শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কেমন হচ্ছে দাওরা পরীক্ষা, বিশিষ্টজনদের মতামত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : ১৫ মে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে দাওয়ারে হাদিস পরীক্ষা। গত ১১ এপ্রিল সরকার স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন জারি করার পর এবারই প্রথম দেশের ছয় বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তাকমিল জামাতের শিক্ষার্থীরা। কওমি শিক্ষা ধারায় এটাই সর্ববৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা।

এবার তাকমিল জামাতের পরীক্ষা অংশ নিয়েছে  ৭৩৭টি কওমি মাদরাসার ১৯ হাজার ৪৭২ পরীক্ষার্থী। ছাত্রদের এ বিপুল উপস্থিতি  ও সরকারের স্বীকৃতি নতুন মাত্রা দিয়েছে এবারের পরীক্ষায়। তবে স্বল্প সময়ের প্রস্তুতির কারণে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যূতিও চোখে পড়ছে কারো কারো।

নতুন প্রক্রিয়ায় ও উদ্দীপনায় সংঘটিত এ পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হয়েছে কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে।

সরকারের স্বীকৃতি কওমি তরুণদের মাঝে নতুন স্বপ্নে বীজ বপন করেছে। বিশেষত যারা প্রথমবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ইতিহাসের অংশ হলো তাদের উৎসাহ উদ্দীপনাটা চোখে পড়ার মতোই। এ বিষয়টি স্পষ্ট করেন সিলেট জামিয়া গহরপুর সিলেটের প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সহসভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু

তিনি বলেন, দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদরাসা সর্বোচ্চ স্তর। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ স্তরের পরীক্ষায় কওমি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ উদ্দীপনা একটু বেশি থাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বীকৃতি ও সম্মিলিত পরীক্ষা গ্রহণ। কোনো সন্দেহ নেই এবার উৎসাহের মাত্রা আরও অনেক বেশি। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এবার সাধারণ মানুষ, পাবলিক ও গণমাধ্যমও যথেষ্ট উৎসাহ দেখাচ্ছে। যা আগে কথনো দেখা যায় নি।

পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতির উপর সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আগ থেকেই নকলমুক্ত ও হট্টগোল ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে আসছি। যা পুরো জাতির জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত। আশা করি, মিডিয়ারা মাধ্যমে জাতি তা জানতে পারবে এবং শিক্ষা গ্রহণ করবে।

পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষাবিদ মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীও। তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিচারে অবশ্যই সন্তোষজনক হচ্ছে হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষা। সুষ্ঠু হচ্ছে, সুন্দর হচ্ছে। কিন্তু প্রথমবার হওয়ায় অনভিজ্ঞতার কারণে কিছু ত্রুটি চোখে পড়ছে।’

তবে তিনি স্পষ্ট করেন, যে ত্রুটি ও বিচ্যুতি চোখে পড়ছে তা পরীক্ষার মূল আবেদনের উপর প্রভাব ফেলবে না।।

ত্রুটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এবং মিডিয়ায় বলার মতো না। আমাদের নিজস্ব ফোরামে আলোচনার বিষয়।

বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় ১৭ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন লেখক, শিক্ষা গবেষক ও মুহাদ্দিস মুফতি জহির ইবনে মুসলিম। এবারের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সম্মিলিত পরীক্ষার গাজীপুর জোনের প্রধান হিসেবে। তার কাছে প্রশ্ন ছিলো সম্মিলিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে। তার বিশ্লেষণ ও অভিমত হলো, প্রশ্নের ধরণে পরিবর্তন এসেছে। তবে পরিবর্তনটা ইতিবাচক।

বিষয়টি তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেন, ‘পূর্বে কিতাবের এক অংশ থেকে একটি ইবারত তুলে দেয়া হতো। এবং অংশের উপর একাধিক ছোট ছোট প্রশ্ন হতো। কিন্তু এবার একই প্রশ্নের ছোট ছোট অংশগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে।’

তিনি মনে করেন, ‘এতে কওমি ছাত্রদের গাইডবই নির্ভরতা কমবে। যা কওমি মাদরাসাকে আলিয়ার পথে পরিচালিত করছিলো।’

এতে ছাত্রদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কী? ‘হ্যা, কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটা তাদের কারণেই। তারা মূল কিতাব না পড়ে গাইডবই পড়ার কারণে এখন নির্ধারিত স্টাইলের বাইরে প্রশ্ন আসলে বিব্রত হয়। কিন্তু পুরো কিতাব পড়লে এ সমস্যা হতো না।’

ছাত্রদের পাশাপাশি শিক্ষকগণ কি ভাবছেন তা জানার চেষ্টা করেছিলাম জামিয়া সাঈদিয়া কারীমিয়ার প্রিন্সিপ্যাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের কাছে। তিনি জানান, ছাত্র শিক্ষক সবাই পরীক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। পরীক্ষা ও পরীক্ষাব্যবস্থাপনা নিয়ে তার মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক কেউ কোনো আপত্তি জানাইনি।

তিনি নিজেও সম্মিলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা দেখছেন না। বরং তিনি মনে করেন, এতে কওমি মাদরাসার শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। সারা দেশের মাদরাসাগুলোতে পড়ালেখায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ মান প্রতিষ্ঠিত হবে।

দর্জি থেকে দাওরা পরীক্ষার্থী

জামিয়া উমেদনগরের ছাত্ররা দাওরা পরীক্ষা দিচ্ছে না; নেপথ্যে কী কারণ?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ