শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

হজে নারীর ছবি আর ছাত্রীদের পরীক্ষায় ছবির বিষয়টি এক নয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আফিফা মারজানা। ২০০৮ সালে বরিশালের ফজিলাতুন্নেসা মহিলা মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন। রাজধানীর ঢালকানগরে বাইতুল উলুমের বালিকা শাখায় দুইবছর শিক্ষকতা করেন। মহিলা মাদরাসাগুলো নিয়ে চিন্তা করেন। তাদের শিক্ষার মান উন্নয়নেও ভাবেন সব সময়। শিক্ষকতা ও সংসারের পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করেন। এই সময়ের নারী লেখকদের মধ্যে বেশ সুনামও অর্জন করেছেন। সম্প্রতি মহিলা মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার ছবির বিষয়ে বিতর্ক ও মহিলা মাদরাসার সার্বিক বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোকন রাইয়ান

মহিলা মাদরাসাগুলোও পুরুষ মাদরাসার সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিচ্ছে বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি এবং খুবই স্বাভাবিক। শুধু এবারই নয় বরং অনেক বছর আগে থেকেই মেয়েরা ছেলেদের সাথে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলো দিয়ে আসছে। শিক্ষাবর্ষ কম হওয়া সত্বেও একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়াটা মেয়েদের জন্য কৃতিত্বের।

কিন্তু রেজাল্টে সব সময় দেখা যায় মহিলা মাদরাসাগুলো ছেলেদের তুলনায় পিছিয়ে, কারণ কী?

এর বহুমুখী কারণ আছে। ব্যাপারটা অনেকগুলো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
প্রথমেই বলি মেয়েদের চেয়েও খারাপ রেজাল্ট করা অনেক অনেক ছেলে আছে। সব ছেলের পরে মেয়েরা-ব্যাপারটা এমন নয়।

এরপর ধরুন- বয়স। আমাদের মাদরাসায় এবার যারা দাওরা পরীক্ষা দিচ্ছে-অধিকাংশেরই বয়স ১৬/১৭ এর কোঠায়। আঠারো পূর্ণ হয়েছে এরকম ছাত্রী খুবই কম। অথচ সাধারণত এই বয়সে ছেলেরা হেদায়াতুন্নাহু শরহেজামি পড়ে। বয়সের এই পার্থক্য ও বুঝ মেয়েদের অনেকখানি পিছিয়ে দেয়।

তারপর বলা যায়, মেয়েদের শিক্ষাবর্ষ তুলনামূলক কম, এটাও একটা বড় ব্যাপার। যদিও আমি আমভাবে মেয়েদের শিক্ষাবর্ষ বাড়ানোর পক্ষে নই। আবার মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবও লক্ষ্যণীয়।

ছেলেদের মত বড় বড় আলেম উস্তাদ মেয়েরা পায় না। সাধারণত যারা কোনো ভালো মাদরাসার নিয়োগ পায় না, তারাই মহিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করতে আসে এরকম একটা কথা প্রচলিত আছে। তো এরকম অদক্ষ শিক্ষকের কাছে পর্দার আড়াল থেকে পড়ে মেয়েরা নিজেরাও পরবর্তীতে খুব দক্ষ হয়ে উঠবে বা ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকবে এরকম ভাবা ভুল।

তবে অনেকে নিজের মেধা ও পারিবারিক সহযোগিতা পেয়ে অনেক এগিয়ে যায়। আবার মেয়েদের রেজাল্ট আলাদা হয় বলে মেয়েদের ছেলেদের প্রতি কোনো প্রতিযোগিতা তৈরি হয় না। সব মিলিয়ে মেয়েরা তুলনামূলক ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে থাকে।

স্বীকৃতি ইস্যুতে কেউ কেউ বলছেন মহিলা মাদরাসাগুলোকে আলাদা রাখা হোক, মানে মহিলা মাদরাসার স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই, এতে কি আপনি একমত? 

মূলত ছবি সমস্যার জন্যই এটা বলা। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম (মাফ করবেন) ভিক্ষে চাইনে বাবা কুকুর সামলাও।’ ছবি সমস্যার যথাযথ সমাধান হলে আমি স্বীকৃতির পক্ষে, কারণ এটা না হলে পড়ালেখার মান নিম্নগামী হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পড়াশোনার মান উন্নত করে।

পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্রে ছেলেদের মতো মেয়েদের ছবিও শর্ত করা হচ্ছে, এবার শিথিল করা হলেও আগামীতে হয়তো কঠোর করা হবে এ বিষয়ে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছবির বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

ছবি নানাভাবে ফিতনা ছড়াবে। উপরের প্রশ্নে যা বলেছি, ছবি দেবার চেয়ে মেয়েদের আগের মতই বেফাকের আওতায় পরীক্ষা নেয়া উত্তম। আমি কোনোভাবেই ছবির পক্ষে নই।

স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিকতায় তো একজনের পরীক্ষার স্থলে অন্যজন দিচ্ছে কিনা বা ফাইল পত্র ঠিক রাখতে ছবি জরুরি, এটা কিভাবে সমাধান করা হবে?

বিকল্প পদ্ধতির চিন্তা করতে হবে। অনেকেই ফিংগার প্রিন্টের কথা বলছেন। এটির ব্যবহার এখন খুব ঝক্কির নয়। মুমতাহিনাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে এটি করা যায়।

মাসালায় আছে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ছবি তোলা জায়েজ যেমন হজের ক্ষেত্রে, পরীক্ষার ক্ষেত্রে কি এটা মানা যায় না?

না, ব্যাপারটা এক নয়। হজের ক্ষেত্রে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের ভেতর ছবি মিলে যায় এবং এখানে মহিলাদের কেউ চিনে নিয়ে দেখে না। কিন্তু মাত্র চার-পাঁচহাজার ছবির ক্ষেত্রে কৌতূহল নিয়ে দেখা হবে, দেখি অমুক মাদরাসার ছাত্রীরা কেমন। বাবার নাম মিলিয়ে দেখা হবে, দেখি অমুক হুজুরের মেয়ে এটা! এটা হবেই, নিশ্চিত থাকেন। আবার দীন শিক্ষার শেষে মেয়েদের সরকারি স্বীকৃতি এমন জরুরি কিছু নয় যাতে এইসব বিষয়ের চেয়ে স্বীকৃতি জরুরি হয়ে যায়। মেয়েরা সাধারণত কারো ভরণ পোষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়, তাই এই শিক্ষার উদ্দেশ্য থাকে শুধুই দীনী ইলম শিক্ষা। তাই ফিতনা ও গায়রতের সামনে স্বীকৃতি ছোট হয়ে যায়।

মহিলা মাদরাসার শিক্ষার উদ্দেশ্য কী? তাদের কি নির্দিষ্ট কর্মসংস্থান আছে? না থাকলে করা উচিত বলে মনে করেন?

মহিলা মাদরাসার চেয়ে আমি বালিকা মাদরাসা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং অারবীতে মাদরাসাতুল বানাতের বাংলা তরজমাও কিন্তু বালিকা মাদরাসা। যাই হোক, মেয়েদের মাদরাসায় পড়তে আসার বা এই শিক্ষার উদ্দেশ্য আল্লাহ ও রসূলের কথা জানা। শরীয়তের বিধান জেনে নিজের জীবনে পালন করা ও পরিবারের সবাইকে দীনের ওপর চালানো।

তাদের নির্দিষ্ট কর্মসংস্থান নেই, এবং এটাকে অর্থাৎ এই শিক্ষা দিয়ে কর্মসংস্থান জরুরি মনে করি না।

যদি কর্মসংস্থান না থাকে তাহলে তারা দীন শিখে সেটা কাজে লাগাবে কোথায়?

মুসলিমের ‍দুনিয়ার জীবন তো উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য তো আখিরাত। একটা মেয়ে যখন আল্লাহ ও রাসূলের বিধান জানে ও সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে, তখন তার পরিবার পাড়া প্রতিবেশী অনেকাংশে ঠিক হয়ে যায়। এই যে সমাজের গোড়ায় নিভৃতে বিশ্বাসের চাষাবাদ এটাই নারীর মেয়ের দীন কাজে লাগাবার জায়গা।

সংসারের কাজের ফাঁকে নিয়ম করে একজন আলেমা তার নারী প্রতিবেশীদের দীন শেখাবে, কুরআন পড়ানো শেখাবে, মাসআলা বাতলে দেবে, এই তার মূল কাজ।

এরপর কেউ চাইলে কুরআন শিখিয়ে, বা মাদরাসায় পড়িয়ে যদি কিছু আর্থিক ব্যবস্থা করতে পারে-সেটা বাড়তি ব্যাপার, মাদরাসায় পড়ার উদ্দেশ্যের সাথে মিলবে না।

আর একটা কথা, মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার সংযোজন বিয়োজন ও আধুনিকায়ন ও মাদরাসা পরিচালনার ও আবাসিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও আধুনিকায়ন জরুরি।

সোমবার দাওরা পরীক্ষা শুরু; কোন বোর্ডে পরীক্ষার্থী কত?

মহিলা মাদরাসায় কী পড়ানো হয় কীভাবে পড়ানো হয়


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ