আওয়ার ইসলাম: দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। সিরিয়া প্রশ্নে একপ্রকার মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া।
সিরিয়ার বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রাশিয়া ‘মারাত্মক পরিণতির’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কে নতুন করে তৈরি হয়েছে টানাপড়েন। সিরিয়া সরকারের শায়রাত বিমানঘাঁটিতে শুক্রবার ভোররাতে আঘাত হানে ৫৯টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল। ভূমধ্যসাগরে অবস্থারত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস পোর্টার ও ইউএসএস রস থেকে এগুলো ছোড়া হয়। পেন্টাগন বলছে, গেল মঙ্গলবারের রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিল এই শায়রাত বিমানঘাঁটি থেকেই। আর বিদ্রোহী অধ্যুষিত ইদলিবে চালানো ওই রাসায়নিক হামলায় অন্তত ৭০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ওয়াশিংটন বলছে, এর জবাবেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়ার পর এটাই ডনাল্ড ট্রাম্পের সব থেকে বড় পররাষ্ট্রনীতি সিদ্ধান্ত। আর এর ফলে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির সাফ্রোনকভ শুক্রবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য এর পরিণতি হতে পারে অত্যন্ত মারাত্মক’। রাশিয়ান প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, মার্কিন হামলাটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার জন্য মাত্র এক ধাপ দূরে ছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মিসাইল হামলার আগে রাশিয়ান বাহিনীকে অবগত করা হয়েছিল। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, উপগ্রহ চিত্র থেকে ইঙ্গিত মিলছে, ওই বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ান বিশেষ বাহিনী ও হেলিকপ্টার থাকতো। সিরিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছেন। তবে, সিরিয়ায় শুক্রবারের মিসাইল হামলার পর মনে হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ফের যোগ হয়েছে শীতলতা।
ওই হামলার জবাবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মার্কিন মিলিটারি অ্যাটাচেকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, আকাশ নিরাপত্তা চুক্তি বাতিল করছে রাশিয়া। সিরিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ান ও মার্কিন বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে বিশেষ যে যোগাযোগ লাইন ব্যবহৃত হচ্ছিল তা বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। ওদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সিরিয়ায় আরও মার্কিন হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, শুক্রবারের মার্কিন হামলা ছিল রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া, চীন ও ইরানের জন্য বার্তাস্বরূপ যেসব স্থানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রেসিডেন্সির শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প বার্তা দিলেন যে প্রয়োজনে বল প্রয়োগে প্রস্তুত তিনি। সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারও আরও সরব হয়ে উঠেছেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সিনিয়র এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিরিয়ান শাসকগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়ানরা।’
২০১৫ সালে সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয় রাশিয়া। এতে করে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি আসাদের পক্ষে ভারী হয় অনেকাংশে। সিরীয় গৃহযুদ্ধে ওয়াশিংটন ও মস্কোর সমর্থন ভিন্ন দুপক্ষে হলেও আইসিস তাদের অভিন্ন শত্রু বলে মন্তব্য করেছে দু’দেশ।
শুক্রবারের মিসাইল হামলার পর আসাদ সরকারের তরফে বার্তা দেয়া হয়েছে তাদের শত্রুদের ওপর আরও কঠোরভাবে আঘাত হানবে তারা। মঙ্গলবারের রাসায়নিক হামলার চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সিরিয়া। রাশিয়াও বলেছে এর নেপথ্যে আসাদ ছিল না।
সব মিলিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক আবহ বেশ উত্তপ্ত। ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থা রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘রাশিয়া প্রত্যাশা করে আগামী সপ্তাহে মস্কো সফরে ওয়াশিংটনের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন।’
এসএস