শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কওমি মাদরাসায় যেসব বিষয় পড়ানো হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী
নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক আল আবরার

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান ঘোষণার পর থেকে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে কওমি মাদরাসা। বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন প্রশ্ন। সরকারি শিক্ষাক্রমের সাথে কওমি পাঠ্যক্রমের সামঞ্জস্য কতটুকু? কওমি মাদরাসার শিক্ষামাধ্যম কি ইত্যাদি।

বিশেষ করে আলিয়া মাদরাসায় পড়ুয়ারা তাদের পাঠ্যতালিকার সাথে কওমি পাঠ্যতালিকার সামঞ্জস্যতা জানতে কৌতূহলি। সাধারণ শিক্ষিতরা এই শিক্ষার মান ও স্তর বিন্যাস সম্পর্কে অবগত হতে আগ্রহী।

কওমি মাদরাসায় যে পাঠ্যক্রম অনুসরণ হয় তা হলো এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন পাঠ্যক্রম। যে পাঠ্যক্রমের ওপর পুরো উপমহাদেশে ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি বললেও অত্যুক্তি হবে না।

যাকে বলা হয় দরসে নেজামি। অর্থাৎ নেজামি পাঠ্যক্রম। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে মুসলিম শাসকদের আমলে পরিচালিত মাদরাসাগুলোতে এই পাঠ্যক্রমই প্রচলিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে হাজার হাজার মাদরাসা ধ্বংস হওয়ার পর এখানকার উলামায়ে কেরাম দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া একমাত্র জনগণের দান-সদকায় পরিচালিত এই কওমি মাদরাসার ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। যা ছিল ১৮৬৬ সালের কথা। তাতেও প্রাচীন এই নেজামি পাঠ্যক্রমকেই বেছে নেওয়া হয়। কারণ এই পাঠ্যক্রম ছিল শত শত বছরের পরীক্ষিত। মুসলিম দুনিয়ার একটি বিশাল ঐতিহ্য এই পাঠ্যক্রমকে ঘিরেই।

কওমি দেওবন্দী মাদরাসার উদ্দেশ্যই হলো সঠিক ইসলামি শিক্ষার প্রচার-প্রসার এবং দক্ষ ইসলামি ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করা। প্রাচীনকাল থেকে যেসব বড় বড় আলেমে দ্বীন ও সেরা ইসলামি ব্যক্তিত্বের ইতিহাস পাওয়া যায় তাদের প্রায়ই এই নেজামি পাঠ্যক্রম অনুসরণেই সৃষ্ট। সে কারণেই মূলত দারুল উলূম দেওবন্দ এই পাঠ্যক্রমকে নির্বাচন করে। তবে যুগ চাহিদা অনুযায়ী তাতে ক্রমবিবর্তনও আসে।

দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পর থেকেও বিশ্বনন্দিত যেসব সেরা ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও আলেম-উলামার কথা শোনা যায় তাদের প্রায় ৮৫ ভাগ এই পাঠ্যক্রম অনুসরণেই সৃষ্টি হয়েছে। এর সফলতা ও উৎকর্ষতার বাস্তবতাই হলো উপমহাদেশে আজ লাখো কওমি মাদরাসা। আবার এ অঞ্চলের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে প্রায় মুসলমানই এসব মাদরাসার সাথে যেকোনোভাবে জড়িত। সাধারণ শিক্ষায় পড়ুয়ারাও তাদের প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষাগুলো অর্জন করে এসব মাদরাসা থেকে।

আলিয়া মাদরাসায়ও প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নেজামি এই পাঠ্যতালিকাই অনুসরণ করা হয়। তবে তাতে কাটছাঁট করা হয় তুলনামূলক বেশি। এতে কুরআন-হাদিসের পাশাপাশি অন্যান্য পার্থিব বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সে কারণে যদিও এতে শিক্ষার মান উন্নত; কিন্তু শুধু ইসলামি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণমানুষের আস্থা ও ভক্তি অর্জন করতে তারা ব্যর্থই হয়েছে। এমনকি তথাকার ছাত্রদের বেশির ভাগই সরকারি সনদ গ্রহণ করার উদ্দেশ্য থাকায় আলিম বা ফাজিল পাস করার পর সাধারণ শিক্ষার দিকেই ধাবিত হয়ে যায়।

তবে শিক্ষার মান বিবেচনায় এই বাস্তবতাটুকুই যথেষ্ট যে, কওমি মাদরাসায় পড়ুয়া অনেকে আলিয়ায় পরীক্ষা দিয়ে ভালো মানের পাস করে স্বয়ং আলিয়া মাদরাসার বিভিন্ন পোস্টে চাকরিরত আছেন। ভালো মানের চাকরিই করছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আলিয়া মাদরাসায় আগাগোড়া লেখাপড়া শেষ করে কেউ কওমি মাদরাসায় চাকরিরত নেই।

কওমি শিক্ষা আছে বলেই আমরা এখনও খাঁটি মুসলমান: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কওমি মাদরাসা ও আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যতালিকার ধারা এক হলেও চিন্তাচেতনায় বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। কওমি মাদরাসার শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবিষয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আবার কিতাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কওমি মাদরাসার পাঠতালিকা প্রণয়নের সময় যেমন আপন বিষয়ের সেরা কিতাবটি নির্বাচন করা হয়, তেমনি লেখকের তাকওয়া-পরহেজগারীর প্রতিও সমান দৃষ্টি রাখা হয়।

কারণ ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো, কোনো কিছু শিখতে হলে দেখেশুনে উস্তাদ নির্বাচন করা। তাই কওমি মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে এমন কোনো লেখকের কিতাব অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, যে লেখকের দ্বীনদারী-তাকওয়া-পরহেজগারীতে সামান্যও বিতর্ক থাকে। সে কারণে তাঁরা যে কিতাব পড়াবেন লেখকের মূল কিতাবটিই পড়াতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আলিয়া মাদরাসায় বিভিন্ন সংকলক কর্তৃক একটি কিতাবকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে পড়ানো হয়। যার কারণে মূল কিতাব থেকে ছাত্ররা অনেক দূরে থাকে। অনেক সময় পুরো কিতাব শেষ করার পরও ছাত্ররা মূল কিতাবটির দেখা পায় না।

যাহোক, এরূপ বেশকিছু কারণে আলিয়া ও কওমি শিক্ষায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। একই রূপ চিন্তা-চেতনায়ও। তবে উভয় ধারার মধ্যে সহিহ ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে গণমানুষের কাছে কওমি মাদরাসার গ্রহণযোগ্যতাই বেশি। আবর সরকারি সনদের ক্ষেত্রে আলিয়া মাদরাসার গ্রহণযোগ্যতা অগ্রগণ্য।

পাঠ্যতালিকার দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলেও দেখা যাবে আলিয়া আর কওমির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। তবে উপরোল্লিখিত কিছু বৈশিষ্ট্য কওমি পাঠ্যতালিকায় বেশি। এর সাথে কওমি মাদরাসার পদ্ধতিটাই এমন যে, যা পড়ানো হবে তা বাস্তবে অনুশীলনও করা হয়। ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেলে রেখে উস্তাদদের তত্ত্বাবধানে তাকওয়া-পরহেজগারীর ধারাবাহিক অনুশীলন করা হয় এতে। কিন্তু আলিয়াতে সে নিয়মই রাখা হয়নি।

কওমি মাদরাসার শিক্ষাক্রমটি মূলত ১৬ বছরের। শিশু শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত অত্যন্ত সুন্দর এবং অনন্য অবকাঠামোতেই এই শিক্ষাক্রম প্রণীত। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাত্রদের বয়স বিবেচনায় কয়েক বছর কমিয়েও পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে, যা একান্তই তাদের স্বতন্ত্র বিষয়। তা কওমি মাদরাসার মূল পাঠ্যক্রম নয়। যেমন কেউ হাফেজে কুরআনের কথা বিবেচনা করে ইবতেদায়ী পাঠ্যক্রমে দুই বছর কমিয়ে মোট ১৪ বছরের পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে।

আবার কেউ সাধারণ শিক্ষিতদের কথা মাথায় রেখে সেটাকে ১২ বছরে এনেছে। এগুলো ভিন্নভাবে পড়ানো হয়। কিন্তু মূল পাঠ্যক্রম ১৬ বছরের। এতে কোনো সংগত কারণ ছাড়া কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। বরং নিয়মতান্ত্রিকভাবে ১৬ বছর লেখাপড়া করেই একজন ছাত্রকে দাওরায়ে হাদিস পাস করতে হয়। সুতরাং দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেওয়ার মধ্যে স্তর বিন্যাস এবং শিক্ষার বয়সের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দুর্বলতা কওমি মাদরাসাগুলোর আছে বলে মনে হয় না।

নিচে কওমি মাদরাসার পাঠ্যতালিকার সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হলো। যাতে শিশু শ্রেণি থেকে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক তালিকা দেখানো হয়েছে।

পাঠ্যতালিকা
শিশু শ্রেণি
১। দ্বীনিয়াত ও সংস্কৃতি ২। আরবি অক্ষর পরিচয় ৩। বাংলা ৪। গণিত ৫। ইংরেজি।

প্রথম শ্রেণী (প্রাথমিক ১)
১। দ্বীনিয়াত ২। ইসলামি তাহযিব। ৩। বাংলা ৪। গণিত ৫। আরবি ৬। ইংরেজি।

দ্বিতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক ২)
১। দ্বীনিয়াত ও তাজবিদ ২। ইসলামি ফিকহ ও তাহযিব। ৩। বাংলা ৪। গণিত ৫। ভূগোল ও সমাজ ৬। উর্দু ৭। আরবি ৮। ইংরেজি।

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক ৩)
১। দ্বীনিয়াত ও তাজবিদ ২। ইসলামি ফিকহ ও তাহযীব ৩। বাংলা ও ব্যাকরণ ৪। গণিত ৫। ইতিহাস ৬। ভূগোল ও সমাজ ৭। আরবি ৮। উর্দু ৯। ইংরেজি ও গ্রামার।

চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক ৪)
১। দ্বীনিয়াত ও তাজবিদ ২। ফিকহ ও তাহযিব ৩। বাংলা ও ব্যাকরণ ৪। গণিত ৫। ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজ ৬। আরবি ৭। উর্দু ও কায়েদা ৮। ফার্সি ৯। ইংরেজি ও গ্রামার।

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক ৫)
১। দ্বীনিয়াত ও তাজবিদ ২। ফিকহ ও তাহযিব ৩। বাংলা ও ব্যাকরণ ৪। গণিত ৫। ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজ। ৬। আরবি ৭। উর্দু ও কাওয়ায়েদ ৮। ফার্সি ও কাওয়ায়েদ ৯। ইংরেজি ও গ্রামার।

ষষ্ঠ শ্রেণি (নিম্ন মাধ্যমিক ১)
১। আরবি ভাষা ও রচনা। ২। আরবি ব্যাকরণ ৩। ফিকহ ৪। বাংলা ও ব্যাকরণ ৫। সমাজ, ইতিহাস ও ভূগোল। ৬। গণিত/তাজবিদ, মশক ও মুখস্থ ৭। ফার্সি ও কাওয়ায়েদ ৮। উর্দু সাহিত্য ও ব্যাকরণ ৯। ইংরেজি ও গ্রামার ১০। বিজ্ঞান।

সপ্তম শ্রেণি (নিম্ন মাধ্যমিক ২)
১। আরবি ভাষা ও রচনা ২। আরবি ব্যাকরণ (নাহব) ৩। আরবি ব্যাকরণ (সরফ) ৪। ফিকহ ৫। বাংলা ও ব্যাকরণ ৬। ইতিহাস ও ভূগোল ৭। ফার্সি সাহিত্য ও ব্যাকরণ ৮। তাজবিদ মশক ও মুখস্থ ৯। ইংরেজি ও গ্রামার ১০। গণিত ১১। বিজ্ঞান।

অষ্টম শ্রেণি (নিম্ন মাধ্যমিক ৩)
১। আরবি ভাষা ও রচনা ২। আরবি ব্যাকরণ (নাহব) ৩। আরবি ব্যাকরণ (সরফ) ৪। ফিকহ ৫। বাংলা ও ব্যাকরণ ৬। ইতিহাস ও ভূগোল ৭। ফার্সি সাহিত্য ও ব্যাকরণ ৮। তাজবিদ মশক ও মুখস্থ ৯। ইংরেজি ও গ্রামার ১০। গণিত ১১। বিজ্ঞান।

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ১)
১। আরবি সাহিত্য ও রচনা ২। নাহব (ব্যাকরণ) ৩। ফিকহ (ইসলামি আইন শাস্ত্র) ৪। উসূলুল ফিকহ (ইসলামি আইনের নীতি শাস্ত্র) ৫। ইতিহাস ৬। আখলাক (নৈতিক চরিত্র) ৭। মানতিক (তর্ক শাস্ত্র) ৮। বাংলা সাহিত্য ৯। বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা। ১০। গণিত ও জ্যামিতি ১১। ইংরেজি ও গ্রামার।

দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২)
১। আরবি সাহিত্য ও ইনশা ২। নাহব (ব্যাকরণ) ৩। ফিকহ (ইসলামি আইন শাস্ত্র) ৪। উসূলুল ফিকহ (ইসলামি আইন শাস্ত্রের নীতি শাস্ত্র) ৫। তাফসিরুল কোরআন ৬। ইতিহাস ৭। বালাগাত (ভাষার অলংকার শাস্ত্র) ৮। মানতিক (তর্ক শাস্ত্র) ৯। ইতিহাস।

একাদশ শ্রেণি (উচ্চ মাধ্যমিক ১)
১। আরবি সাহিত্য ২। ইনশা তথা রচনা ৩। বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র) ৪। ফিকহ (আইন শাস্ত্র) ৫। উসূলুল ফিকহ (ইসলামি আইনের নীতি শাস্ত্র) ৬। তাফসির ৭। ইতিহাস ৮। ইলমুল ফারাইজ (উত্তরাধিকার জ্ঞানের হিসাব-নিকাশ) ৯। মানতিক (তর্ক শাস্ত্র)।

দ্বাদশ বর্ষ (উচ্চ মাধ্যমিক ২)
১। আরবি সাহিত্য (প্রাচীন ও আধুনিক) ২। ইনশা (রচনা) ৩। আল আরূয (আরবি কবিতা শাস্ত্র) ৪। বালাগাত (অলংকার শাস্ত্র) ৫। তাফসিরুল কোরআন ৬। ফিকহ (আইন শাস্ত্র) ৭। উসূলুল ফিকহ (ইসলামি আইনের নীতি শাস্ত্র) ৮। মানতিক (তর্ক শাস্ত্র)।

ত্রয়োদশ শ্রেণি (স্নাতক ১)
১। তাফসীর ২। ফিকহ ৩। উসূলুল ফিকহ ৪। মানতিক (তর্ক শাস্ত্র) ৫। উসূলুত তাফসির ৬। আরবি সাহিত্য ৭। ইসলামি অর্থনীতি ৮। ইলমে হিকমাত (দর্শন শাস্ত্র) ৯। ইলমুল কালাম (আকিদাবিষয়ক শাস্ত্রজ্ঞান)।

চতুর্দশ শ্রেণি (স্নতক ২)
১। হাদিস ২। হাদিস ৩। তাফসির ৪। তাফসির ৫। ফিকহ ৬। ফিকহ (ফিকহুল মু’আমালাত) ৭। উসূলুততাফসির (তাফসিরুল কোরআনের নীতি শাস্ত্র) ৮। উলূমুল হাদিস (হাদিসে রাসূল সা.-এর নীতি শাস্ত্র) ৯। ইলমুল কালাম (আকিদা) ১০। ইসলামি অর্থনীতি।

পঞ্চদশ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস (স্নাতকোত্তর)
এই বর্ষে শুধু হাদীস পড়ানো হয়। সিহাহে সিত্তা তথা হাদিসের ছয় সহিহ কিতাব এর সাথে তাহাবি শরিফ, মুআত্তা মালেক ও মুআত্তা মুহাম্মদ। এসব নিয়ে ১০ বিষয়। এর পাশাপাশি তাজবিদও এক বিষয়। উল্লিখিত হাদিসের কিতাবগুলো পরিপূর্ণই এই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

এই পাঠ্যক্রম সম্পন্ন করার পর অনেকে আরো উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে। তাদের জন্য রয়েছে বিভাগভিত্তিক উচ্চাশিক্ষার ব্যবস্থা। যেমন- ইসলামি আইন শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য ইফতা বিভাগ (তাখাসসুস ফিল ফিকহিল ইসলামী)। হাদিস ও হাদিসের নীতি শাস্ত্রের জন্য হাদিস বিভাগ (তাখাসসুস ফি উলূমিল হাদিস)। তাফসির ও তাফসিরের নীতি শাস্ত্রের জন্য তাফসির বিভাগ (তাখাসসুস ফি উলূমিল কুরআন)। তাজবিদ ও তাজবিদের নীতি শাস্ত্রের জন্য তাজবিদ বিভাগ (তাখাসসুস ফী তাজবীদিল কুরআন)। ইসলামি অর্থনীতির জন্য ইকতিসাদ বিভাগ  (তাখাসসুস ফি ফিকহিল মু’আমালাত ওয়াল ইকতিসাদিল ইসলামি)। আরবি সাহিত্যের জন্য কিসমুল আদব (তাখাসসুস ফি আদবিল আরবি)। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের জন্য বাংলা সাহিত্য ও ইসলামী গবেষণা বিভাগ। অনেক জায়গায় আলাদা সাংবাদিকতা বিভাগও রয়েছে।

এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আধুনিক শিক্ষার জন্য বহু মাদরাসায় এখন কম্পিউটার বিভাগ চালু রয়েছে। কিছু কিছু মাদরাসায় কারিগরি প্রশিক্ষণ বিভাগও রয়েছে। প্রকাশনা বিভাগও আছে অনেক মাদরাসায়। একসময় বিভিন্ন মাদরাসায় হস্তশিল্প বিভাগ নামে স্বতন্ত্র বিভাগ ছিল; কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ও যুগ চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

যারা কওমি মাদরাসা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করছেন, তাদের কওমি মাদরাসা সম্পর্কে আরো স্টাডি করা উচিত। খামোখা প্রশ্ন তুলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করাতে কোনো লাভ নেই। ইসলামি শিক্ষায় পারদর্শী ও প্রাজ্ঞ হওয়ার জন্য কওমি মাদরাসার এই পাঠ্যতালিকা থেকে উন্নত পাঠ্যতালিকা কোথাও নেই। যার কারণে সুদূর আফ্রিকা এবং ইউরোপের মুসলমানগণও সম্প্রতি এই পাঠ্যতালিকারই অনুসরণ করছেন। এমনকি বিভিন্ন মুসলিম দেশের সরকারও এই পাঠ্যতালিকা ফলাও করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বলে খবরে প্রকাশ।

পৌনে ২০০ বছরে দারুল উলূম দেওবন্দের যে কীর্তি নিয়ে সারা দুনিয়া আজ ঈর্ষান্বিত, তা এই পাঠ্যতালিকারই অবদান। আরো মজার বিষয় হলো, আধুনিক চিন্তাধারার বহু ইসলামি ব্যক্তিত্ব কওমি মাদরাসার এই পাঠ্যতালিকায় কিছু কাটছাঁট করে নতুন এবং আধুনিক আঙ্গিকেও পাঠ্যতালিকা প্রণয়ন করে দীর্ঘদিন পরীক্ষা করে দেখেছেন। কিন্তু কোনোই উপকার বয়ে আনেনি। ওসব পাঠ্যতালিকায় ছাত্রদের মেধার সঠিক বিকাশ হয়েছে-এমন প্রমাণও মেলে না।

কওসি মাদরাসার শিক্ষা মাধ্যম নিয়েও অনেকের প্রশ্ন। কওমি মাদরাসার শিক্ষা মাধ্যম হলো বাংলা। কিতাব আরবি থাকলেও তা বাংলাতেই পড়ানো হয়। ফার্সিতে থাকলেও তা বাংলাতে পড়ানো হয়। আবার ছাত্ররা যদি খুব মেধাবী হয় তবে সরাসরি আরবি-উর্দুতেও পড়ানো হয়। সেটা ছাত্রদের মেধা ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়ে থাকে।

কিতাব পাঠ দিতে গিয়ে একজন উস্তাদকে অনেক ভাষার ব্যাখ্যাগ্রন্থের ওপর নজর রাখতে হয়। যেমন ধরুন বুখারি শরিফ। এটির পাঠদান করতে হলে একজন উস্তাদকে আরবি শরাহ, উর্দু শরাহ, বাংলা শরাহ-এমনকি অনেক সময় ফার্সি শরাহ তথা ব্যাখ্যাগ্রন্থ মোতালাআ করতে হয়। সব কিতাবের বেলায় একই অবস্থা ঘটে। যার কারণে কওমি মাদরাসায় পড়ুয়ারা আরবি, বাংলা, উর্দু, ফার্সি-সব ভাষাতেই কিছু না কিছু জ্ঞান অর্জন করে থাকে। কারণ আমাদের দেশ পর্যন্ত ইসলাসি শিক্ষা পৌঁছতে কয়েক ভাষায় তা ভাষান্তরিত হয়ে এসেছে। মূল পাঠ আরবি।

উপমহাদেশে এর প্রচার ঘটেছিল সর্বপ্রথম ফার্সি ভাষায় ভাষান্তর হয়ে। অতঃপর উর্দু ভাষায়, পরে বাংলা ভাষায়। যার কারণে প্রত্যেক ভাষাতেই অনেক কিছু এমন রয়ে গেছে, যা পুরোপুরি বাংলাতে ভাষান্তর হয়নি, যা সম্ভবও নয়। যেমন-সাধারণ শিক্ষায় ইংরেজি। ইংরেজির সব কিছু বাংলায় রূপান্তর হয়ে গেছে, এমন কেউ বলতে পারবে না। বরং তা সম্ভবও নয়। তেমনি আরবীর বিষয়টিও। দারুল উলূম দেওবন্দ এসব মাদরাসার মূল সূতিকাগার। দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে যেসব প্রকাশনী প্রচারিত হয়, তা বেশির ভাগ উর্দুতেই হয়ে থাকে। যার কারণে বাধ্য হয়েই উলামায়ে কেরামকে উর্দু ভাষাতেও কিছু না কিছু দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

সুতরাং এককথায় বলা যায়, কওমি মাদরাসার শিক্ষার মাধ্যম হলো আরবি ও বাংলা। প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনার্থে তাদের ফার্সি ও উর্দু ভাষাও আয়ত্ত করতে হয়। তদুপরি যে পর্যন্ত ফার্সি ও উর্দু শেখানো হয়, সে পর্যন্ত ইংরেজিও শেখানো হয়।

সুতরাং যারা কওমি মাদরাসার পাঠ্যতালিকা এবং শিক্ষার মান নিয়ে কথা বলবেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে বিস্তারিত জেনে এবং বিশ্লেষণ করে তারপর কথা বলুন। তাহলে উভয়ের ফায়দা হবে।

কওমি আলেমদের হীনম্মন্যতায় ভোগার দিন শেষ: আল্লামা আহমদ শফী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ