শাহনূর শাহীন: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দাবিকে সম্মান জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রিক দেবির মূর্তি সরানোয় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম রাজনীতিবিদগণ।
আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে শীর্ষ ইসলামী রাজনীতিবিদগণের সাথে কথা বললে তারা জানান, অসাম্প্রদায়িকতার মানে এই নয় কোনো নির্দিষ্ট জাতির ধর্মাচার অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে বিশেষ ধর্মের কোনো প্রতিক রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে স্থাপন করা অবশ্যই অসাম্প্রদায়িকতার পরিপন্থি ছিল। সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রিক দেবির প্রতিকৃতি স্থাপন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর রমজানের আগেই গ্রিক মূর্তি সরানোয় সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তারা।
গ্রিক মূর্তি অপসারণ করায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রমজানের আগেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক মূর্তি সরানোর মাধ্যমে অশুভ শক্তির পরাজয় হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২১ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ করেছিল। সমাবেশ থেকে রমজানের আগেই মূর্তি সরানোর দাবি জানানো হয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জনমত ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের দাবি মেনে মূর্তি অপসারণ করায় মুসলমানদের বিজয় হয়েছে।
তিনি ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতকে উপেক্ষা করে ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ এর মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে পৌত্তলিকতার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল ওলামায়ে কেরাম এবং সাধারণ মুসলমানদের প্রতিবাদের মুখে তার পরাজয় হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূর্তি সরানোর আশ্বাস দিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন হওয়ায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পাশাপাশি আমরা এটাও বলে দিতে চাই ন্যায় বিচারের প্রতিক হিসেবে স্থাপন করা এই মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও বসানো হলেও আমরা তা মেনে নিব না। আমরা এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে থেমিস দেবীর মূর্তি (ভাস্কর্য) বসিয়ে দেওয়া মানে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া এবং দেবীর মূর্তি স্থাপন সংবিধান বিরোধী, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বোধ-বিশ্বাসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ, নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন এলাকায় এককভাবে থেমিস দেবীর মূর্তি স্থাপন করা মানে অনধিকার চর্চা, মূর্তিকে সার্বজনীনতা দেওয়ার অপচেষ্টা, যা নৈতিকতা ও আইনবিরোধী , মূর্তি স্থাপন গণতন্ত্রের প্রতি চরম কুঠারাঘাত,দেবীর স্থাপন সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক, এই মূর্তি দেশ, জাতি ও গণমানুষের চেতনার পরিপন্থী।’
সরকারে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, এটা অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতের প্রতিফলন। এজন্য আমরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং এটা যাতে অন্যত্র সরিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অন্য কোথাও স্থাপন করা না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার আহবান করছি। কেননা সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অপসারণ করে অন্যত্র স্থাপন করা হলে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তা মেনে নিবে না।
মসজিদের নগরী ঢাকাকে এদেশর মুসলমানরা কোনো মতেই মূর্তির নগরীতে পরিণত হতে দিব না।
জমিয়তুল উলামা বাংলাদেশের সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি সরানোর মাধ্যম্যে সরকার অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিতে পেরেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে জাতীয় ইদগাহ সংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টের সামনে কোনো দেবি মূর্তি স্থাপন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিপন্থি ছিল।
কর্তৃপক্ষ সেটা সরিয়ে অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছে এজন্য জমিয়তুল উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে বিশেষ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এসএস/