শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৪ দালাল ধরে গিয়েছিলেন ইরাকে, ময়লার ভাগাড়ে তিন টুকরায় মিলল লাশ দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প নোয়াখালীতে অটোরিকশা উল্টে প্রাণ গেল নারীর ,আহত-৪ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগর, জেলা ও শাবিপ্রবি’র সহযোগী সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন এডভোকেট এর ইন্তেকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুলঞ্জ ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন সম্পন্ন ইসলামী ব্যাংকের ডিমিনিশিং মুশারাকার মাধ্যমে বাড়ি ক্রয় করা বৈধ হবে কি? শেষ হলো ইফার পক্ষকালব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানমালা সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলায় প্রাণ গেল ৭৫ জনের

সরকার পরিবর্তনে মুসলমান ভীত নয়: নৈতিক উন্নয়নে অবস্থার মোকাবেলা করুন: মাদমুদ মাদানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
দেওবন্দ থেকে

ভারতীয় মুসলমান কখনোই জাতিগত বিভক্তি পছন্দ করে না৷ এখানের মুসলমান পরস্পরের সহাবস্থান, সম্প্রীতি, ঐক্যে বিশ্বাসী৷ তবে মুসলিম জাতি ঈমানের প্রশ্নে কখনওই আপোস করতে পারে না৷ ভারতীয় মুসলমানগণও ঈমানের প্রশ্নে আপোস করবে না৷

গতকাল দেওবন্দের কাসেমপুরায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সাহারানপুর জেলা শাখা আয়োজিত ‘জাতীয় ঐক্য কনফারেন্সে প্রধান অতিথির ভাষণে হজরত মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানি এসব কথা বলেন৷

তিনি বলেন, সরকার আসবে, সরকার পরিবর্তনও হবে৷ কোনো সরকারই স্থায়ী নয়৷ উত্তর প্রদেশে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় মুসলমানদের ভীত হবার কোনো কারণ নেই৷ যারা সত্য ন্যায়ের পক্ষে থাকে তাদের ওপর বিপদ আসবেই৷ সুতরাং চরম ধৈর্য আর নৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে৷ ধৈর্যের পরীক্ষায় যারা জয়ী হবে তারাই প্রকৃত বিজয়ী, সফলকাম৷ আমরা কখনো অন্যায় করি না, অন্যায়ের সঙ্গও দেই না৷ কিন্তু কেউ অন্যায় করলে তার বিরোধিতা আমরা করবোই৷

তিনি আরো বলেন, গরুর গোশত বন্ধ করায় মুসলামন শঙ্কায় নয়৷ এতে মুসলামনদের কোনো ক্ষতিও হবে না৷ ক্ষতি তো হবে রাষ্ট্রের৷ ভারত সরকার বিদেশে গোশত আমদানি করে প্রতি বছর প্রায় ২লাখ কোটি রূপি আয় করে থাকে৷ গোশত বন্ধ করলে এতো বড় রাষ্ট্রীয় আয়ের কী হবে? মুসলমান গোশত না খেয়েও থাকতে পারবে৷ সরকারের কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে, গরুর গোশত বন্ধের মতো পুরো দেশে মদ, নেশা, অশ্লীলতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন৷ মাদকের ধ্বংস থেকে জাতিকে বাঁচান৷ দেশের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি দিন৷ দেশ ও দেশের মানুষের কথা বলুন৷ জাতিগত বিভক্তি নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ্যের কথা বলুন৷

তিনি আরো বলেন, আমরা দেশকে ভালোবাসি৷ দেশের উন্নয়নের কথা বলি৷ হিন্দু মুসলামানদের মাঝে ভাই ভাই সম্পর্কের কথা বলি৷ দেশ জাতির জন্য যদি জীবন দিতে হয় তাহলে আমরাই সবার সামনে থাকবো৷ দেশের জন্য জান কোরবানকে আমরা সৌভাগ্য মনে করি৷

কনফারেন্সে আমন্ত্রিত হিন্দু ধর্মের মহা ঠাকুর আচারিয়া প্রমোদ কৃষ্ণ জি বলেন, আমি দেওবন্দের পবিত্র এবং ঐতিহাসিক স্থানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি৷ তিনি বলেন, তিন তালাক ও গরুর গোশতের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো মুসলামনদের ভয় দেখানো৷ এটা কখনই কাম্য নয়৷ কারো সাথে যদি ধর্মের নামে জুলম অত্যাচার করা হয় তাহলে আমরা বিরোধিতা করতে পিছ পা হবো না৷ আজকাল যারা তিন তালাক নিয়ে কথা বলে তারা তো বিবাহই করেনি৷ কেউ বিয়ে করলেও স্ত্রী রাখতে পারেনি৷

তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশে নব নির্বাচিত সরকার গোশত বন্ধ করে দিয়েছেন৷ দক্ষিণ ভারত, বিহার বাংলা, উত্তরাখণ্ডে কেনো বন্ধ করা হচ্ছে না৷ এসব এলাকায় তো বেশির ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই গোশতের খরিদদার! গোশতের সাথে মাদক বন্ধ করুন৷ অশ্লীলতার জোয়ার থামান৷ জাতিগত বিভক্তি কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না৷ দেশটা কেবল একটি ধর্মের মানুষের নয়৷ দেশটা মুসলমানদের যতোটুকু ঠিক হিন্দুদেরও ততোটুকু৷ দেশ কারো একক মালিকানা নয়৷ দেশের আইন আছে, সংবিধান আছে৷ সে অনুযায়ী দেশ চলবে৷ কোনো ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারীতা চলবে না৷ চাই সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো৷ মহাত্মা গান্ধীর হত্যা কোনো মুসমান করে নাই৷ মুসলাম কখনো গাদ্দার হয় না৷ দেশে একটি গোষ্ঠী এমন থাকে যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায়৷ তারা হিন্দু মুসলামানদের মাঝে ঘৃণা বিদ্বেষ উগরে দেবার হীন চেষ্টায় লিপ্ত থাকে৷ এজন্য হিন্দু মুসলামন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে৷ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে৷ বিদ্বেষ নয় সবার কণ্ঠে ভালোবাস জয়গান হোক!

জমিয়ত নেতা হজরত মুফতি কারী আফ্ফান মানসুরপুরী সাহেবের সঞ্চালনায় ও জমিয়তের সাহারানপুর জেলা শাখার সদর হজরত মাওলানা জহূর আহমদ সাহেবের সভাপতিত্ত্বে কনফারেন্সে আরো বক্তব্য রাখেন দারুল দেওবন্দের সিনিয়র উস্তাদ হজরত মুফতি রাশেদ আজমি সাহেব, জমিয়ত নেতা ও সিনিয়র শিক্ষক হজরত মাওলানা সালমান বিজনুরী সাহেব, কানপুরের জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মাতিনুল হক কাসেমিসহ অন্যান্য নেতৃবন্দ৷

মুফতি রাশেদ আজমি বলেন, আমারা শেষ নবির উম্মত৷ আমারা তাঁর আদর্শের অনুসারী৷ মক্কার মানুষ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার অনুসারীদের জন্য সব ধরনের খাবারের ওপর নিষেজ্ঞা আরোপ করেছিলো৷ তাঁরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করেছিলেন৷ আমাদের জন্য তো কেবল গোশত বন্ধ করা হচ্ছে৷ তো আমরা কেনো ধৈর্য ধারণ করতে পারবো না৷

কনফারেন্সে, ব্যাপক আম জনতার পাশাপাশি দেওবন্দসহ উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন মাদরাসার উলামা তলাব অংশ নেয়৷ প্রায় ৪০হাজার (স্থানীয়দের ভাষ্যমতে) বিশাল সমাবেশে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যাপক পরিমাণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ মূল মঞ্চের আশপাশ, মাঠের বিভন্ন প্রান্তে, উপস্থিত জনতার মাঝে মাঝে রাস্তার মোড়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থা নিতে দেখা যায়৷ উপস্থিত শ্রোতাদের সুবিধার্তে মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ডিজিটাল মনিটর লাগনো হয়৷ মুসল্লিদের ওজুর জন্য জায়গায় জাযগায় অস্থায়ী পানির ট্যাংকী বসানো হয়৷

বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ার মাধ্যমে কমফারন্সের সমাপ্তি হয়৷ দোয়া পরিচালনা করেন দেওবন্দের সিনিয়র শিক্ষক ও জমিয়ত নেতা হদরত মাওলানা সালমান বিজনুরী৷

আরআর

ঢাকায় পৌঁছেছেন মক্কা-মদিনার ইমাম-উলামা


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ