মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ৯ রমজান ১৪৪৫

শিরোনাম :

হাওরে কেন এই ফসলহানি! আল ‍কুরআনের দৃষ্টিতে প্রতিকারের পথ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মঈনুদ্দীন তাওহীদ

আউশের শেষ সময়। কিন্তু কৃষাণদের মুখে এবার হাসি নেই। গত কয়েক সপ্তাহ আগে কাল বৈশাখির প্রলয়-তাণ্ডবে উড়ে গেছে তাদের হাসি।

আশাগুলো সব কাঁচের ঘড়ের মত ভেঙ্গে খানখান করে দিয়েছে আঁধার রাতের সেই হুরকে ঝড়। এ হলো একটি বাহের জনপদের অবস্থা। হাওর অঞ্চলগুলোর দুর্ভোগের কথা না হয় নাই বললাম। যদিও সেখানের ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে চরম মিথ্যাচার।

যেখানে আউশের ধান তোলার সময় ঘরে ঘরে ছোটে সুপ্ত এক খুশির বান। সেখানে আজ সবার হৃদয়ে বইছে আগতপ্রায় দুর্ভিক্ষের ভীতিকর হাহাকার।

অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার বাম্পার ফলন হয়েছিলো ধানের। সেই সাথে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মৌসুমি চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষকেরা।

তবে কেনো এই ফসলহানি!! আসুন একটু কুরআনের দিকে তাকাই!

পবিত্র কুরআনে সুরা কাহাফের ৩২-৪২ নং আয়াতে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটির সারসংক্ষেপ হলো,
বনী ইসরাঈলের দুজন ব্যক্তি ছিলো। একজন মোমিন অন্যজন কাফের।

আল্লাহ তাআলা তাদের একজনকে এমন দুটি আঙ্গুরের বাগান দান করেছিলেন যা ছিলো খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর উভয়ের মাঝখানে ছিলো বিশাল শস্যক্ষেত্র। উভয় বাগানই অবিরত অথচ প্রচুর পরিমাণে ফল দেয়। উপরন্তু বাগান দুটির ফাঁকে ফাঁকে ছিলো প্রবাহিত নহর।

একবার সে কথা প্রসঙ্গে তার মুমিন সাথীকে বললো, আমার ধন-সম্পদ এবং জনবল তোমার চাইতে বেশি। আর আমার মনে হয় না যে এ বাগান কখনো ধ্বংস হবে। আমি মনে করি না যে কেয়ামত সংঘটিত হবে আর যদি হয়েও যায় তাহলে সেখানে অবশ্যই আমি এর চেয়েও উৎকৃষ্ট কিছু পাবো।

উত্তরে তার সঙ্গী তাকে বললো, তুমি কি সেই সত্ত্বাকে অস্বীকার করবে, যিনি তোমাকে পর্যায়ক্রমে মাটি ও বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমার মানবাকৃতিকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন।

তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করলে তখন কেন এ কথা বললে না, আল্লাহ যা চান তাই হয়।
আল্লাহর দেওয়া ব্যতিত কোন শক্তি নেই।

আমি আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে তোমার চেয়েও উৎকৃষ্ট বাগান দান করবেন।

আর তোমার বাগানের উপর আসমান থেকে আগুন পাঠিয়ে ভস্ম করে দিবেন। অথবা তার তলদেশে প্রবাহিত পানিকে এমনভাবে চুষে নিবেন যে তুমি আর হাজার চেষ্টা করেও সে পানির নাগাল পাবে না।

ফলাফল তাই হলো। একদিন সকালবেলা সে দেখলো যে তার বাগানের সব ফল ধ্বংস হয়ে গেছে। সে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে আক্ষেপের সুরে বলতে লাগলো, হায়! আমি যদি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম!

তো এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ঐ ব্যক্তি তার সম্পদের প্রকৃত দাতা হিসেবে আল্লাহকে অস্বীকার করার ফলেই তার সম্পদের এই দশা হয়েছিলো।

তাছাড়া শোআবুল ঈমানে হযরত আনাসের রেওয়ায়েতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন,
কোন পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি ما شاء الله لا قوة الا بالله  (মাশা’আল্লাহ লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ) বলে দেওয়া হয়, তবে কোন বস্তু তার ক্ষতি করতে পারবে না।(অর্থাৎ পছন্দনীয় বস্তুটি নিরাপদে থাকবে।)

কুরআন ও হাদীসের সারাংশ থেকে এ কথাই বুঝা যায়, মহান আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতরাজির ক্ষেত্রে অন্য কোন বস্তুকে শরীক করার কারণেই খোদাপ্রদত্ত গজবে ফসলহানি ঘটে।

[মিম্বার থেকে ধ্বনিত হোক মাতৃভাষা বাংলার শুদ্ধ উচ্চারণ]

আসুন প্রিয় পাঠক! এবার আমরা আমাদের বর্তমান সমাজের হালচাল নিয়ে একটু আলোকপাত করি।

যতটুকু জানা গেছে, আউশের বাম্পার ফলনে আত্মহারা অনেক কৃষকরই এবার আনন্দের আতিশয্যে বড় গর্ব করে বলেছিলেন, 'এবার অমুক কোম্পানির সার বা অমুক মার্কা বীজ ব্যবহারের কারণেই এমন ভালো ফসল হয়েছে।'

টিভি চ্যানেলগুলোতে চোখ রাখলেই হরহামেশা দেখা যায়, ফসলের ভালো ফলনে তাদের কৃত প্রামাণ্যচিত্রর পুরোটাই থাকে ভালো বীজ ও সারের প্রশংসায় ভরপুর। যারা সেখানে সাংবাদিকতা করেন বা বক্তব্য রাখেন, তাদের কারো মুখেই খোদার শুকরিয়া জ্ঞাপক কোন শব্দ থাকে না। এটাকি আল্লাহর সাথে শরীক করা নয়!!

প্রিয় পাঠক একটু ভাবুন!

উপরোক্ত ঘটনার সাথে কি আমাদের সমাজের সামঞ্জস্যতা নেই!! অবশ্যই আছে।

সুতরাং এখনো সময় আছে সতর্ক হওয়ার। এই ভূকম্প, অতিবৃষ্টি কিবা অনাবৃষ্টি সবকিছুই আমাদের কর্মের প্রতিফল এবং খোদার পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। আসুন এর থেকে বড় কোন বিপর্যয় আসার পূর্বেই আমরা শোকরগুজার হৃদয় নিয়ে মহান প্রভূর দিকে ধাবিত হই।

আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমীন! ইয়া রাব্বাল আলামীন!!!

হাওরের মানুষের পাশে দাঁড়ান: প্রধানমন্ত্রী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ