ফাহিম বদরুল হাসান
ফ্রান্স থেকে
“বিজ্ঞানের এই যুগে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে চাঁদ দেখার খবর মুহূর্তেই পাওয়া যায়। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন স্হানে ভিন্ন ভিন্ন দিনে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং এক চাঁদ, এক রামাযান, এক ঈদ, এক উম্মাহ- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোযা এবং ঈদ পালন করার উচিত। সারা বিশ্বের মুসলমানদের মক্কার সময় অনুসরণ করা উচিত” -এরকম কথা অনেকেই বলে থাকেন।
কথাগুলো খুবই লজিক্যাল এবং বিজ্ঞানসম্মত মনে হলেও আরেকটু ডিপলি খুঁজলে দেখা যায়, একই দিনে সমগ্র বিশ্বে রোযা কিংবা ঈদ করতে চাইলেও অসম্ভব। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
পৃথিবীতে স্ট্যান্ডার্ড টাইম জোন রয়েছে প্রায় চব্বিশটি। এই জোনের ভিন্নতা সময়কে ভিন্ন করেছে। কোথাও যখন রাত বারো, অন্যত্র তখন দুপুর বারোটা। যেমন- আমেরিকায় (জিএমটি-৬) চাঁদ উঠেছে কিনা তা জানতে কোরিয়ার (জিএমটি+৯) মুসলমানদের অপেক্ষা করতে হবে অন্তত ১৫ ঘণ্টা। অর্থাৎ আমেরিকায় সন্ধ্যা ৬টায় উদিত হওয়া চাঁদের সংবাদ কোরিয়ার মুসলমানরা পাবে স্থানীয় সময় পরদিন দুপুর ১১টায়। এমতাবস্থায় তারা একই দিনে আরাফার রোযা ও ঈদ উদযাপনের কোনটা করবে? কীভাবে করবে? আরও পূর্বের দেশ নিউজিল্যান্ডের সাথে আমেরিকার সর্ব পশ্চিমে তথা আলাস্কার সময়ের পার্থক্য প্রায় ২৪ ঘণ্টা। তাহলে আমেরিকার চাঁদ ওঠার খবর নিউজিল্যান্ডবাসী পাবে পরদিন রাতে। তাহলে তাদের উপায় কী হবে? এমনকি বাংলাদেশেও আমেরিকার চাঁদ ওঠার সংবাদ জানতে অপেক্ষা করতে হবে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত।
সেই একই ঘটনা। তারা আরাফার রোযা ঘুরেফিরে সৌদির নয় তারিখে পালন করতে পারবে না। রামাযান হলে তারাবিহও পাবে না। সৌদি আরবের চাঁদ দেখার খবর ফিজির মানুষেরা পাবে তাদের সকালে। এমতাবস্থায় সৌদির সাথে রোযা বা ঈদ করবে কীভাবে?
“একই দিনে রোযা, ঈদ” শুধু ভিন্ন দেশে নয়, এক দেশেই সমস্যা ঘটাতে পারে। যেমন- বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সেহরির ৫ মিনিট পূর্বে খবর এলো, আমেরিকায় চাঁদ উঠেছে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামবাসী কোনোক্রমে হয়তো সেহরি সম্পন্ন করল, কিন্তু রাজশাহীবাসী যাদের ব্যবধান চট্টগ্রাম থেকে ১৩ মিনিট তারা কী করবে? একই দেশে অবস্থান করেও তারা রোযা রাখতে পারবে না।
অতএব, স্ট্যান্ডার্ড টাইম জোনকে সামনে রেখে পৃথিবীকে যে অঞ্চল ভিত্তিক ভাগ করা হয়েছে, সেই হিসেবকে সামনে রেখে স্থানীয় ‘চাঁদ দেখা কমিটি’র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রোযা এবং ঈদ সহ আরবি তারিখ গণনা করা উচিত।
চিকিৎসা, মেডিসিন, পরিবেশ ও ডাক্তার মশাইদের কথা