মো: সাইফুল্লাহ
রাসুল সা: রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাত্রিকালীন ইবাদতকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি কিয়ামুল লাইল করেছেন। কিয়ামুল লাইল করলে গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা রাসূল সা: দিয়েছেন।
রাসূল সা: বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রমজান মাসের রোজা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য নিয়ম করেছি এ মাসের কিয়ামুল লাইল বা রাত্রিকালীন ইবাদতকে। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ ঈমান সহকারে এবং গুনাহ মাফের আশায় এ মাসে রোজা রাখে ও কিয়ামুল লাইল করে, তাহলে সে এমন নিষ্পাপ হয়ে যায়, যেমন নিষ্পাপ তার মা তাকে প্রসব করেছে। তিনি আরো বলেন- যে ব্যক্তি রমজান মাসে পূর্ণ ঈমান সহকারে ও গোনাহ মাফের আশায় কিয়ামুল লাইল করবে, তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এ মাসে রাসূল সা: নিজেও কিয়ামুল লাইল করেছেন এবং আমাদেরও তা করতে বলেছেন।
রাত্রিকালীন ইবাদত তারাবি বা অন্য নামাজও হতে পারে। তারাবি নামাজে কুরআন খতম করার রেওয়াজ সারা দুনিয়ায় আছে। কুরআন নাজিলের মাসে প্রতি রমজানে তারাবির মাধ্যমে কুরআন অন্তত এক খতম হয়। রমজানে কুরআনের এক খতম অন্যান্য মাসের অন্তত ১০ খতমের সমান। তবে আমাদের দেশে তারাবিহ নামাজে যেভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তা কতটা শুদ্ধভাবে হয় তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।
তারাবি নামাজে আরো সুললিত কণ্ঠে আরো হৃদয়গ্রাহী করে আরো সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। আমাদের মনে রাখা উচিত, নামাজে যত বেশি সহিহ শুদ্ধ করে কুরআন তিলাওয়াত করা হবে, আমাদের নামাজ তত বেশি সহিহ শুদ্ধ হবে।
রাসূল সা: তার জীবনে রাত্রিকালীন নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ নামাজই বেশি পড়েছেন। রাসূল সা: তাঁর জীবনে মাত্র তিন রাত তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং জামাত সহকারে তিনি পড়েছেন। তিনি তিন রাতই রাতের শেষভাগে তারাবি আদায় করেছেন।
তারাবি নামাজ ফরজ বা অপরিহার্য হওয়ার ভয়ে রাসূল সা: তা পরিত্যাগ করেছেন। যেমন রাসূল সা: নিজেই বলেছেন- আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমরা একে ফরজ করে নিবে অথবা তোমাদের উপর ফরজ করা হবে।
রাসূল সা: পরিত্যাগ করলেও সাহাবিগণ ব্যক্তিগতভাবে তা অব্যাহত রেখেছেন। রাসূল সা:-এর সাথে সাহাবিগণ জামাতে আট রাকাত আদায় করতেন এবং বাকি ১২ রাকাত অনেকে ব্যক্তিগতভাবে পড়ে নিতেন। তারাবি নামাজ অপরিহার্য হওয়ার ভয়ে রাসূল সা: জামাত পরিত্যাগের পর তা পুনরায় চালু করেন হজরত ওমর রা:।
মাঝখানে কয়েক বছর সাহাবিগণ তা ব্যক্তিগতভাবে বা ছোট ছোট জামাত আকারে আদায় করেছেন। হজরত ওমর রা: ছোট ছোট জামাতের প্রথা বিলুপ্ত করে একসাথে তারাবি নামাজ পড়ার আদেশ দেন। হজরত ওমর রা: মনে করলেন, রাসূল সা: যেহেতু আট রাকাত জামাতের সাথে এবং বাকি ১২ রাকাত ব্যক্তিগতভাবে পড়েছেন, তাই (৮+১২)=২০ রাকাত নামাজই পড়া দরকার। তাই তিনি ২০ রাকাত নামাজ কেন্দ্রীয়ভাবে বা সবাই সম্মিলিতভাবে আদায় করার জন্য হজরত উবাই ইবনে কাবকে ইমাম নিযুক্ত করেন। তৎকালীন কোনো সাহাবায়ে কেরাম এর বিরোধীতা করেননি। বরং সব সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই তা হয়েছে।
হজরত ওসমান রা: এবং হজরত আলীর রা: শাসনামলেও এর অনুসরণ করা হয়। তিনজন খলিফার একমত হওয়া এবং সাহাবায়ে কেরামগণের ভিন্নমত পোষণ না করার কারণে বলা যায়, রাসূল সা:-এর সময় থেকে তা ২০ রাকাত পড়ার অভ্যাস ছিল।
ইমাম আবু হানিফা র:, ইমাম শাফেয়ি র: ও ইমাম আহমদ র: তারাবিহ ২০ রাকাত পড়তেন। তবে আহলে হাদিসের লোকজন আট রাকাতের পক্ষে। তারা আট রাকাতকেই প্রতিষ্ঠিত সুন্নত বলে মনে করেন। ইমাম মালেক র: ৩৬ রাকাতের পক্ষে। তিনি বলেন- শতাধিক কাল ধরে মদিনায় তিন রাকাত বিতর ও ৩৬ রাকাত তারাবিহ পড়ার প্রচলন ছিল।
সুতরাং তারাবি নামাজ যত রাকাতই পড়া হোক না কেন, তা কিয়ামুল লাইল হিসেবে গণ্য হবে। মসজিদে ইমাম সাহেব যত রাকাত তারাবিহ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেন ঠিক তত রাকাত নামাজ ইমাম সাহেবের সাথে আদায় করলে বা শেষ রাকাত পর্যন্ত আদায় করলে, রাসূল সা: বলেছেন- সারারাত কিয়ামুল লাইলের ছওয়াব তাকে দেয়া হবে।
লেখক : প্রভাষক। সুত্র: নয়াদিগন্ত।
এসএস/