বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাড়া বিচারক নিয়োগ নয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : সংবিধানে প্রদত্ত চার মূলনীতি (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা) এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাড়া কোন ব্যক্তিকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমনটি বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে এ বিষয়গুলো উঠে আসে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রায়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে সাতদফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

কওমি স্বীকৃতির বিরুদ্ধে সুন্নীদের রিট খারিজ

তারা যে সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা হলো:

এক. সংবিধানের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, যেমন- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। ওই মূলনীতি ও চেতনায় বিশ্বাসী ছাড়া কোন ব্যক্তিকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা যাবে না।

দুই. বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করার ক্ষেত্রে মেধাবী, প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চতর পেশাগত যোগ্যতা সম্পন্ন, সৎ এবং আইনী জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।

তিন. বিচারক হতে আগ্রহী প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দিতে হবে। এটা দেখার পর ইচ্ছা করলে প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারেন।

চার. বিচারক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষেত্রে পেশাগত জীবনে একজন ব্যক্তির অর্জিত দক্ষতা ও পারদর্শিতাকে প্রথম বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ। ভারতের আইন কমিশনের ৮০তম প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী একজন বিচারকের পেশাগত পরিপক্কতা ও অভিজ্ঞতাকে তার বয়সসীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের অভিমত হলো-সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মনোনয়নের ক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বনিম্ন ৪৫ বছর হওয়া উচিৎ।

পাঁচ. বিচারক হিসেবে নিয়োগে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে নিবন্ধিত আইনজীবীদের মধ্য থেকে উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্নদের অগ্রাধিকার দিতে পারবেন প্রধান বিচারপতি। তবে হাই কোর্ট বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন নিবন্ধিত আইনজীবীকেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

ছয়. জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিন বছরের কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিম্ন আদালতের কোন বিচারককে উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করা উচিত হবে না।

সাত. অধস্তন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান যোগ্যতা হওয়া উচিত সততা। মনে রাখা উচিত যে, উচ্চ মেধা সম্পন্ন ব্যক্তির যদি সততা না থাকে তবে তাকে কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হলে সেটা হবে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সুপারিশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি ইচ্ছা করলে সুপারিশ করার আগে আপিল বিভাগের সিনিয়র দুইজন এবং হাই কোর্ট বিভাগের দুই জন বিচারপতির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন। তবে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রাষ্ট্র বিরোধী বা সমাজ বিরোধী কাজে যুক্ত কিনা সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।

গত ১৩ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন আদালত। ওইদিন শুধুমাত্র আদেশের অংশ ঘোষণা করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালের ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী রিট আবেদন করেন। সে রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৬ জুন রুল জারি করা হয়। ওই রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন আদালত।

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ