১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ। সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালকে খুব কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করেন তারই ভাইপো। ওই সময় তার পাশেই ছিলেন সৌদি আরবের সে সময়ের তেলমন্ত্রী শেখ আহমেদ জাকি ইয়ামানি। তার কাছে থেকে ওই দিনের ঘটনা শুনে বর্ণনা করেছেন তার মেয়ে লেখক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মেই ইয়ামানি।
তার বর্ণনা মতে, সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় কুয়েতের তেল মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল এসেছিল। তাদের রাজপ্রাসাদে গিয়ে বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল। আমার বাবা ছিলেন তেলমন্ত্রী। তাই তিনি সেদিন বাদশাহ ফয়সালকে এ বিষয়ে আগে থেকে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন।
আর যে যুবরাজ এই কাজ করেছিল, বাদশাহর ভাইপো ছিলেন তিনি, ভাগ্যের পরিহাস হচ্ছে, তার নামও ছিল ফয়সাল। কুয়েতের তেলমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল বাদশাহর সঙ্গে দেখা করতে আসছিল, সেই প্রতিনিধিদলের ভেতরে ঢুকে পড়ে এই ফয়সাল।
এরপর বাদশাহ ফয়সাল তার ভাইপোকে আলিঙ্গন করার জন্য দুই হাত বাড়িয়ে দিলেন। আর তখন তার ভাইপো পকেট থেকে একটা ছোট্ট পিস্তল বের করলেন। এরপর গুলি করছেন বাদশাহ ফয়সালকে। মাথা লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি। আমার বাবা তখন বাদশাহ ফয়সালের খুবই কাছে দাঁড়িয়ে।
ঘটনার পর বাদশাহ ফয়সালকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তার সঙ্গে ছিলেন শেখ ইয়ামানি। তিনি হাসপাতালে গেলেন। তারা বাদশাহ ফয়সালের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেন। এরপর সব কিছু যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রিয়াদের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেল, সব নিস্তব্ধ।
মেই ইয়ামানির বাবা শেখ ইয়ামানি পনের বছর ধরে বাদশাহ ফয়সালের তেল মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ঘটনার পর আরও ১১ বছর তিনি সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বাদশাহর সবচেয়ে বিশ্বস্ত মন্ত্রীদের একজন।
বাদশাহ ফয়সাল সৌদি আরবের রাজসিংহাসনে বসেন ১৯৬৪ সালে। ক্ষমতা নিয়েই তিনি সৌদি আরবে সংস্কার শুরু করেন। দেশের বিপুল তেল সম্পদ দেশের আধুনিকায়নের কাজে ব্যবহার করতে চাইলেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আধুনিক বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তনে উদ্যোগী হলেন তিনি। দেশের তেল নীতিতে আনলেন আমুল পরিবর্তন। সৌদি আরবকে তার বিপুল তেল সম্পদ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দিল। আরব বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবকে এক নতুন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এনে দিল এটি। কিন্তু বাদশাহ ফয়সালের এই সংস্কারের উদ্যোগকে খুব ভালো চোখে দেখেনি সৌদি সমাজের রক্ষণশীল অংশ। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের এই তেল সম্পদকে প্রথম একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সৌদি আরব।
একজন ভাইপোর হাতেই কেন বাদশাহ ফয়সালকে জীবন দিতে হয়েছিল, সেই কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। পরিষ্কার নয় সেসময়ের ঘটনাবলীর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের সম্পর্ক।
মেই ইয়ামানি বলেন, বাদশাহ ফয়সালকে কেন হত্যা করা হয়েছিল তার প্রকৃত কারণ আমরা জানি না। আমরা শুধু এটা জানি যে, বাদশাহকে যিনি হত্যা করেছিলেন, সেই ভাইপো ছিলেন মানসিক বিকারগ্রস্থ। তখন আমার বয়স ১৮ বছর। সূত্র: বিবিসি।
[ভোটের রাজনীতিতে কওমি স্বীকৃতির ধাক্কা!]
[প্রধানমন্ত্রী ‘মূর্তি পছন্দ করেন না’ বলে ঈমানের পরিচয় দিয়েছেন: প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান]
এসএস/