দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে দেশে প্রায় দেড় হাজার ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে ২৫৮টি ধর্ষণ ও ৫৫টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ১৫টি ও ধর্ষণচেষ্টার ৬০টি ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে। পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, আত্মহত্যা, বাল্যবিবাহ, অপহরণ ছাড়াও বিভিন্নভাবে এক হাজার ৫৬৬টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৫৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬২, মার্চে ৭১ ও এপ্রিল মাসে ৬৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে, ২০১৬ সালের হিসাবমতে, গত বছর ৮৪০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) ২৮০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া এ বছরের জানুয়ারি মাসে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৩, মার্চে ১৪ ও এপ্রিলে ১৪ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
২০১৬ সালে মোট গণধর্ষণের ঘটনা ছিল ১৬৬টি। এর মধ্যে বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) ৪১ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বলে মহিলা পরিষদের তথ্যে জানা গেছে।
মহিলা পরিষদ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চারজন, ফেব্রুয়ারিতে চারজন, মার্চে তিনজন ও এপ্রিলে চার নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল পাঁচটি। গত বছর ৪৪ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৬০টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২, ফেব্রুয়ারিতে ১৬, মার্চে ২০ ও এপ্রিল ১২ নারী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন। গত বছর প্রথম চার মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪২।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে শিশুকন্যাসহ চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক বাবা। এ ঘটনায় পুলিশ শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোসেন (৫২) ও তাঁর ছেলে মিঠুনকে (৩০) আটক করেছে।
এ ছাড়া গত ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০০১ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলায় এ ধরনের মামলার রায় দেওয়ার জন্য একজন করে বিচারক থাকার কথা। কিন্তু অনেক জেলা আছে, যেখানে এই ট্রাইব্যুনালের কোনো বিচারক নেই। সে কারণে মামলাগুলোর রায় বা বিচার হতে দেরি হচ্ছে।
এই অধ্যাপক আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো মামলার রায় হতে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে কোনো মেয়ে যদি ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করে, বিচারের এই দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে সে সমাজ, পরিবারের কাছে নানাভাবে অবহেলা-হয়রানির শিকার হয়।
[ধর্ষণ থেকে বাঁচতে নারীর জন্য অস্ত্র ব্যবহার কি জায়েজ?]
এতে করে অনেকের পক্ষেই শেষ পর্যন্ত মামলাটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে সমাজে ধর্ষণের বিচার দৃশ্যমান হয় না যার কারণে অপরাধীরা উৎসাহ পাচ্ছে।
অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, ‘নৈতিকতা এখন অনেক কমে যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষার অভাব তৈরি হচ্ছে।
আমরা একই সঙ্গে উদার হতে পারছি না এবং অনেক বিষয় থেকে বের হতে পারছি না। আইন ও বিচারের জায়গাটা আমরা এখনো প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। যার কারণে অপরাধ বাড়ছে।’
‘আসলে আমাদের দেশে প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশে অপরাধ কর্মকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যার ফলে সঠিক বিচার হয় না,’ মনে করেন এই অধ্যাপক।
ধর্ষণের প্রতিবাদ করাই যেখানে অন্যায়
এসএস/