শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


জনসার্থেই বিচারকদের ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপ্যাল; মাদরাসা ওসমান ইবনে আফফান রা.

mahmudul_hasan2রাষ্ট্র পরিচালনার তিনটি নির্বাহী প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী একটি হলো রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগ যত শক্তিশালী হবে রাষ্ট্রের অবকাঠামো তত মজবুত হবে। বিচার বিভাগ দূর্বল হলে রাষ্ট্রের ভারসাম্যতা ঠিক থাকবে না।

আমাদের রাষ্ট্র মুসলিমরাষ্ট্র নয়, তবে মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। এদেশের কত ভাগ জনগন ইসলামের অানুসারী এটা জানার জন্য বছরে বছরে শুমারি করার প্রয়োজন নেই।

সে ৪৭, ৫২, ও ৭১ এর সফলতা বা বিজয়ের মালা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ যোদ্ধাদের হাত দিয়েই এসেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্ছ আসনে একজন মুসলিম নারীই বসে আছেন। রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ারটিও একজন মুসলমানের দখলে রয়েছে। সংসদ পরিচালক মাননীয় স্পীকার থেকে নিয়ে সংসদের ভিতর ও বাহিরের বিরুধীদলও মুসলমানদের আওতায়।

এখানে অন্য ধর্মালম্বীদেরকে খাটো করে দেখা উদ্দেশ্য নয়, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ছোট ও মোটা দাগে একটা বিশ্লেষণ তুলে ধরা।

৪৭, ৫২ ও ৭১ সবই কিন্তু সংখ্যার বিবেচনায় হয়েছে। ৪৭ ছিল জাতিগত,৫২ ছিল ভাষাগত আর ৭১ ছিল ইনসাফগত। অর্থাৎ জালেমের বিপক্ষে মজলুমের লড়াই বা জালেমের অস্ত্রের প্রতিবাদে মজলুমের লড়াই।

এখানে যে বা যারা ক্ষমতার মসনেদে যাচ্ছে তারা কিন্তু ভোটের দোহাই দিয়েই ক্ষমতায় যাচ্ছে। তো ভোটাররা নিজেদের প্রতিনিধিদেরকেই কিন্তু ক্ষমতায় বসাচ্ছে। ফলে ক্ষমতার ভিত্তিটাও গড়ে উঠছে জনসংখ্যার ভিত্তিতে।

এ দেশের জনগণের ভালো মন্দ যে সব প্রতিষ্ঠান দেখবে সে সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেশের বিচার বিভাগ অন্যতম। আর বিচার বিভাগ যারা চালান বা বিচার বিভাগের যারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দেশের মানুষের ভাষা বুঝতে হবে। দেশের মানুষের চিন্তা চেতনা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। দেশের মানুষের ধর্ম ও ধর্মীয় জ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকতে হবে।

গত কয়েক মাস আগে খতীবদের বয়ান নিয়ন্ত্রণ করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যা করতে চাচ্ছিল আদালত সেটাই বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছে কি না?

এ দেশের খতীবদের বয়ানে কী থাকে? তারা কী নিয়ে আলোচনা করেন? আদালত কি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল? দেশের প্রচলিত আইনের সাথে খতীবদের বয়ান কতটা সাংঘর্ষিক? তাদের বয়ানের কোন অংশটা সমাজ বিধ্বংসী? তাদের বয়ানের কোন অংশটা যুবসমাজ নষ্টকারী?

আদালত তাদের শুধু নামাজ রোজা নিয়েই বয়ান করতে বল্লেন। ইসলাম কি শুধু নামাজ রোজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ইসলাম কি শুধু পরকালমুখী সেকেলের একটি ধর্ম? ইসলামে ইহকালীন কি নেই?

[সৌদিতে মজেছেন মঈন আলি]

মহামান্য আদালতকে সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বিনীতভাবে বলছি, ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ মানব জীবনের কোন অংশটা ইসলামে নেই?

তাহলে খতীবদের নিয়ন্ত্রিত বয়ান করতে হবে কেন? একটা সমাজ বিনির্মাণে ধর্ম যতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে স্বয়ং একটা রাষ্ট্রও তা পারেনি।

এর একটা রোড মডেল কিন্তু আমাদের সামনে রয়েছে। যাকে আমরা মদীনার সনদ নামে জানি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু মদীনার সনদে রাষ্ট্র পরিচালনা করার ঘোষনা দিয়েছিলেন।

অতএব, একজন বিচারক তিনি যে দেশের জনগণের বিচালয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন সে দেশের জনগণের ধর্ম ও তাদের ধর্মীয়জ্ঞান সম্পর্কে সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। তাকে দেখতে হবে, জনগণের ধর্মে কী আছে? তা কতটা জনগণের কল্যাণমুখী?

একজন খতীব তিনি তার সমাজের জনসাধারণের ব্যাপারে অবগত। তিনিই ভালো জানেন কখন কোথা কি বয়ান করতে হবে। তার সমাজ কোন রোগে আক্রান্ত তা তার নিকট গোপন নয়।

এখনো সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে দেশের জনগণ আলেম ওলামাদের নিকট যতটা যান আদালতে ততটা যান না। তাই বিষয়গুলো আরো ভাবা উচিত সবার। আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন।

আরআর

কুরআন বিশ্বকোষ ভবন নির্মাণ করছেন বাদশাহ সালমান


সম্পর্কিত খবর