মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ঝড়-তুফান ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে নবীজির (স.) আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শিহাব আহমাদ সবুজ 
বালাচর নাছিরিয়া ফাজিল মাদরাসা,উলিপুর,কুড়িগ্রাম।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে ঝড়-তুফানসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা যায়। অনেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখলেই অভিশাপ মনে করে। কিন্তু এমনটি মনে করা অজ্ঞতার পরিচয়। কেননা, দুর্যোগ অভিশাপ হতে পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই অভিশাপ নয় কখনো কখনো মঙ্গলময়ও হতে পারে।

আম্মাজান হযরত আয়শা (রাযিঃ) বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কালে যখন আকাশে মেঘ,ঝড় ইত্যাদির আলামত দেখা যেত তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় অস্থিরতার প্রভাব প্রকাশ পেতো। চেহারা মোবারক বিবর্ণ হয়ে যেতো এবং ভয়ে কখনো ঘরের ভিতর প্রবেশ করতেন কখনো বাহিরে আসতেন। আর আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই প্রার্থনা করতেন,ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার নিকট হতে এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু আছে ঐসব কিছুর মঙ্গল কামনা করতেছি এবং যার জন্য এই বাতাসকে পাঠানো হয়েছে ঐসব কিছুর মঙ্গল কামনা করতেছি। আর এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু আছে,যা উদ্দেশ্য করে পাঠানো হয়েছে ঐসব কিছুর অমঙ্গল হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেছি। আর যখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যেত তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় আনন্দ প্রকাশ পেতো।

আম্মাজান হযরত আয়শা (রাযিঃ) আরজ করতেন, হে আল্লাহ'র রাসূলাল্লাহ! সব লোকই যখন বৃষ্টির আলামত মনে করে মেঘ দেখে খুশি হয় কিন্তু আপনার মধ্যে তখন এক প্রকার বিচলিত ভাব দেখতে পাই। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, হে আয়শা! আমার নিকট এই মেঘমালার কি নিশ্চয়তা আছে যে, এর মধ্যে আযাব নাই। আদ সম্প্রদায়কে বাতাসের দ্বারাই আযাব দেওয়া হয়েছিলো। তারা মেঘ দেখে আনন্দ প্রকাশ করতো যে, এই মেঘমালা হতে আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করা হবে। অথচ ঐ মেঘমালার মধ্যে আযাব ছিল।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কালামে পাকে বলেন--'আদ সম্প্রদায় এই মেঘমালাকে নিজেদের বস্তির দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তখন তারা এই বলতে লাগল যে, এই মেঘমালা তো আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে । কিন্তু না এই মেঘমালা তো বৃষ্টি বর্ষণকারী নয় বরং এ তো সেই আযাব যার জন্য তোমরা তাড়াহুড়া করতে(অর্থাৎ তোমরা নবীকে বলতে যে,তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আমাদের উপর আযাব নিয়ে আস)। এ একটি ঘূর্ণিবার্তা যার মধ্যে যন্ত্রণাদায়ক আযাব নিহিত আছে, যা তার রবের হুকুমে প্রতিটি বস্তুকে ধ্বংস করে দিবে । সুতরাং তারা এই ঘূর্ণিবার্তার ফলে এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গেল যে, তাদের ঘর-বাড়ীর চিহ্ন ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না। বস্তুতঃ অপরাধীদেরকে আমি এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি। (আল কুরআন)

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআনে পাকের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,হে নবী! আপনি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় আমি কখনো আযাব বর্ষণ করবো না। আল্লাহ তায়ালার এই ওয়াদা থাকার পরও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোদাভীতির অবস্থা এই ছিল যে, ঝড়-তুফান বা ঘূর্ণিঝড়ের আলামত দেখতে পেলেই পূর্ববর্তী সম্প্রদায় সমূহের আযাবের কথা স্বরণ হয়ে যেত এবং পেরেশান হয়ে মসজিদে চলে যেতেন। সেই সঙ্গে আমাদের অবস্থার প্রতিও দৃষ্টিপাত করা উচিৎ যে, আমরা সর্বদা গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় বড় বিপদ, বালা-মুসিবত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন আযাব-গযব স্বচক্ষে দেখার পরও এর দ্বারা ভয়সূচক সতর্ক হই না। তাওবা-ইস্তেগফার ও নামাজে মশগুল হওয়ার পরিবর্তে নানা প্রকার অর্থহীন কাজে নিজেদেরকে লিপ্ত করে রাখি।

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ