সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী নারী শিক্ষা ও সফলতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে হবে নারীদের এমনটাই তার ভাবনা। একজন গুগল লোকাল গাইডস হিসেবে তিনি গুগল ম্যাপে অবদান রেখে যাচ্ছেন। স্যান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত প্রথম লোকাল গাইডস সামিটে ৩৭ দেশ থেকে নির্বাচিত হওয়া ৭৫ জনের একজন ছিলেন সুমাইয়া জাফরিন।
কিছু দিন আগে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে গুগল লোকাল গাইডস সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীকে নিয়ে তাদের অফিসিয়াল সাইটে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী সারা বিশ্বের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। গুগল লোকাল গাইডস গুগলের একটি পরিসেবা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গুগল লোকাল গাইডসের সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইউটিউব ও লোকাল গাইডস কানেক্ট) বাংলাদেশের সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীর ছবি স্থান পায়। এ ছাড়া একজন সমাজকর্মী হিসেবে সমাজে যেসব নারী তার চেয়ে কম ভাগ্যবতী, বিশেষ করে ওইসব নারীকে তিনি সাহায্য করেন। তিনি নারীর স্বাধীনতা, সাম্য ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে হবে নারীদের এমনটাই তার ভাবনা। একজন গুগল লোকাল গাইডস হিসেবে তিনি গুগল ম্যাপে অবদান রেখে যাচ্ছেন। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে চান। শুরু থেকেই সুমাইয়া জাফরিন গুগল লোকাল গাইডসে কাজ শুরু করেন।
২০১৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত প্রথম লোকাল গাইডস সামিটের জন্য বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হন সুমাইয়া জাফরিন। উল্লেখ্য, এই সামিটে সারা বিশ্ব থেকে ৭৫ জন টপ লোকাল গাইডস নির্বাচন করা হয়। তিনি তাদের মধ্যে একজন হন। সুমাইয়া দিনাজপুর লোকাল গাইডসের মডারেটর ও ময়মনসিংহ লোকাল গাইডসের একজন কমিউনিটি মডারেটর। গুগল ম্যাপে ছবি, মানসম্মত রিভিও কন্ট্রিবিউশনে সবার চেয়ে এগিয়ে এই প্রতিভাবান নারী। তার কমিউনিটি ওয়ার্কগুলো যেমন বাংলাদেশে গুগল ম্যাপ উন্নয়নে কন্ট্রিবিউশন, বাংলাদেশে গুগল লোকাল গাইডসের মিট আপ আয়োজন করা, গুগল লোকাল গাইডস কানেক্ট (গুগল লোকাল গাইডসের অফিসিয়াল ফোরাম) এ নিয়মিত অবদান রাখা, সামাজিক কার্যক্রম, নারীর স্বাধীনতা, সমতা ও উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরি, নারীদের উদ্ভাবন ও নারী স্বাস্থ্য সচেতনার সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া ইত্যাদি। নারী দিবস উপলক্ষে গুগল লোকাল গাইডস সারা বিশ্ব থেকে সাতজন নারীকে নিয়ে তাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়। এর মধ্যে চারজনের কার্যক্রমগুলো নিয়ে আলাদাভাবে ফিচার করে ও গুগল লোকাল গাইডস কানেক্টে আর্টিকেল প্রকাশ করে। এই চারজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশের সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী।

সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরীর বাবা মো. জাকির হোসাইন চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন অনেকদিন। আর সুমাইয়ার মা আজমেরী জামান চৌধুরী গৃহিণী। সুমাইয়া জন্মগ্রহণ করেন দিনাজপুরের এক জমিদার পরিবারে। বাবার কাজের সুবাদে সপরিবারে সৌদি আরবে চলে যান মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। সেখান থেকে ‘এ’ লেভেল শেষ করে ফিরে আসেন দেশে। ভর্তি হন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে। মানুষের জন্য কিছু করায় বর্তমানে তার ধ্যানজ্ঞান। এডুকেশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন হিউম্যান এইড বাংলাদেশের হয়ে। হিউম্যান এইড বাংলাদেশের উদ্যোগে ঢাকার কল্যাণপুর বস্তিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য ‘টুনাটুনির পাঠশালা’ নামে একটি পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত শিশুরাই এই পাঠশালার শিক্ষার্থী। বর্তমানে ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে এই পাঠশালা তাদের পাঠদান কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের কেউ বসবাস করে কল্যাণপুর বস্তিতে আবার কেউ থাকে রাস্তায়। সুমাইয়া জাফরিন আবার কমিউনিকেশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন স্বাধীনতা ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারের হয়ে। এদিকে প্রতি বছর শীত বস্ত্র বিতরণ করতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে চলেন সুমাইয়া। এসবের মাঝেই গুগুল লোকাল গাইডের দিনাজপুরের মডারেটর ও অওনার হিসেবে কাজ করছেন সুমাইয়া। আবার কমিউনিটি মডারেটর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ লোকাল গাইডসের হয়ে। গুগল লোকাল গাইডস কমিউনিটির কার্যক্রমগুলো অন্য গুগল কমিউনিটির মতো নয়। বলতে গেলে সম্পূর্ণ আলাদা। লোকাল গাইডস কমিউনিটিতে ফটোগ্রাফি, ম্যাপিং, ট্র্যাভেল, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, জিও ওয়ার্ক, খাওয়া-দাওয়া, মিট আপ এ ধরনের কাজগুলো করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে সুমাইয়া জাফরিন বলছিলেন, ‘আমি ফটোগ্রাফি, ম্যাপিং, ট্র্যাভেল, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজগুলো আগে থেকেই পছন্দ করি, তাই লোকাল গাইডস আমার জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। ’ সুমাইয়া আরও বলেন, ‘আমার অনেক ভালো লাগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাপ এডিটিং সেশন পরিচালনা করি, দল বেঁধে দেশে-বিদেশে ঘুরতে যাই, মিট আপ করি। যখন লোকাল গাইডসের মান্থলি মডারেটর মিটিং হয়, সারা বিশ্ব থেকে সব মডারেটর গুগল হ্যাং আউটে যোগ দিই, তখন অনেক এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। আমি সব সময় বাংলাদেশকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেষ্টা করি। লোকাল গাইডের আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, কন্ট্রিবিউশনের ওপর বিভিন্ন গিফট। যেমন গত বছর বাংলাদেশে টপ কন্ট্রিবিউশনের জন্য গুগল মার্চেন্ট থেকে কেনা কাটার জন্য যখন গিফট ভাউচারটা পেলাম, তখন অনেক এক্সাইটমেন্ট কাজ করেছে। এ ছাড়া গুগল অফিস থেকে টি-শার্ট, ব্যাচ, স্টিকার, গিফট ও বিভিন্ন সোয়াগ ইত্যাদি পাওয়াও অনেক আনন্দের।

সুমাইয়া আরও জানান, প্রথম যখন মেইলটা পাই সেই অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না। এই ৭৫ জনকে নিয়ে একটা গ্রুপ আছে। এই গ্রুপের সবাই যেন একই পরিবারের সদস্য। এই ৭৫ জনের যে কেউ যে দেশেই ঘুরতে যাক না কেন, সেই দেশের লোকাল গাইডসরা তাকে নিয়ে মিট আপের আয়োজন করে। আর গত ৮ মার্চ সুমাইয়াকে নিয়ে গুগুল লোকাল গাইড থেকে গোটা বিশ্বে অনুপ্রেরণীয় নারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ফিচার করলে সারা বিশ্বের সামনে উঠে আসেন এই মানবদরদি তরুণী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৮ মার্চ ২০১৭ নারী দিবস উপলক্ষে গুগল লোকাল গাইডস আমাকে নিয়ে ফিচার করতে চেয়ে যখন মেইল পাঠায়, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
সারা বিশ্ব থেকে গুগল ম্যাপে ছবি, মানসম্মত রিভিও কন্ট্রিবিউশন, কমিউনিটি ওয়ার্ক- বাংলাদেশে গুগল ম্যাপ উন্নয়নে কন্ট্রিবিউশন, বাংলাদেশে গুগল লোকাল গাইডসের মিট আপ আয়োজন করা, গুগল লোকাল গাইডস কানেক্টে (গুগল লোকাল গাইডসের অফিসিয়াল ফোরাম) নিয়মিত অবদান রাখার জন্য সাতজনকে নির্বাচন করা হয়। আর এই সাতজনের চারজনকে নিয়ে আলাদাভাবে ফিচার করা হয়েছে। আমি তাদের মধ্যে একজন। গুগল লোকাল গাইডসের সব অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ছবি দেখলাম ও অফিসিয়াল ফোরামে আমাকে নিয়ে ব্লগ দেখলাম, তখন এর আনন্দটা ছিল একটা সেরা মুহূর্ত।
অসহায় মানুষের সেবায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সুমাইয়া। তিনি বলেন, যতদিন বাঁচব অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাব। আর মানুষের জন্য কিছু করা হলো নেশার মতো।
সূত্র: শীর্ষখবর
ইসলামে নারীর মর্যাদা; কিছু অভিযোগ ও তার জবাব
                              
                          
                              
                          
                        
                              
                          
                        
                                                 
                     




