শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


সহিহ দীন প্রচারের স্বার্থেই কওমির স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে: মাওলানা রেজাউল হক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খ মাওলানা রেজাউল হক। লন্ডন প্রবাসী একজন দরদি ও পরিশ্রমী আলেম। জামিয়া ইসলামিয়া বার্মিংহামের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। লন্ডনে দীন প্রচারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানারকম সেবামূলক কাজ করছেন। দেশের অনেক মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়ন হয়েছে তার হাতে। মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ভাবেন সব সময়। সম্প্রতি বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিয়ে লন্ডনের আলেমরা কী ভাবছেন সেটি জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে শায়খ মাওলানা রেজাউল হকের সঙ্গে কথা বলেছেন রোকন রাইয়ান

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদরাসার দাওরা সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে প্রবাস থেকে বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

আমরা অত্যান্ত আনন্দিত। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকার স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছেন এটা অবশ্যই ইতিবাচক। কওমি স্বীকৃতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাথে শায়খুল হাদীস রহ. এর করা চু্ক্তির দ্বিতীয়টি বাস্তবায়িত হলো। এর মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ কওমি শিক্ষার্থী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পাবে।

অনেকে এই স্বীকৃতিকে বিকৃতি বলছে আপনার বক্তব্য কী?

আমি বিকৃতি বলবো না, মূল্যায়ন করেছে বলবো। কেননা দারুল উলুম দেওবন্দের নীতিমালা ও উসুল ঠিক রেখে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়নি। বোর্ড পরিচালনা, সনদ দেয়া, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ, সিলেবাস প্রণয়ন সব কিছুই ওলামায়ে কেরামের হাতে থাকছে ‍সুতরাং বিকৃতি হবে না ইনশাআল্লাহ।

পরবর্তীতে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে কি মনে হয়?

এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা মুশকিল। তবে সরকার চাইলে যে কোনো সময় হস্তক্ষেপ করতে পার। সেটা চাইলে স্বীকৃতি না দিলেও কেননা সরকার দেশের সম্পূর্ণ ভুখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। তাই যদি কখনো সরকারি হস্তক্ষেপ আসে সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পাকিস্তানেও আমাদের মতো দাওরা হাদীসকে আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের আমলে। এরপর পারভেজ মোশাররফ যখন ক্ষমতায় আসে তখন একটি আইন করা হয় বিএ পাস ছাড়া পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া যাবে না। পাকিস্তানের আলেমগণ তখন আল্লামা সলিমুল্লাহ খান রহ. এর নেতৃত্বে আইনি লড়াই এবং রাজপথে লড়াই চালিয়ে আলেমদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলাদেশেও যদি কখনো এমন পরিস্থিতি হয় তবে ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মোট কথা স্বীকৃতির এই ঘোষণাকে আইনে পরিণত করে সংসদে পাস করা এবং ভবিষ্যতে এর মান ধরে রাথতে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

অনেকের ধারণা সবকটি জামাতের স্বীকৃতি হলে ভালো হতো, আপনি কী মনে করেন?

আমি মনে করি সব জামাতের থাকা উচিত নয় কেননা তখন কওমি মাদরাসা তার স্বকীয়তা হারিয়ে আলিয়ার মতো হয়ে যাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে কওমি মাদরাসার উদ্দেশ্য কী। যোগ্য আলেম তৈরি করে দীনের সহিহ কথা প্রচার ও প্রসারেরর স্বার্থে কওমি স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে। কিন্তু সব জামাতের সনদের স্বীকৃতি হলে কওমি মাদরাসার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। সবাই তখন সনদমুখি হয়ে যাবে। সুতরাং আলেমদের এ ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।

বর্তমান বিশ্বের রাজনীতি ক্রমেই ডানদিকে মোড় নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান কিংবা ভারতের দিকে তাকালেই দেখবেন ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের সঙ্গে নিয়েই তারা সরকার গঠন করছে। সেদিক থেকে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে মানুষের মন জয় করা যদি হয় আলেমদের সাথে সখ্যতার উদ্দেশ্য তাহলে বলবো দেরিতে হলেও সরকারের বোধোদয় হয়েছে

অনেকের মতে, কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার আল্লামা আহমদ শফী, হেফাজত এবং কওমি আলেমদের কাছে টানতে পেরেছে। এটা তাদের রাজনৈতিক সাফল্যও বলা যায় আপনার মূল্যায়ন কী?

তা অবশ্য ঠিক যে, স্বীকৃতির ফলে সরকারে প্রতি কওমি আলেমদের মন অনেকাংশেই দূর্বল হয়েছে। তবে কাছে টানার ব্যাপারে আমার কিছু কথা আছে। আলেমদের সাথে ১১ এপ্রিলের বৈঠকে প্রধামন্ত্রীকে খুব ইমোশনাল দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘনঘন শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর সান্যিধ্যে যেতেন। আবার রাজনৈতিকভাবে সীমান্ত প্রদেশের মুফতি মাহমুদ সাহেবের সাথেও তার ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এতো সব বুজুর্গ আলমকে এর আগে কখনো একত্রে পাননি, একজন মহিলা হিসেবে আবেগ প্রবন হতেই পারেন।

আবার এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কেননা বর্তমান বিশ্বের রাজনীতি ক্রমেই ডানদিকে মোড় নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান কিংবা ভারতের দিকে তাকালেই দেখবেন ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের সঙ্গে নিয়েই তারা সরকার গঠন করছে। সেদিক থেকে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে মানুষের মন জয় করা যদি হয় আলেমদের সাথে সখ্যতার উদ্দেশ্য তাহলে বলবো দেরিতে হলেও সরকারের বোধোদয় হয়েছে। তবে নীতি যদি হয় ধরি মাছ না ছুঁই পানি তাহলে হবে না। সরকারের এখনো অনেক কাজ বাকী আছে। এক্ষেত্রে বলবো জরুরি ভিত্তিতে শায়খুল হাদীস রহ. এর সাথে করা চুক্তির প্রথমটি অর্থাৎ আল্লাহ ও রাসূল স. কে নিয়ে কটুক্তি ও কুৎসাকারীদের বিরুদ্ধে আইন করতে হবে। জাতীয় ঈদগাহ থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুই লক্ষাধিক মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনদের সরকারি বেতন ভাতার ব্যবস্থা করে যথায়থ মূল্যায়ন করতে হবে।

এই কাজ দুটি দ্রুত করতে পারলে সরকারের জন্যই মঙ্গল হবে। সর্বোপরি সরকারের ভবিষ্যৎ নীতি এবং কর্ম চিন্তাই বলে দেবে কওমি আলেমদের কতোটা কাছে টানতে পেরেছেন।

আমাদের সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক মোবারকবাদ।

আরো পড়ুন: ব্রিটেনে দীনের প্রসারে অবদান রাখছেন শায়খ মাওলানা রেজাউল হক

ইসলামি আন্দোলন দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত: মাওলানা রেজাউল হক

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ