গণভবনে দেশের আলেমদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় ঝড় বইছে। বিশেষভাবে যারা বামচিন্তায় বিশ্বাসী তাদের তো রীতিমতো ঘুম নেই। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা বামেরাও প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক নিয়ে প্রচণ্ড বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের কোটি কওমি শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের দাবি মেনে নিয়ে-কওমি মাদরাসাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছেন। বলেছেন, বিচারবিভাগের সামনে গ্রীকমূর্তি তিনি পছন্দ করেন না।
যারা জীবনভর আওয়ামী লীগের খুদ-কুড়া খেয়ে পোষ্য, বঙ্গবন্ধুকন্যার এই যুগান্তকারী ঘোষণাকে তারা মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। এমনকি বিএনপি নেত্রীরকণ্ঠের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল এই বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঘোষণা নিয়ে হইচই শুরু করেছে।
মূলত বিষয় হলো তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের কেউ নন। তারা নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে। দেশের মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট অবস্থান। খবরের কাগজ কিংবা মিডিয়ার টকরুমে ওদের সরব দেখলেও জনমনে এদের কোন জায়গা নেই।
ঐতিহাসিক দুই ঘোষণার মাধম্যে প্রধানমন্ত্রীই ১৪ কোটি জনতার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও তথাকথিত বাম বুদ্ধিজীবিদের বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন, দেশের প্রধানতমচিন্তাশীল আলেম, ৭০ টি গ্রন্থের লেখক-অনুবাদক, হাদিসে রাসুলের সাবলীল শিক্ষক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব। লিখেছেন শাহনূর শাহীন।
হুমায়ুন আইয়ুব: প্রধানমন্ত্রী মূর্তি সরানোর যে কথা বলেছেন, তিনিও এটা পছন্দ করেন না। হাইকোর্ট এর সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রী মূর্তি সরানোর ঘোষণা নাকি এদেশের সংস্কৃতির উপর আঘাত এবং অপশক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া। তথাকথিত প্রগতিশীলদের এমন বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখবেন?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন : আমি এটাকে দুইভাবে দেখি। এক. বিশ্বাসের পরিপন্থি কোনো কাজ বা আচারকে যারা সংস্কৃতি বলে তারা মূলত সংস্কৃতির সংজ্ঞা বুঝে না।
দুই. দেশের ১৪ কোটি মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থি হলো মূর্তি।১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থি কোনো কাজকে বা আচারকে যারা দেশবিরোধী বলে, তারা ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষকে অস্বীকার করে।
দুইটি কথার মূলকথা হলো, গণতন্ত্রের জন্য এর চাইতে আর দুঃসময় হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী ১৬ কোটি মানুষের বিশ্বাসের মূল্য দিচ্ছেন, এটাই গণতন্ত্রের দাবি।
হুমায়ুন আইয়ুব: তার মানে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটাই সঠিক?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে বলেছেন, মূল সংস্কৃতি যেটা তার পক্ষে বলেছেন।
হুমায়ুন আইয়ুব: তাহলে কথিত প্রগতিশীলদের বিরোধিতাটাকে কীভাবে দেখবেন?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: ওরা মূর্খ । ওরা সংস্কৃতির মূল ভাবটাই বুঝে না। সংস্কৃতি তো একটা বিশ্বাসের প্রকাশ।১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের বিশ্বাসের পরিপন্থি কোনো কাজ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি হতে পারে না।
হুমায়ুন আইয়ুব: তার মানে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভালো কাজই করেছেন? আর বুদ্ধিজীবিরা…?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: তারা সংস্কৃতির সংজ্ঞা বুঝে না, দেশ বুঝে না গণতন্ত্র বুঝে না।
হুমায়ুন আইয়ুব: আরেকটা কথা ওনারা বারবার বলতে চেষ্টা করেছেন কাওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দেয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক শক্তির যে উত্থান ঘটেছে তার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তার মানে কী কাওমি মাদরাসা সামদ্রায়িক শক্তি হিসেবে চিন্হিত? ওরা কাওমি মাদরাসাকে সামদ্রায়িক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করছে এ ব্যাপারে কী বলবেন?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: আসলে এরা ধর্ম বিদ্ধেষী ।এই যে ধর্ম নিরপেক্ষ একটা চক্র, এরা হলো ধর্মবিদ্ধেষী। একটা রাষ্ট্রে বহু চিন্তা, বহু আদর্শ, বহু মতের মানুষ বসবাস করবে। রাষ্ট্র হলো বহু দর্শনের ধারক বাহক। এটা্ই হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। এরা যেটা বলছে তাতে নিজেদের অন্ধকার প্রকাশ পেয়েছে।
এরা রাষ্ট্র চিন্তাবিদ না। এরা সাম্প্রদায়িক । বিশেষ ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের একটা চেহারায় পুরো বাংলাদেশকে যারা দেখতে চায় তারা মূর্খ।
হুমায়ুন আইয়ুব: মূলত তারা কি নিজেদের সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মবিদ্ধেষীতাকে ঢেকে রাখতে মাদরাসা মসজিদ বা ইসলামের প্রকাশ্য বিরোধিতা করছে?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন : হ্যাঁ। এরা ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িকতার যে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সেই আগ্রাসনের মুখে লাথি মেরেছেন, কাওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়ে।
হুমায়ুন আইয়ুব: আরেকটা প্রশ্ন হলো কাওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয়ায় রাষ্ট্রীয় যে একমুখী শিক্ষানীতির কথা বলা হয়েছে সেটার সাথে বিরোধ হলো না?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: কাওমি মাদরাসার যে শিক্ষা ব্যবস্থা এমন একটি আদর্শিক শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে একই সাথে ধর্ম, দেশ, মানুষকে উদারভাবে ধারণ করে সুতরাং কাওমি মাদরাসা শিক্ষা রাষ্ট্রীয় একমুখী শিক্ষানীতির ভেতরেই আছে।