বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশ: ফখরুল চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণের আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর ভোলায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও স্মরণসভা চরমোনাইর বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিল বুধবার, চলছে সর্বশেষ প্রস্তুতি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান আসিফ মাহমুদের অসহায় শীতার্তের পাশে মাওলানা গাজী ইয়াকুবের তাকওয়া ফাউন্ডেশন দেশের তিন জেলায় শিক্ষক নিচ্ছে ‘আলোকিত মক্তব’ বৃদ্ধার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবন্ধীদের ধর্মীয় ও কারিগরি শিক্ষা দিতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে: ধর্ম উপদেষ্টা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না: মাওলানা আরশাদ মাদানী

বাজেট নিয়ে দুই ইসলামি অর্থনীতিবিদের প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন এবং ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন।

বাজেট একটি দেশের আর্থিক প্রতিলিপি। বাজেটে প্রকাশ পায় দেশের আর্থিক রূপরেখা  এবং বাজেটের উপর নির্ভর করে চালিত হয় দেশের অর্থনীতি। তাই বাজেট নিয়ে থাকে সব মহলেরই থাকে নিজস্ব ভাবনা।  বাজেট নিয়ে ইসলামি অঙ্গণ ও আলেমদের ভাবনা জানতে কথা হয় সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস্ অব বাংলাদেশ -এর সম্মানিত সেক্রেটারি জেনারেল এ কিউ এম ছফিউল্লাহ আরিফ এবং দেশের অন্যতম আলেম ও গবেষক ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিকের সঙ্গে। বাজেট নিয়ে তাদের ভাবনা ও প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

অর্থনীতিবিদ এ কিউ এম ছফিউল্লাহ আরিফ চান জনবান্ধব ও কল্যাণকর বাজেট। তার ভাষায় ‘বাজেট হবে জনগণের কল্যাণের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। সরকার যে বাজেট করে তা বাস্তবায়নের জন্যই করে। যদিও অনেক সময়ে উন্নয়ন বাজেট সঙ্গত কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। আমাদের বিশ্বাস সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই বাজেট করে।’

জনগণের প্রত্যাশার ব্যাখ্যাও দিলেন খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদ, ‘আমরা যারা সাধারণ জনগণ। আমাদের জীবনের প্রত্যাশা থাকে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যের দাম আমাদের নাগালের মধ্যে থাকুক। আর চাই জননিরাপত্তা। আমরা যখন ঘর থেকে বের হবো এবং রাস্তাঘাটে চলবো তখন আমরা যেনো নিরাপদে চলতে পারি। ঘরে ফিরতে পারি। এটা শুধু সন্ত্রাসীর হুমকির সাথে সম্পৃক্ত নয়। এর সাথে অবকাঠামোরও সম্পর্ক আছে। যেমন, রাস্তাঘাট দুর্ঘটনা প্রবণ না হওয়া।’

‘সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কিন্তু খুব বেশি নয়; আমরা নিরাপদে খেতে চাই, নিরাপদে বাঁচতে চাই। আমার প্রত্যাশা থাকবে সরকার বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বাজেট করবে।’

সরকার কী এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সরকার এসব বিষয়ের প্রতি মনোযোগী। তারপরও তাদের অধিক মনোযোগ প্রত্যাশা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে আমার প্রত্যাশা থাকবে, মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য -যা ছাড়া মানুষের জীবন যাত্রা চলে না- তার মূল্য বাড়বে না। আর যেসব বিলাসদ্রব্য রয়েছে যা সবাই ব্যবহার করে না; ধনী ও সীমিত সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করে তার দাম বাড়লে শুধু এক শ্রেণির মানুষের সমস্যা হবে। কিন্তু যা আপামর জনসাধারণ ব্যবহার করে সেগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করবে।  আমার প্রত্যাশা থাকবে বাজেট থেকে যেনো দরিদ্র্য জনগণ উপকৃত হয়।

৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী

সাদা পোশাকের কেউ গ্রেফতার করতে চাইলে যা করণীয়

ঘাটতি বাজেট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বড় বাঁধা। ঘাটতি বাজেটের জন্য প্রতি বছরই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। তারপরও ঘাটতি বাজাটকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা বলেই মনে করেন এ কিউ এম ছফিউল্লাহ আরিফ। তিনি বলেন, ‘ঘাটতি বাজেট আধুনিক অর্থনীতির অংশ।’

তবে জাতীয় অর্থনীতির এ ক্ষত দূর করতে বিকল্প প্রস্তাবও তুলে ধরেন তিনি। বাজেট ঘাকতি পূরণে কয়েকটি কাজ করা যেতে পারে।

এক. জনকল্যাণের দিকে তাকিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করা।
দুই. করের আওতা বাড়ানো যেতে পারে। পরিমাণ না বাড়িয়ে।
তিন. দুর্নীতি কমানো। দুর্নীতি কমলে করের আওতা ও পরিমাণ দুটোই বাড়বে।

সবশেষে তিনি চান, একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র। যেখানে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য কল্যাণকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। যেনো তারা আমাদের মূলস্রোতে চলে আসতে পারে। কারণ, রাষ্ট্রের অবহেলিত জনগণকে উন্নয়নের বাইরে রেখে সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

গবেষক ও চিন্তাবিদ আলেম ড. শামসুল হক সিদ্দিক মতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও আর্থিক বাস্তবতার প্রতি লক্ষ্য রেখেই বাজেট করা উচিৎ। তিনি বলেন, ‘একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বাজেট হওয়া উচিৎ উন্নয়নমুখী ও সামগ্রিক। মৌলিক অবকাঠামো ও টেকসই অর্থনীতির ‍উপর গুরুত্বারোপ এবং শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া।’

তবে তিনি আর্থিক উন্নতিকে চূড়ান্ত কিছু মনে করেন না। তিনি মনে করেন, ‘আর্থিক উন্নতির পাশাপাশি আত্মিক উন্নতির উপরও গুরুত্ব দেয়া দরকার। আমাদের দেশের বাজেটে আত্মিক উন্নতির কোনো বাজেট থাকে না। মনে করা হয়, শিক্ষার মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সম্পন্ন হয়। কিন্তু আসলে আত্মিক উন্নতি শিক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় না। এজন্য ভিন্ন প্রয়াস প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আত্মিক উন্নতি হলে দেশের অন্যান্য উন্নতি তরান্বিত হবে। সামাজিক ব্যাধি যেমন মিথ্যা, ঘুষ ও দুর্নীতি কমে যাবে। এতে সামগ্রিক উন্নতি বেগবান হবে।’

এরপরই এ গবেষক আলেম দৃষ্টি দিতে চান শিক্ষায়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘এরপরই আমি শিক্ষাখাতের উপর দৃষ্টি দিতে চাই। আধুনিক বিশ্বের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও বিজ্ঞানে আমাদের দেশের বাজেট খুবই অপ্রতুল।’

শিক্ষাখাতের বাজেট হ্রাস হওয়ায়  তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘শিক্ষা খাতে বাজেট কমানো খুবই দুঃখজনক। শিক্ষায় উন্নতি না হলে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা এখন বিদেশ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্ট হায়ার করে আনি। আমাদের এ পরনির্ভরতা কমাতে হবে। মালয়েশিয়া আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে কারণ তারা তাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করেছিলো।’

বাজেটে মানুষের ধর্মীয় জীবনের উপরও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মত দেন ড. শামসুল হক সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘ভারসাম্যমূলক সভ্যতা নির্মাণে ধর্মের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ধর্মকে সজীব রাখার জন্য, মানুষকে ধর্মের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে, ধর্মীয় কার্যক্রমকে বৃদ্ধির জন্য বাজেটে আরও বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে অর্থায়ন করা নয়; বরং ধর্মের এমন অনেক শিক্ষা রয়েছে যা সর্বজনীন কল্যাণের ধারক। এ শিক্ষাগুলো প্রসারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সরকার।’

সমাজ, শিক্ষা, ধর্ম, জীবন ও বাস্তবতা সবকিছু মিলিয়ে একটি কল্যাণকর বাজেট হোক বাংলাদেশের জন্য এ প্রত্যাশায় রইলো।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ