তিন দিন ৩০ দিনের স্থলাভিষিক্ত হয়। এই তিন দিন হলো রমজানের ১ম, ১৫তম এবং ৩০তম দিন। (আল মুসলিমুনা ফিল ইত্তিহাদিস সুফিয়াতি : ২৭৬)।
এসএস/