শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


তথ্য গোপন করে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করছে মেরী স্টোপস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিতে আসা রোগীদের কাছে তথ্য গোপন করে দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে বাধ্য করছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মেরী স্টোপস। সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারাণামূলক কাজের ফলে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে।

জানা গেছে, মেরী স্টোপসের বিরুদ্ধে ওঠে আসা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। ওই ক্লিনিকে বর্তমানে ভেসেকটমি কার্যক্রম সমায়িক বন্ধের নির্দেশ এবং অধিকতর তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া এসব ক্লিনিকে এমআর ও এমআরএম সঠিকভাবে পরিপালনের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার নামে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে মেরী স্টোপসের জাতীয়ভাবে নেয়া জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। সরকারের টাকায় জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার অধিকার কারও নেই। অবিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন থেকে এনজিওর সব কার্যক্রম আরও কঠোরভাবে তত্ত্বাবধান করা হবে।

জানা গেছে, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার নামে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডস্থ মেরী স্টোপসের রেফারাল ক্লিনিক ঢাকা-১, এমআর (সার্জারির মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ) ও এমআরএম (ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ) চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেবার নামে রোগীদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে। কামরাঙ্গিরচর এলাকার এক নারী মেরী স্টোপস রেফারাল ক্লিনিক ঢাকা-১-এ এমআর করতে এলে তাকে না জানিয়েই সুতা বলে কপার-টি পরানো হয়। কপার-টি বা আইইউডি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি।

তার স্বামী অভিযোগ করেন, আমার স্ত্রীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কপার-টি পরানোর আগে আমাদের জানানো হয়নি। তারা যে এভাবে প্রতারণা করবে তা ভাবতেও পারিনি। জানা গেছে, মেরী স্টোপস ক্লিনিকে ১ আগস্ট থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এমআর ও এমআরএম চিকিৎসা নিতে আসা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এএ৪৪৮১ থেকে এএ৪৯৮১) শতাধিক রোগীর মধ্যে অধিকাংশের সঙ্গে একই ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। ওই ক্লিনিকের প্রতারণার শিকার এক নারী গত বছরের ৩০ অক্টোবর পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে তিনি জানান, এ ক্লিনিকে এমআর করাতে এলে তাকে না জানিয়ে সুতা বলে কপার-টি পরানো হয়। মেরী স্টোপস রেফারাল ক্লিনিক ঢাকা-১-এ চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এমআরএম করাতে এলে ওষুধের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে রোগীদের তিন বছর মেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি (ইমপ্লেনন) দিয়ে দেয়। রোগী এবং তাদের স্বজনদের কাছে এ প্রসঙ্গে কোনো ধারণা দেয়া হয় না। তড়িঘড়ি করে সম্মতিপত্রে রোগীর কাছ থেকে সই করিয়ে নেয়া হয়।

রোগীরা জানান, সেবা নিতে এলে ডাক্তার তাদেরকে বলেন, মাসিক নিয়মিত হওয়ার জন্য যে ওষুধ খাবেন তার সঙ্গে হাতে একটি ইনজেকশন নিতে হবে। তাহলে ভালভাবে ব্লিডিং হয়ে আপনার বাচ্চাটা পড়ে যাবে। তবে এটা যে একটা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, তা রোগীকে জানানো হয় না। এমনকি এর সুবিধা-অসুবিধা, জটিলতা রোগীর কাছে গোপন রাখা হয়। ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রোগীর হাতের সুই (ইমপ্লেনন) খুলে দেয়া হয়। এই কপার-টি ও ইমপ্লেনন পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল, যা বাংলাদেশ সরকার জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে থাকে। এ খাতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। ক্লিনিকটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নারীরা জানান, প্রয়োজন ছাড়া রোগীদের প্যাথলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদি টেস্ট দেয়া হয়। এছাড়া রোগীকে না বলেই বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। বেশিরভাগ রোগীই জানে না, তার কাছ থেকে কিসের জন্য কত টাকা নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেরী স্টোপস ক্লিনিকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর অনিল তামবে চলে যাওয়ার পর থেকে কয়েকজন কর্তাব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করছে। তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সংস্থাটি ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। একটি চক্র ভুয়া কর্মসূচি পালন দেখিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কম দামে ওষুধ কিনে তা বেশি দাম দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার প্রদর্শনসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অডিট ও পরিসংখ্যান সঠিক রাখতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করছেন।

মেরী স্টোপসের পরিচালক মো. হোসেন বলেন, এগুলো ফোনে আলোচনা করার বিষয় নয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর থেকে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, অধিদফতর ইতিমধ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছে এবং কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ