রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

দেশের তৃতীয় শক্তি হতে পারে ইসলামি শক্তি: উবায়দুর রহমান খান নদভী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান: আগামী নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জোট গঠনের তাড়া। বড় দলগুলো জোড়েশোরেই নিচ্ছে প্রস্তুতি। ছোট দলে চলছে নানা হিসেব নিকেষ। কে কোন দলে যাবে কোন জোটে থাকবে তাই নিয়ে চলছে দরকষাকষি।

এদিকে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ইতোমধ্যেই ‘সম্মিলিত জাতীয় জোটের’ ঘোষণা দিয়েছেন। সেই জোটে ৫৮ দল একিভূত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ৫৮ দলের অধিকাংশই নাম সর্বস্ব। সাবের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জোট নিয়ে বেশ দৌড়ঝাপ করলেও কাছে টানতে পারেননি নিবন্ধিত প্রসিদ্ধ কোনা দলকে।

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জোটে যেমন সাড়া দেয়নি ইসলামি দলগুলো, তেমনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বা মাহমদুদুর রহমান মান্নার দলও সাড়া দেয়নি। ফলে নির্বাচনে এই দল কতটা আলোচনায় থাকবে সেটা এখনই অনুমেয় সবার কাছে।

নির্বাচনে দেশের ইসলামি দলগুলোর আলাদা কদর থাকে সব সময়। বলা যায় ফলাফলের ব্যবধান বাড়িয়ে দিতে বড় রকমের প্রভাব ফেলে ইসলামি দলগুলো। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর জোটে সেটাই দেখা গেছে। ২০১৩ তে হেফাজতের ইসলাম যে জনশক্তি দেখিয়েছে জনমনে হিসেবটা পুরোই পাল্টে দিয়েছে। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাই ইসলামি দলগুলোর দিকে বাড়তি নজর সবার।

জোট মহাজোটের এই আলোচনায় ইসলামি দলগুলো এসেছে নানাভাবে। নানা সমিকরণে গোণা হচ্ছে তাদের। একদল মাটি কামড়ে তাদের ধরে রেখেছে আবার আরেক দল সেটা ছাড়াতে কৌশলি চাল দিচ্ছে। এই কৌশলি খেলায় কে জেতে কে হারে সেটা সময় সাপেক্ষ। আর মাঝখান থেকে দাবার ঘুটি হয়ে থাকা দলগুলোই বা আখেরে কী পাবে সেই হিসাবও জড়িয়ে আছে রাজধানীর  বিদ্যুতের তারের মতো।

গত মাসে কওমি স্বীকৃতি ঘোষণার পর ইসলামি দলগুলো বা হেফাজতে ইসলামকে কেন্দ্র করে আলোচনা তুঙ্গে। হেফাজত রাজনীতিতে আসছে এবং ৩০ আসনে নির্বাচন করবে এমন আলোচনাও ছড়িয়েছে মিডিয়ায়। যদিও এগুলোকে গুজবে পরিণত করা গেছে। কিন্তু আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলেমদের একটা জোট গঠনের চেষ্টা যে অব্যাহত সেটি কোনো গুজব নয়। ইসলামী ঐক্যজোট-বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কয়েকজন নেতা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

[জাতীয় জোটের ঘোষণা দিলেন এরশাদ; সঙ্গে আছে ৫৮ দল]

ইতোমধ্যেই ফেসবুকে আলোচনাও শুরু হয়েছে এই জোট নিয়ে। ‘কওমি জোট’ বা ‘উলামা কাউন্সিল’ নামে আসতে পারে এই জোট। যেখানে কওমি ধারার সবগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে সবগুলো ইসলামি দলকে একস্থানে আনা যাবে কিনা এই নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। এ বিষয়ে আলাপ করলে উলামা দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ার ইসলামকে বলেন, এরশাদের নেতৃত্বে জোটের সম্ভাব্য তালিকায় খেলাফত মজলিস, জমিয়তের নাম এলে বিএনপির হাই কমান্ড এই নিয়ে আলোচনা বসেছিল। সেখানে দল দুটি তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছে, আমরা বিএনপি জোটের সঙ্গে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। এমনকি তারা এও বলেছেন, জিয়াউর রহমান আমাদের রাজনীতির সুযোগ দিয়েছেন, আমরা তার সঙ্গে বেইমানি করতে পারবো না।

আলেমদের স্বতন্ত্র জোট নিয়ে আশাবাদী অনেক মানুষ। তারা মনে করেন বাংলাদেশে আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের যে ভোট রয়েছে সব শক্তি একত্রিত থাকলে একটা সুনির্দিষ্ট টার্গেট বাস্তবায়ন করা অতি সহজ। তবে ফেসবুকে অনেককে বিরুপ মন্তব্য করতেও দেখা গেছে। তাদের অভিমত জোট তো অনেক হলো কিন্তু এগুলো তো টিকে থাকে না। দেখা যায় এই জোট একসময় নানা দ্বন্দ্বে বহুদলে পরিণত হওয়ার পথ বেছে নেয়।

Image may contain: 1 person, beard and eyeglasses

বর্তমানে আলাদা একটি ইসলামি জোটের প্রয়োজনিয়তা বা উপকারিতা কতটুকু এ বিষয়ে কথা হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে এখন বড় দুটি শক্তি রয়েছে। সবার আশা আকাঙ্ক্ষা তৃতীয় একটি দল বা শক্তি দাঁড়াক। আমার মনে হয় এই তৃতীয় শক্তিটি ইসলামি শক্তি হতে পারে।

তিনি বলেন, এই শক্তি তৈরিতে অনেক কৌশলি হতে হবে। কারণ এখন প্রধান সব দলই চাইবে তাদের স্বার্থের বাইরে কিছু না হোক। এ জন্য ইসলামি দলগুলোকে তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য কাজে লাগাতে চাইবে।  এ ক্ষেত্রে সুচিন্তিত মতামত ও কর্মপন্থা নিয়ে এগুতে হবে।

অতীতে অনেক জোট হলেও নানা ইস্যুতে সেটা ভেঙে যায়। বলা যায় সেই জোটই আরও নতুন দল তৈরির রসদ জোগায়। এর থেকে বাঁচার পন্থা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এমন ভাঙা গড়া থাকবেই। ভাঙার জন্যই জোট হয়। তবে দলগুলো যখন ক্ষমতায় যাওয়ার মতো ক্ষমতাবান হওয়ার কাছাকাছি যাবে তখন আর ভাঙনের পরিস্থিতি থাকবে না।

বামপন্থী দলগুলোর উদারহরণ টেনে তিনি বলেন, ইসলামবিরোধীরা শক্তিগুলো কিন্তু কিছু জায়গায় এক। যেমন- স্বাধীনতা বিরোধী, নারী নির্যাতন, অর্থ প্রাচার এগুলোতে তারা এক সুরেই কথা বলেন। এক জায়গায় এসে আন্দোলন করেন। ইসলামি দলগুলোকে তাদের আদর্শিক জায়গায় এক থাকতে হবে। এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

ইসলামি দলগুলো যে পর্যায়ে রয়েছে সেখান থেকে রাজনীতিতে নতুন কোনো চমক দেখানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, সুযোগ রয়েছে তবে সেটা জনগণের মেজাজ ও চাহিদা বুঝে করতে হবে। ইসলামি রাজনীতির উদ্দেশ্য কিন্তু জনকল্যাণ ও সমাজ উন্নয়ন। ক্ষমতা কিংবা সংসদের যাওয়াটা এ রাজনীতির মূখ্য নয়। ক্ষমতায় যেতে পারলে সেটা ভালো। সুতরাং ইসলামি রাজনীতি যারা করেন সবসময় জনগণের চাহিদাকে প্রাধান্য রেখে কাজ করতে হবে।

আর এটা করতে পারলে জনগণই তাদের জন্য চমক দেখাবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে জোট নিয়ে আশাবাদী আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া আলেমরা। এ বিষয়ে রিসালাতুল ইনসানিয়াহ বাংলাদেশের আমীর মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, ইসলামী দলগুলো একত্রিত হয়ে নির্বাচন করলে ভালো রেজাল্ট আসবে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় বিভ্রান্তি ও অনৈক্য স্পষ্ট হচ্ছে।

ইসলামি শরীয়াহ আইনের সমর্থনে ভারতে নারীদের মিছিল

আলজেরিয়ার ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনী জোট

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ