শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জাতীয়করণ হচ্ছে ছয় হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) জাতীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এজন্য মন্ত্রণালয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। কমিটি এরই মধ্যে বৈঠক করে সারাদেশে মাদ্রাসা ও শিক্ষকদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের কাছে তথ্য চেয়েছে। এরপর সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলেই রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান আজকালের খবরবে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে আসছেন। তাদের সমস্যার সমাধানে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের দাবি দাওয়া কীভাবে নিরসন করা যায় তার একটি রূপরেখা করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পর থেকেই এসব মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি ওঠে। তাদের দাবির পক্ষে যুক্তিও আছে। তবে এসব সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবো, সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা তা কার্যকার করবো।

গত ২৪ মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ডিপিই পরিচালক (প্রশাসন), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়,  মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ১৯৮৪-৮৫ সালে ১৮ হাজার ১৯৮টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রেজিস্ট্রেশন পায়। ১৯৯৪ সালে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে এসব মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকদের মাসিক ৫০০ টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়।

১৯৯৪ সালের একই পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। পরে ধাপে ধাপে বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৫১৯টি মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্মানী ৫০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়। তবে বেশিরভাগ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পর থেকেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই মহাপরিচালক ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, মানবিক দিক থেকে শিক্ষকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার যৌক্তিক দাবি রাখে। এছাড়া বর্তমান শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে এসব শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজনীয়তার কথা সভায় বলেছি। তিনি আরও বলেন, তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আগে মাদ্রাসার অবকাঠামো, ছাত্রছাত্রী, জমির অবস্থান ও শিক্ষকদের অবস্থান জেনে নিতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিদ্যালয়-১) পুলক রঞ্জন সাহা জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। দেশে বর্তমানে এ ধরনের কতটি মাদ্রাসা চালু আছে এবং শিক্ষক সংখ্যা কত তা জানা প্রয়োজন। ঢালাওভাবে জাতীয়করণ করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় ভুয়া শিক্ষক এখানেও ঢুকে যেতে পারে। এজন্য সারাদেশে কতজন শিক্ষক আছে তাদের তালিকা করতে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যাচাই বাচাই করে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অনুবিভাগ সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য মাদ্রাসা বোর্ড সরবরাহ করবে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, আমাদের কাছে ৩৫৪৩টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসার তালিকা আছে, যার মধ্যে ১৫১৪টির ইনডেক্স নম্বর আছে। তালিকাভুক্ত মাদ্রাসাগুলো যাচাই-বাছাই করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা ওইসব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠাবেন। এরপর একটি চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হবে। কোনো ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান যাতে তালিকাভুক্ত হতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যা ছয় হাজার ৯৯৮টি। শিক্ষক আছেন ৩৪ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ছয় হাজার শিক্ষক মাসিক এক হাজার টাকা বেতন পান। এই অবস্থায় ক্লাস রুমে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে তাদের দাবি দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তিনি। প্রসঙ্গত, এসব মাদ্রাসা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করলেও বেতন ভাতা প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এনিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ