শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


শুধু প্রচার পেতেই সনু নিগমের এতো কাণ্ড!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাকীর এহসানুল্লাহ : মসজিদের মাইকে আজানের শব্দে ঘুম ভাঙার আপত্তি তোলা ভারতীয় গায়ক সনু নিগমের বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার ভেতরে মসজিদে আজান দেয়ার জন্য কোনো মাইকই নেই! ফজরের আজানের শব্দ শোনা যায় কীনা তা পরখ করার জন্য সাংবাদিকরা বুধবার খুব ভোরে ওই গায়কের বাড়ির সামনে উপস্থিত হলে বিষয়টি তারা জানতে পারেন।

গতকাল বিবিসির সাংবাদিক ভোর ৫টা নাগাদ সনুর বাড়ির সামনে উপস্থিত হন। তার আগেই সেখানে অন্য সাংবাদিকরা অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় সেখানে অন্ধকার ছিল। সাধারণভাবে ব্যস্ত থাকা মুম্বাইয়ের সড়ক সেসময় শুনশান হয়ে ছিল। সাংবাদিকরা দেখেন সনু নিগমের বাড়ির আলো সেসময় সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তার বাড়ির বাইরে পুলিশ গাড়ি মোতায়েন ছিল। দু’জন পুলিশকর্মী গাড়ির বাইরে টহল দিচ্ছিলেন। সব সাংবাদিক শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষায় ছিলেন, কোথা থেকে কোনো আজানের শব্দ ভেসে আসে কী না তা জানার জন্য। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে কেউই কোনো আজানের শব্দ শুনতে পাননি!

ধীর ধীরে সমস্ত সাংবাদিক সেখান থেকে চলে গেলেও বিবিসির সাংবাদিক সেখানে আরো কমপক্ষে আধ ঘণ্টা ধরে আজান শোনার আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তিনি কেবল সেখান থেকে যাতায়াত করা কিছু যানবাহনের শব্দই শুনতে পেয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই এলাকায় তিনটি মসজিদ আছে কিন্তু সবগুলোই মসজিদ সনু নিগমের বাড়ি থেকে ৬০০ মিটার দূরে। তার বাসা থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরে মাদ্রাসা তালিমুল কুরআন ট্রাস্ট মসজিদ আছে ওই মসজিদের আজান ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে হয়। 'সনুর উদ্দেশ্য স্রেফ প্রচার পাওয়া' বলে অনেকে মন্তব্য করেন।

মৌলভিকে বেকায়দায় ফেলতে টাক হলেন সোনু নিগাম

আজানের শব্দে ঘুম ভাঙায় বিরক্ত সনু নিগম!

মসজিদের ট্রাস্টি মেহবুব খান বিবিসি সাংবাদিককে বলেন, ‘সনু নিগম ২/৪ বছর আগে এখানে বাস করতে এসেছেন। কিন্তু আমরা এখানে ৩০/৩৫ বছর ধরে আছি। এর আগে কেউ আজান নিয়ে সমস্যায় পড়েননি। সনু নিগম যেখানে থাকেন সেখানে তো আমাদের আজানের শব্দ পৌঁছায়ই না।’

সনু নিগমের মন্তব্যে মর্মাহত মেহবুব খান বলেন, ‘লোকেরা আমাদের বলে আজানে আমরা উপকৃত হই। মানুষজন সময়মত উঠে কাজকর্মে যেতে পারে। কিন্তু সনু নিগম স্রেফ প্রচার পাওয়ার জন্য পরিবেশ খারাপ করছেন।’ 'কত লোককে কষ্ট দিয়েছেন, সনু তা ভুলে গেছেন' সনু নিগমের বাড়ির ডানদিকে মাদ্রাসাতুল সালাহাই ট্রাস্টে কাজ করা হাবিব বলেন, তাদের মসজিদে লাউডস্পিকারই ব্যবহার করা হয় না। মাদ্রাসা এ নাব্বেয়াহর ট্রাস্টি গুলাম জি বলেন, ‘সনু নিগম প্রথমে কেবল এক হাজার টাকার জন্য জাগরণে রাতভর গান করতেন। উনি ভুলে গেছেন যে কত লোকের তিনি কষ্ট দিয়েছেন। কেবল প্রচার পাওয়ার জন্যই উনি এসব করছেন।

এখন সব নয়া নয়া গায়ক এসে যাওয়ায় তিনি এখন গাইতে পারছেন না।’ সনু নিগমের বাড়ির কাছে ‘ত্রিশূল’ নামক ভবনে বাসকারী লতা সচদেব বলেন, গোটা দিনে আজানই শুনতে পাওয়া যায় না। অন্য ভবনের মহিলা বাসিন্দা কিরণ ভাসান বলেন, আজ পর্যন্ত তিনি সকালের (ফজরের) আজান শুনতে পাননি। 'বাসা বদল করে সনুর অন্যত্র যাওয়া উচিত' গায়ক মীকা সিং বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, লাউডস্পিকার পরিবর্তনের বদলে আপনার নিজের বাসা বদল করে অন্য কোনো জায়গায় চলে যাওয়া উচিত।

গুরুদোয়ারা, মন্দির, মসজিদ এবং গির্জা কেবল প্রার্থনা করার স্থান নয়। মানুষের সাহায্য করারও মাধ্যম। যে জিনিস বহু বছর ধরে চলে আসছে তা আচমকা বন্ধ করে দেয়া ভালো কথা নয়। কেউ তো আপনাকে মদ পান করতে বা পার্টি দিতে বারণ করছে না। আমরা দুবাইতে যখন শো করতে যাই তখন এ নিয়ে আপত্তি ওঠে না, তাহলে ভারতে আপত্তি কেন?’ সনুর বিরুদ্ধে মামলা এদিকে, আজান সংক্রান্ত ইস্যুতে ভারতের পানিপথের একটি আদালত সনু নিগমের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪, ২৯৫, ২৯৫ এ, ২৯৬, ৫০০ এবং ৫০১ ধরায় মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।

আজান ইস্যুতে আইনজীবী মোমিন মালিক পানিপথের সিজেএম আদালতে বুধবার আবেদন জানালে ওই নির্দেশ দেয়া হয়। আগামী ২ মে ওই মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

-এআরকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ