টিম আওয়ার ইসলাম: গণভবনে আজ মঙ্গলবার শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মান দেওয়া হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ গণভবন ধন্য হয়েছে। আজ বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা এখানে এসেছেন।
আমাদের শিক্ষার সূচনাতেই আছে কওমি মাদরাসা। এখান থেকেই তো আমাদের শিক্ষার সূচনা। বাংলাদেশে ১৪ হাজার কওমি মাদরাসা আছে। ১৪ লাখ ছাত্র রয়েছে। দীনি এলেম হলো মৌলিক শিক্ষা। এ শিক্ষা না থাকলে শিক্ষা পরিপূর্ণ হয় না।
তিনি বলেন, আমরা একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। যাতে এর মাধ্যমে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি হতে পারে। অনেক সমস্যাই এখন থাকতে পারে এখানে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা এগুলো আলোচনা করে দূর করবো।
আমি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি যেনো তার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেয়া যায়। আমি স্বীকৃতি দিতে চাই, আমরা স্বীকৃতি দিবো কিন্তু কারিকুলাম প্রস্তুতের দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের। আপনার সর্বসম্মতিতে যে কারিকুলাম পেশ করবেন আমরা তার আলোকে আইন প্রস্তুত করবো।
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ দমনে উলামাদের সহযোগিতা চান। আপনারা মানুষদের বোঝাবেন মানুষ হত্যা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলামের নামে শিক্ষা নিয়ে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের জীবন নিতে পারে না। তিনি বলেন, জিহাদের ময়দান ভিন্ন বিষয়। কিন্তু অহেতুক মানুষ হত্যা করে কেউ কেউ জান্নাতে চলে যেতে চাচ্ছে। জান্নাতে কে যাবে কে যাবে না সেটা আল্লাহ জানেন। তিনি বিচার করবেন। আল্লাহর সিদ্ধান্ত নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম। পৃথিবীতে ইসলমা সবচেয়ে শান্তির ধর্ম। কিন্তু আমাদের শ্রেষ্ঠ ধর্মের গায়ে কালিমা লেপন করছে কেউ কেউ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর নানা প্রান্তে অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। সেখানে কেউ ইসলাম ধর্মকে দোষারোপ করে কথা বললে আমার কষ্ট লাগে। আমি তার প্রতিবাদ করি। আমি বলি, গোটা কয়েক লোকের জন্য আমাদের প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ধর্মকে দোষ দিবেন না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ও দেশের বাইরে অনেক সময় অনেকে কওমি মাদরাসা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আমি তার প্রতিবাদ করেছি। আমি তার প্রতিবাদ করে বলেছি, এ দেশে শিক্ষার সূচনা ও প্রসার ঘটেছে মাদরাসার মাধ্যমে। কওমি মাদরাসা না হলে আমরা হয়তো শিক্ষিতই হতাম না।
তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের অবদান সম্পর্কে বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এ ভারতবর্ষের স্বাধীন সংগ্রামকে সামনে রেখে। দারুল উলুম দেওবন্দের অসামান্য অবদান রয়েছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পেছনে।
আমি অনেক আগ থেকেই ভাবছিলাম, কওমি মাদরাসার সনদের অন্তত স্বীকৃতি হওয়া একান্ত দরকার। আমি এ ব্যাপারে আলেমদের বলেছিলাম, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আপনারা এক হয়ে এখানে এসেছেন আমি আনন্দিত। আমরা স্বীকৃতি ঘোষণা করবো এবং আপনারা যতোটুকুতে ঐক্যবদ্ধ হবেন সেভাবেই আমরা কারিকুলাম ও আইন প্রণয়ন করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি আপাতত একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই হবে। পরবর্তীতে আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে আইন প্রণয়ন করা হবে এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত ০৯.১০ মিনিটে কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন, ‘কওমি মাদরাসার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অক্ষুণ্ন রেখে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ ও অ্যারাবিকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করা হলো।’
তিনি আরও বলেন, সনদের স্বীকৃতি না থাকায় কওমি মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা তেমন কিছুই করতে পারছে না। সনদের স্বীকৃতি পেলে তারা আলোর দিশা পাবে। কর্মক্ষেত্রে সফল হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ধর্ম অনুরাগ সম্পর্কে বলেন, আমি ধর্ম মানি। আমার পরিবার সম্পর্কে আপনারা জানেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয়েছে।
আমরাও দেশের সব উপজেলায় মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার করছি। এ প্রকল্পের কাজও খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। সউদি বাদশাহ অর্থিক সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে মূর্তি কোত্থেকে আসলো? এটাতো গ্রিক দেবির মূর্তি। একে আবার শাড়ি পরানো হয়েছে। বিষয়টা হাস্যকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরেন, আমরা এটা সরানোর জন্য যা যা করার সব ব্যবস্থা করবো। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনায় বসতো। আমি তাকে একটি বার্তা দিয়েছি।
কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বীকৃতি দিন: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী