শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


সমাজ পরিবর্তনে দূর্দশী ভূমিকা রাখতে হবে নবীন আলেমদের: আরশাদ মাদানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
দেওবন্দ থেকে

বর্তমানে পুরো দুনিয়ার অবস্থা এবং দেশের অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, গতকাল যে বিষয়টি আমাদের ধারণায়ও ছিলো না তা আজ আমাদের সামনে উপস্থিত৷ আগামী কাল দেশের অবস্থা কী হবে আমাদের জানা নেই৷ বর্তমান পৃথীবিতে মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তনে কৌশলী হওয়া জরুরি৷ যেখানে যেমন প্রয়োজন সেখানে ঠিক তেমন পরিকল্পনাটি নিয়েই এগোতে হবে৷

আজ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে বিখ্যাত হাদিস গ্রহন্থ তিরমিযি শরফি (২য় খণ্ড) এর সমাপনী দরসে দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস ও বর্ষীয়ান জমিয়ত নেতা, হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. এর ছেলে মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি এসব কথা বলেন৷

দেওবন্দ থেকে সদ্য ফারেগ হতে যাওয়া তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা কিছু দিন পর কর্মজীবনে অবতীর্ণ হবে৷ একজন আলেম হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব অনেক৷ প্রবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে খুব বুঝে শুনে অগ্রসর হতে হবে৷ উম্মতের এ দুর্দিনে প্রজ্ঞা ও দূর্দিশীতার সাথে কাজ করতে হবে৷ আজকের পৃথীবিতে কতিপয় অশিক্ষিত মুসলমান, অসচেতন মাওলানা, শত্রুর জালে বিভ্রান্ত কিছু মানুষ ইসলামের আসল তাসবিরের ওপর কালিমা লেপন করে চলছে৷ ইসলামের আসল চেহারা বিগড়ে দিয়েছে৷ আজ দুনিয়া ইসলামের নাম শুনলে ভয় পায়৷ এটা ইসলামের আসল রূপ নয়৷ যদি আসল রূপ এমনই হতো তাহলে সুদীর্ঘ চৌদ্দ শত বছর ইসলাম বেঁচে থাকতে পারতো না৷ অঙ্কুরেই ইসলাম নামক বৃক্ষের মৃত্য হতো৷

ইসলামবিরোধি শক্তিগুলো নানা কৌশলে ইসলামের ভুল ব্যখ্যা দুনিয়াবাসীর সামনে উপস্থাপন করে যাচ্ছে৷ ইসলামি রাষ্ট্রগুলো তাদের তাবেদার গোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে৷ সুতরাং নিজেদের যৌবনি জোশকে দমিয়ে রেখে কৌশলী হতে হবে৷ উগ্রপন্থাকে সর্বাবস্থায় ঘৃণার চোখে দেখতে হবে৷ উগ্রপন্থা উম্মতে সঠিক পথ দেখাতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে৷ যে পথ ও পন্থায় কেবলই শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে তাই গ্রহণ করতে হবে৷

তিনি বলেন, পুরো দুনিয়ায় ইসলাম প্রসারিত হয়েছে একমাত্র শান্তির পয়গাম নিয়ে৷ ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম উত্তর ভারতের কেরেলা প্রদেশে ইসলামের আগমণ ঘটে৷ অল্প কিছু(৩০/৪০জন) আরব বণিক নৌকা নিয়ে সেখানে অবতরণ করেছিলেন৷ তাদের চারিত্রিক সৌন্দর্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্তবোধে'র ফলে ভারতে ইসলামের প্রসার হয়েছে৷ আর এগুলোই হলো ইসলামের মূল৷ প্রতিটি ধর্মই ভ্রাতৃত্ত্ব ও মানবতার শিক্ষা দেয়৷ জুব্বা পাগড়ি পরে যদি কেউ ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায় তাহলে সে অবশ্যই ভুলের ওপর রয়েছে৷ সে সঠিক পথে থেকে সরে গেছে৷ ঠিক তেমনি কেউ ঠাকুরের পোষাক পরে ঘৃণা উগ্রবাদ প্রচার করে সেটাও ভুল বলে সাব্যস্ত হবে৷ সে নিজের ধর্মের গলদ তাসবির প্রদর্শন করছে৷

মাওলানা আরশাদ মাদানি আরো বলেন, তোমাদেরকে নতুনভাবে সপথ নিতে হবে৷ তোমাদের দায়িত্ব হলো ইসলামের সঠিক রূপ যা আল্লাহ ও তার রাসুল সা.দেখিয়েছেন তাই প্রচার করতে হবে৷ আজ পুরো দুনিয়া আমাদের বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ৷ আমাদের মুসলিম ভাইদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বদনাম করা হচ্ছে৷ এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ ঘৃণা নয় শান্তি ও ভালেবাসার বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বব্যাপী৷ ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থেকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে৷

দেওবন্দী কারা এ পরিচয় দিতে গিয়ে আরশাদ মাদানি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ প্রসিদ্ধি পেয়েছে তার ‘অভিনব মাসলাকে’র কারণে৷ যারা দেওবন্দী মাসলাকের অনুসরণ করেন চাই তারা যদি দেওবন্দ ফারেগ নাও হোন কিংবা দেওবন্দকে কোনো দিন নাও দেখেন তবুও তারা দেওবন্দী৷ দেওবন্দী মাসলাক কারো মনগড়া/বানানো মাসলাক নয়৷ এর মধ্যে নেই কোনো এফরাত তাফরিত বা অতিরঞ্জন অতি সংকোচন৷ এটা এমন এক বিশেষ মাসলাক যা আল্লাহ, রাসুল তথা কুরআন সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত৷ এটা সেই মাসলাক যা সাহাবাগণ রাসুল সা. থেকে গ্রহণ করেছেন, সাহাবাগণ থেকে তাবেয়ীগণ, তাবয়ীগণ থেকে তাবে তাবেয়ীগণ গ্রহণ করেছেন৷ এবং পরবর্তী উলামায়ে উম্মত তা কিতাবে সংরক্ষণ করেছেন৷ আর উলামায়ে দেওবন্দ সেই মাসলাকই আকড়ে ধরেছেন৷ যেহেতু দেওবন্দিয়ত ওই মাসলাকের নাম সেহেতু যে ব্যক্তিই উক্ত মাসলাকের অনুসরণ করবে, জীবনপথে ওই মাসলাককে সামনে রেখে পথ চলবে তাকেই দেওবন্দি বলা হবে৷ আকাবির আসলাফের মানহাজের ওপর যারাই প্রতিষ্ঠিত (ইলমান ও আ’মালান) তারাই দেওবন্দি৷ সুতরাং দেওবন্দি হওয়ার বড় মাপকাঠি এটাই যে, ব্যক্তি স্বীয় আকাবির আসলাফের মাসলাকের অনুসরণের মাধ্যমে একজন সাচ্চা বান্দা ও সাচ্চা উম্মত হিসেবে নিজেকে পরিচালিত করবে৷ এবং আজীবন এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে৷

এর পর হজরত শিক্ষার্থীদেরকে হাদিস বর্ণনার এজাযত প্রদান করে নিজের সনদের সিলসিলা বর্ণা করে বলেন, আমি তিরমিযি শরিফ পড়েছি হজরত মাওলানা ইবরাহিম বলিয়াভি রহ. এর কাছে৷ তিনি হজরত শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি থেকে৷ তিনি হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতাবি রহ.থেক৷ এভাবে ওপরে চলেগেছে৷ দীর্ঘ দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় তিরমিযি শরিফের সমাপনী দরস৷

দেওবন্দে জমিয়তের সর্বধর্মীয় ঐক্য সম্মেলন

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশ্বস্ত, সুফল পেতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ