আতাউর রহমান খসরু : কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির নিয়ে আশা ও আশঙ্কার দোলাচলে দুলছে কওমি শিক্ষাঙ্গণ। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক ও বিতর্ক। শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির এ উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
ফেসবুকে কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে লিখেছেন ও মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ আলেম থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। তাদের মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ, ভয় ও আশঙ্কা, সংশয় ও সন্দেহ।
যেমন দেশের খ্যাতিমান আলেম ও জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শায়খে সানি মাওলানা মামুনুল হক তার ওয়ালে স্মরণ করেছেন নিজের পিতা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. কে। তিনি ‘কওমী সনদের স্বীকৃতি: যেমন চেয়েছিলেন
শায়খুল হাদীস রাহিমাহুল্লা’ শিরোনামের একটি লেখা পুনরায় শেয়ার করেছেন।
এরপর লিখেছেন, ‘কওমী মাদরাসা শিক্ষা সনদের সরকারী স্বীকৃতি আবার লাইমলাইটে ৷ ১১ই এপ্রিলের ডেটলাইনকে কেন্দ্র করে অজানা শংকা-সম্ভাবনার দোলাচলে দুলছে কওমী মহল ৷ এই বিষয়ে পূর্বেকার প্রতিটি আলোচিত পর্বে আমি ও আমরা স্বোচ্চার ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ ৷ বর্তমান প্রেক্ষিতেও আমরা বিষয়টিতে নজর রাখছি।’
মাওলানা মামুনুল হকের মন্তব্যের কাছাকাছি মন্তব্য করেছেন লেখক সৈয়দ শামসুল হুদা। তিনি লিখেছেন, ‘স্বীকৃতি চাই- উতলা হতে চাই না।’
সব ভয় ও শংকার উল্লেখ করেও স্বীকৃতি চান আলেম লেখক ও সাংবাদিক আলী হাসান তৈয়ব। তার মতে ‘কওমিকে নিয়ন্ত্রণে দেশি ও আন্তর্জাতিক ইসলামবিরোধী শক্তির ক্রমর্বধমান চাপ সত্ত্বেও সরকার কেন স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে? এবং শাপলার অভিঘাত আর প্রতিনিয়ত ব্রাক্ষণ্যবাদিদের আস্ফালন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এ স্বীকৃতি ভষিষ্যতে কোন দিকে নিয়ে যাবে ইত্যাকার বহু প্রশ্ন সত্ত্বেও আমি স্বীকৃতির পক্ষে।’
ভয় ও শঙ্কা জায়গা থেকে পুরোপুরি সরে উলামায়ে কেরামের উপর আস্থা রাখতে চেয়েছেন অপর আলেম লেখক রায়হান মুহাম্মদ ইবরাহীম। তিনি তার ওয়ালে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় হক্কানী উলামায়ে কেরাম ভুল কোনো বিষয়ে একমত হয়েছেন- এমন নজির খুব একটা নেই। কওমী শিক্ষাসনদের সরকারী স্বীকৃতি বিষয়ে তাঁদের ঐকমত্য একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা আমাদের মুরব্বীদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’
এ প্রজন্মের একজন তরুণ আলেম ও ডিজাইনার ওমর ফারুক মাসরুর। তিনি চান স্বীকৃতির নিরঙ্কুশ স্বীকৃতি। ‘কওমি শিক্ষার মান জাতীয় পর্যায়ে থাকা দরকার। এটি প্রতিটি কওমি বাংলাদেশীদের অধিকার। একজন নাগরিক/মানুষ দীর্ঘ দিন পড়াশোনা করেও মূর্খের খাতায় তার নাম থাকে, এটা মেনে নেওয়া বোকামী। শিক্ষার সনদের সরকারী স্বীকৃতিকে যারা ভিন্নখাতে জল্পনা কল্পনা করছেন এটা একরোখা চিন্তা আমার মনে হয়। এভাবে আমাদের নিজের অধিকারকে আমরা অস্বীকার না করে কিভাবে সুন্দর থাকা যায় ও সুন্দর রাখা যায় সে ব্যপারে পরামর্শ দেওয়াই সমুচীন মনে করি।’
তবে কেউ কেউ সরগরম রয়েছে স্বীকৃতির বিরুদ্ধে। স্বরব রয়েছেন ফেসবুকেও। তাদের একজন সিনিয়র আলেম ও লেখক লাবীব আবদুল্লাহ। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বোর্ডের পরিচালকদের সনদের কী হবে?’
একইভাবে স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছেন কবি মুহিব্বুর রহমান খান। তিনি তার ওয়ালে লিখেছেন, ‘যদি বলি, আজ একটা ঐতিহাসিক ভুলের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে। আপনি বলবেন, আরে নাহ, সবকিছু ঠিক রেখেই তো হচ্ছে। আমাদের মজবুত সব শর্ত মেনেই তো দিচ্ছে। বলবো, এভাবে আস্থা আর আদর দিয়ে কাছে নিয়েই কুরবানির রশি পেঁচানো হয়। সময় মতো ধাক্কা দিয়ে ফেলে জাপটে ধরে জবাই।’
আর এতো উত্তাপের মধ্যেও নিরুত্তাপ রয়েছেন কেউ কেউ। যেমন কবি সাইফ সিরাজ বলেছেন, ‘ইস্যুগামী না হয়ে সুখেই আছি! মানসিক ও শারিরিক সুখে...’