শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মাওলানা আবদুল জাব্বার! আপনাকে আজ ভীষণ মনে পড়ছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 

মাওলানা মাহমুদ হাসান সিরাজী

প্রিন্সিপাল, মাদরাসা ওসমান ইবনে আফফান রা.

আজ কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি হবে। কওমি অঙ্গনে আনন্দ উল্লাস যেমন বিরাজ করছে তেমনি অনেকের মনে আতংকও আছে।

তবে কওমির স্বীকৃতি হোক এটা সকলেই চাওয়া। এর জন্য বড়রা অনেক আন্দোলনও করলেন। স্বয়ং শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. নিজে খোলা আকাশের নিচে দিন রাত অবস্থানও করেছেন। কওমি স্বীকৃতির আন্দোলনের উত্তাল সে দিনগুলোর কথা এখনো আমাদের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। আজ স্বীকৃতির ঘোষণা। অথচ তিনি বেচে নেই।

খতীব উবাইদুল হক রহ. এর কথাও আমরা ভুলে যাইনি। ভুলে যাইনি আল্লামা নুরুদ্দীন গওহরপুরী রহ. এর চেষ্টার কথাও।

তবে এসব আন্দোলন আর চেষ্টার পেছনে কারিগর হিসাবে আঠার মত যে লোকটি বেফাকের ফাইল বোগলদাবা করে দিন রাত মাথার ঘাম ঝরিয়ে ছিলেন, আড়ালে নিড়ালে চোখের পানি ফেলে ছিলেন সে লোকটি ছিলেন বেফাকের প্রয়াত মহাসচিব, নীরব সাধক, মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর শিষ্য মাওলানা আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী রহ.।

আজ স্বীকৃতি হয়তো হবে। আমরা একশতভাগ আশাবাদী আজ স্বীকৃতি হবে। ইনশাআল্লাহ।

আজকের এ দিনে আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী রহ. বেঁচে থাকলে তিনিই সবচেয়ে বেশি আনন্দ প্রকাশ করতেন। তিনিই রব্বে কারীমের দরবারে দু হাত প্রসারিত করে আনন্দমিশ্রিত অশ্রু প্রবাহিত করতেন। এ আনন্দের তিনিই সবচেয়ে বেশি হকদার। এটা এ দেশের কওমি অঙ্গনের সকলেই জানার কথা।

বেফাককে নিয়ে তার দুটো স্বপ্ন ছিল।

[caption id="attachment_30442" align="alignright" width="336"]mahmudul_hasan2 লেখক[/caption]

১. বেফাকের একটা স্থায়ী জায়গায় হোক। বেফাক তার নিজস্ব ভবনে তার দূর্বার আন্দোলন নিয়ে এগিয়ে যাক। তার জিবদ্দশায় সেটা তিনি করে গেছেন। তার এ কাজের সাথে বড়দের যেমন আন্তরিকতাপুর্ণ পরামর্শ ও দোয়া ছিল তেমনি এ দেশের কওমি অঙ্গনের বেফাকভুক্ত ছোট বড় সকল ছাত্রদের সহযোগিতাও ছিল।

আর তার দ্বিতীয় স্বপ্নটি ছিল, কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি হোক। এরজন্য তিনি খতীব উবায়দুল হক রহ. এর পরামর্শে খন্ডকালীন সময়ের জন্য মহাসচিব পদ থেকেও সরে দাড়িয়ে ছিলেন।

ওই সময়ে তার নিকটস্থ একজনের কাছ থেকে শুনে ছিলাম তিনি না কি বলেছিলেন- স্বীকৃতির জন্য আমাকে স্বপদ থেকে শুধু সরে দাঁড়ানো নয় বরং বড়রা যা করতে বলবেন আমি তাই করবো।

সে দিন তিনি তার কথা রেখে ছিলেন। একটা সময়ের জন্য তিনি স্বপদ থেকে সরেও দাড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু সে দিন আর স্বীকৃতি হলো না। বেফাকের নিয়ম শৃংখলার জন্য বড়দের পরামর্শে তিনি আবার স্বপদে বহাল হন।

আজ কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতি হচ্ছে অথচ স্বীকৃতি আদায়ে লড়াকু এ সৈনিকটি বেঁচে নেই। স্বীকৃতির মূল স্বপ্নদ্রষ্টা আজ বেঁচে নেই। অথচ তার স্বপ্নই আজ বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছ। আজ কওমি অঙ্গনের আনন্দময় এ দিনে অত্যন্ত আনন্দের সাথে তার জন্য রব্বে কারিমের দরবারে প্রার্থনা করি রব্বে কারিম তাকে যেন জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন। তার আমৃত্যু এ সাধনা বা লড়াইয়ের মাধ্যমে কওমি অঙ্গনকে যেন আরো আলোকিত করে তুলেন।

স্বীকৃতি আদায়ের এ যুদ্ধে বড়রা বিশেষ করে আল্লামা নুরুদ্দীন গওহারপুরী রহ., শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ., মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. ও খতীব উবায়দুল হক রহ. থেকে নিয়ে লক্ষ আলেমের উস্তাদ, কোটি কোটি মানুষের আধ্যাতিক রাহবার, একবিংশ শতাব্দির মসনদে হাদীসের রাজপুত্র, মুকুটহীন বাদশাহ আল্লামা শাহ আহমদ শফী প্রমুখগণও তাকে মমতা আর স্নেহের ছায়া দিয়ে পথ চলতে সহযোগিতা করে ছিলেন। ফলে আজ আমরা নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে, এলহামি অষ্টমূলনীতির ভিত্তিতে, সরকারি কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রন ছাড়াই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি।

আরআর

কওমি স্বীকৃতি; আল্লামা শফীর নেতৃত্বে গণভবন যাচ্ছেন ৩০০ আলেম

কওমি সনদের স্বীকৃতি: আমাদের লাভ ও ক্ষতি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ