হাসান আল মাহমুদ
প্রতিবেদক, আওয়ার ইসলাম
সকাল নয়টা বাজতেই শুরু হয়ে গেল সারা বাংলাদেশে একযুগে অভিন্ন প্রশ্নে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্স পরীক্ষা।
১১ এপ্রিল ২০১৭ দা্ওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি ঘোষণার পর কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর সম্মিলিত বোর্ডে এই প্রথম একই সময়ে অভিন্ন প্রশ্নে সারা দেশে ২১৮ কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৪৭২ জন দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের মাস্টার্স সমাপনি পরীক্ষা অনিুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে ৯১ টি কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার ৬৬৮ জন ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ ছাত্ররা প্রথম বারের মত এ বছর থেকেই পাচ্ছেন ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবীতে মাস্টার্স সমমান সনদ। দেশের প্রায় ৭৭৩ টি কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
প্রথম দিনে বুখারি শরীফ দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল নয়টায় শুরু হওয়া এ পরীক্ষা চলেছে ঠিক বারোটা পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের কয়েকেটি কেন্দ্র ঘুরে তুলে আনা হয়েছে পরীক্ষার চিত্র।
[caption id="attachment_35713" align="alignnone" width="500"] জামিয়া পীরজঙ্গি কেন্দ্র[/caption]
মারকায: জামিয়া দ্বীনিয়া শামসুল উলুম (পীরজঙ্গী মাদরাসা) মতিঝিল, ঢাকা
এই কেন্দ্রে মাদরাসা মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া দক্ষিণ মান্ডা ঢাকা, জামিয়া দারুল উলুম মতিঝিল ঢাকা,মাদরাসা আল-জামিয়া মাযাহিরুল উলুম ১ নং সিদ্দিক বাজার বংশাল ঢাকা, মাদরাসা বাহরুল উলুম মান্ডা ঢাকা ও অত্র মাদরাসাসহ মোট পাঁচটি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস ছাত্রদের ৮১ জন ছাত্র পরীক্ষা দেয়্।
সুনসান নিরবতা আর সুন্দর সম্পূর্ণ নকলমুক্ত এ কেন্দ্রের পরিববেশ প্রত্যক্ষ করি । কেন্দ্রের হল নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কে পরীক্ষার হলের শৃঙ্খলা রক্ষায় আইনি সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের ছাত্ররা সম্পূর্ণ নৈতিক সম্পন্ন।কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা ছাত্রদের ইতিহাসে নাই।আমরা নিজেরাই নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে আছি। তাই আমাদের আইন শৃঙ্খলা বা পুলিশি সহায়তার কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না।
মারকায: জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা
এই কেন্দ্রে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুস দক্ষিণগাঁও সবুজবাগ ঢাকা, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম নতুনবাগ রামপুরা, শেখ জনুরুদ্দীন রহ: দারুল কুরআন মাদরাসা, জামিয়া ইসলামিয়া মাখযানুল উলূম খিলগাঁও, মাদরাসা আবু বকর রা: ও অত্র জামিয়াসহ মোট পাঁচটি মাদরাসার ১২৬ জন দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। নিটকের পরীক্ষার্থী থেকে কোনো ধরনের হেল্প নেয়া তো দূরে সামান্য এদিক ওদিকও তাকাতে দেখা যায়নি কোনো পরীক্ষার্থীকে।
দায়িত্ববান পরীক্ষকগণ তদারকি করছেন নিপুনভাবে। হল নিয়ন্ত্রক মুফতি নুরুল ইসলাম খান কাসেমী আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর কে বলেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ! এখানে সম্পূর্ণ নকলমুক্ত নজিরবিহীন পরীক্ষা চলছে।কওমি মাদরাসার ইতিহাসে কোনো ছাত্র নকলবাজি কিংবা কোনো ধরনের হেল্প নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার নজির নাই এবং থাকবেও না’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘তার তো কোনো প্রয়োজনই মনে করছি না।
মারকায: জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ ঢাকা
এই কেন্দ্রে জামিয়া ইকরার রেজিষ্ট্রিকৃত মোট ১৮৪ জন দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। মনোরম সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে পরীক্ষার্থীরা নৈতিকতা বজায় রেখে পরীক্ষা দিতে দেখা যায়। হল নিয়ন্ত্রক মুফতি আব্দুল হাই কাসেমী কে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চা্ইলে তিনি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন- ‘আলহামদুল্লিাহ! কোনো ধরণের সমস্যা এখানে নেই। স্বাগতিক এই মাদরাসা থেকে আমরা সবধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি। পরীক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ নৈতিকতা বজায় রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে।তাছাড়া কওমি মাদরাসার ইতিহাসে অনৈতিকার কোনো নজির নেই,ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ থাকবে না।আ্ইনশৃঙ্খলার বিষয়ে তিনি বলেন, তার কোনো প্রয়োজন মনে করি না।
মারকায: জামিয়া ইদারাতুল উলূম আফতাবনগর ঢাকা
এই কেন্দ্রের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মুফতি ফয়জুল্লাহ আমান কাসেমী আওয়ার ইসলাম টেয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান- ‘আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের এখানে সম্পূর্ণ নৈতিকতা বজায় রেখে পরীক্ষা চলছে। নকলের সুযোগ গ্রহণের তো কোনো প্রশ্নই না্।এই কেন্দ্রে ৪টি মাদরাসার মোট ১১০ জন দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।ওরা সবাই নৈতিকবান। সততা বজায় রেখে সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে।আইন শৃঙ্খলা বা পুলিশি গার্ডের কোনো প্রয়োজন আ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘তার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।আইন শৃঙ্খলা তো প্রয়োজন সেখানে, যেখানে কোরাপশন জড়িত।যেখানে বিশৃঙ্খলা হয়। এরা তো সবাই শৃঙ্খলিত।নৈতিকবান’।
[caption id="attachment_35709" align="alignnone" width="500"] জামিয়া মালিবাগ কেন্দ্র[/caption]
মারকাজ: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী
এদিকে যাত্রাবাড়ীতে থাকা আওয়ার ইসলামের প্রতিনিধি বশির ইবনে জাফর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানান, এই কেন্দ্রটিতে সর্বমোট ৬৪১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। পিনপতন নিরবতায় মসজিদ কমপ্লেক্সের চতুর্থতলার কেন্দ্রটিতে ৬৪১ জন শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছেন ১৬ জন নেগরান। নিকটস্থ আঞ্চলিক অফিস থেকে পুলিশী নিরাপত্তায় গতকাল কেন্দ্রে আসে প্রশ্নপত্র।
সরকারী কোন কর্মকর্তা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসেছেন কিনা এ ব্যপারে জানতে চাইলে একজন নেগরান (নাম জানতে চাইলে বলেন, নামের প্রয়োজন নেই) জানান, এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি এবং আসবে বলেও কোন খবর তার কাছে নেই। এছাড়া কেন্দ্রের আশপাশেও কোন পুলিশী পাহাড়া লক্ষ্য করা যায়নি।
[caption id="attachment_35710" align="alignnone" width="500"] জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের পরীক্ষা কেন্দ্র[/caption]
মারকায: জামিয়া আশরাফিয়া শান্তিধারা নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের এ কেন্দ্রে জামিয়া আশরাফিয়া ও জামিয়া রাব্বানিয়ার ৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এখানে নেগরানের দায়িত্বে ছিলেন মাওলানা মুহাম্মাদ রাশিদুল হক। টেলিফোনে আওয়ার ইসলামকে তিনি জানান, অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলতার সঙ্গে এখানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো সময় ছাত্ররা এতটাই নিরিবিলি আর শান্তভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন যা একেবারেই নজিরবিহীন।
তিনি বলেন, এখানে কোনো পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল না। সবাই উত্তরপত্রে খুব গুছিয়ে লিখেছেন এবং তুলনামূলক অনেক বেশি লিখেছেন। পরীক্ষার আগে লক্ষ করেছি ছাত্ররা কথাবার্তা না বলে আমলে মশগুল ছিল।
অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের প্রশ্নপত্র সহজ ছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র আগের মানেই করা হয়েছে। তবে ৬ বোর্ডের সম্মিলিত পরীক্ষার কারণে প্রশ্ন কিছুটা সহজই মনে হয়েছে।
[caption id="attachment_35711" align="alignnone" width="500"] কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়া কেন্দ্র[/caption]
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জে আল্লামা আনোয়ার শাহ'র উদ্বোধনীতে আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়াতে মনোরম পরিবেশে নকলমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দাওরায়ে হাদিসের (মাস্টার্স) প্রথমদিনের পরীক্ষা।
এই কেন্দ্রে প্রধান নেগরান হিসেবে উপস্থিত আছেন মাওলানা আ: গফুরসহ আরো বেশ কয়েকজন আলেম।
এখানে বিভিন্ন মাদরাসা থেকে অংশগ্রহণ কারী পরিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ২০২জন।আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া থেকে রয়েছে ১১৩জন, অন্যান্য মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়া গাইটাল, জামিয়া নুরানীয়া তারাপাশা, তারাকান্দি আসাদুল উলুম ইউনিভার্সিটি ও জামিয়া ইসলামিয়া মার্কাজ রয়েছে বাকি ৮৯ অংশগ্রহণকারী।
এই কেন্দ্রে প্রথম দিনে অনুপস্থিতির সংখ্যা ছিল ২২ জন।
পরীক্ষার শুরুতে আল্লামা আনোয়ার শাহ ছাত্রদের সুন্দর সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষার দেয়ার আহ্বান জানান।
পরীক্ষার হলের অবস্থা জানতে চাইলে স্থানীয় নেগরান মুফতি সুহাইল আহমদ আওয়ার ইসলামকে জানান, সরকারী নিরাত্তা ছাড়াই সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা চলছে, সমানের পরিক্ষাগুলি আরো ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ১৬ মে হবে তিরমিজী শরিফ ১ম, ১৭ মে তওহাবী শরিফ, ১৮ মে মুসলিম শরিফ ১ম, ২০ মে বুখারি শরিফ ১ম খণ্ড, ২১ মে বুখারি শরিফ ২য় খণ্ড, ২২ মে নাসায়ী শরিফ ও ইবনে মাজাহ শরিফ, ২৩ মে আবু দাউদ শরিফ ২য় খণ্ড, ২৪ মে তিরমিজী শরিফ ২য় খণ্ড, ২৫ মে মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও মুয়াত্তা ইমাম মোহাম্মদ বিষয়ে পরীক্ষা হবে।
কওমি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে পরিবর্তন