শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কিছু মানুষ ইসলামের বৈপ্লবিক স্পৃহাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে: ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

dak

জঙ্গিবাদ ও উগ্রতা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। পুরো পৃথিবীতে তার উত্থানও চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সফল অভিযানে ব্যর্থ হয়েছে নাকশতার পরিকল্পনা। জঙ্গিবাদ ও উগ্রতার এ উত্থানে চিন্তিত দেশের সচেতন মহল। তারা জানতে চান এ উত্থানের কারণ ও ইতিহাস। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, ধর্মীয় শিক্ষাই নাকি দায়ী উগ্রতা উস্কে দেয়ার পেছনে আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। দেশের চলমান এ ইস্যুতে কথা বলেছেন প্রাজ্ঞ আলেম ও শিক্ষাবিদ, গবেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। কথোপকথনে তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : ধর্মীয় উগ্রপন্থার উদ্ভব কোথা থেকে হয় এবং কেনো?

ড. আবুল কালাম আজাদ : রাসুল সা. এর ইন্তেকালের পর এবং হজরত খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসন আমলের শেষভাগে মুসলিম বিশ্বে ধর্মীয় উগপন্থার উদ্ভব। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ধর্মীয় উগ্রতা দেখা যায় খারেজিদের মধ্যে। রাসুলুল্লাহ সা. এ খারেজিদের ব্যাপারে ভবিষ্যত বাণীও করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তারা হবে বয়সে তরুণ এবং বুদ্ধিতে পরিপক্ক। তাদের বাহ্যত তারা হবে অতি ধার্মিক। কিন্তু তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালির নিচে প্রবেশ করবে না।’

খারেজিদের মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। তারা অতি ধার্মিক ছিলো। তরবারির মাথায় কুরআন ঝুলিয়ে দাবি করেছিলো সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহর হবে। দৃশ্যত তারা ছিলো সমাজের সবচেয়ে মুত্তাকি। এমনকি হজরত আলি রা. এর হত্যাকারী আবদুর রহমান ইবনে মুলজিমকে যখন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তখনও তার জবানে জিকির ছিলো। আলি রা. তাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, তাদের কথা সত্য কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ। রাসুল সা. খারেজিদের মৃত্যু দণ্ডের কথা বলেছেন।

উগ্রপন্থা উদ্ভবের প্রধান কারণ ছিলো অমুসলিম ষড়যন্ত্র। অমুসলিমগণ যখন মুসলমানকে সম্মুখ সমরে এবং যে কোনো নৈতিক পরাজিত করার কোনো পথ খুঁজে পেলো না, তখন তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। তারা ‍মুসলিম বেশে মুসলমানদের মাঝে কুসংস্কার, অধর্ম ও গোড়ামি ছড়িয়ে দেয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই হজরত উসমান রা. কে হত্যা করা হয়। সাহাবিদের মাঝে আত্মঘাতী সংঘাত দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনে সাবার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। এছাড়াও পূর্ববর্তী সমাজ ও ধর্মের প্রভাবও উগ্রপন্থা সৃষ্টির পেছনে দায়ী ছিলো।

02

আওয়ার ইসলাম : বর্তমানে যারা উগ্রপন্থার সাথে জড়িত তাদের সঙ্গে খারেজিদের কোনো মিল আছে কী?

ড. আবুল কালাম আজাদ : হ্যা, কিছু মিল তো আছেই। যেমন, ধর্মীয় জ্ঞান ও তার গভীরতা কম হওয়া, বাহ্যত ধার্মিক হওয়া, ইসলামের বৃহত্তর ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, চিন্তা ও চেতনায় প্রান্তিকতা, বয়স ও বুদ্ধিতে কম হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অনেক মিলই রয়েছে।

একটা কথা প্রয়োজন, অপূর্ণ ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। যেমন পানি ছাড়া নৌকা চলে না। আবার নৌকায় পানি উঠে গেলে তা মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়। ঠিক তেমনই জ্ঞান, বুদ্ধি ও শিক্ষা ত্রুটিযুক্ত হয় তবে তা সমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বর্তমন সময়ে উগ্রপন্থায় জড়াচ্ছে তাদেরও মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞানের স্বল্পতা।

আওয়ার ইসলাম : আপনি কোন জ্ঞানের স্বল্পতার কথা বলছেন? অনেকের অভিযোগ ধর্মীয় শিক্ষা দেশে উগ্রপন্থা উস্কে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

ড. আবুল কালাম আজাদ : আমি জ্ঞান দ্বারা ইসলামি জ্ঞানই উদ্দেশ্য করেছি। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহর পরিপূর্ণ শিক্ষা কারো মধ্যে থাকলে সে উগ্রপন্থায় জড়াতে পারে না।

অনেকে অভিযোগ করেন, ধর্মীয় শিক্ষা উগ্রপন্থাকে উস্কে দিচ্ছে। এখানে দুটি বিষয় লক্ষ্যণীয়

এক. স্বয়ং ইসলামি শিক্ষাই উগ্রতা সৃষ্টি করে কী না?

দুই. নাকি ধর্মীয় শিক্ষায় ত্রুটি-বিচ্যূতির কারণে উগ্রতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ইসলাম যুদ্ধের ময়দানেও মানুষ হত্যাকে নিরুৎসাহিত করে। বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াও ইসলামে নিষিদ্ধ। সুতরাং ইসলামি শিক্ষার প্রভাবে উগ্রতা ছড়াচ্ছে না

আওয়ার ইসলাম : ইসলামি শিক্ষার প্রভাবে কোনো মানুষ উগ্র হতে পারে না। কারণ ইসলাম মানুষ শান্তির শিক্ষা দেয়, মধ্যপন্থা তথা জীবনের ভারসাম্য রক্ষার কথা বলে।

ড. আবুল কালাম আজাদ : ইসলাম শান্তির শিক্ষা দেয়, মধ্যপন্থা তথা ভারসাম্য শিক্ষা দেয়। ইসলাম যুদ্ধের ময়দানেও মানুষ হত্যাকে নিরুৎসাহিত করে। বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছেঁড়াও ইসলামে নিষিদ্ধ। সুতরাং ইসলামি শিক্ষার প্রভাবে উগ্রতা ছড়াচ্ছে না। উস্কেও দিচ্ছে না।

তবে হ্যা, আমাদের দেশে ইসলামি শিক্ষা প্রদান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি ও বিচ্যূতি রয়েছে। এই ত্রুটি ও বিচ্যূতিগুলোর কারণে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : যেমন?

ড. আবুল কালাম আজাদ : শিক্ষার সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি সমস্যা। আমরা শুধু জাগতিক উন্নতিকেই উন্নতি মনে করি। অথচ যে শিক্ষার মাধ্যমে মানসিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে তার স্বীকৃতি দেই না। ফলে ইসলাম ও ইসলামি শিক্ষা দেশের প্রান্তিক মানুষের শিক্ষায় পরিণত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে কুরআন ও হাদিসের মূল উৎস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা হয় না; বরং তা শিক্ষা করা হয় দ্বিতীয় উৎস বা তৃতীয় কোনো উৎস থেকে। নিজেদের পছন্দসই মানুষের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে। মূল কুরআন ও হাদিস থেকে ইসলাম চর্চা না হওয়ায় যেকোনো মতবাদকে ইসলাম বলে চালিয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তৃতীয়ত আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ ইসলাম শেখানো হয় না। খণ্ডিত ইসলাম মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

03

আওয়ার ইসলাম : তাহলে যে অভিযোগ ইসলামি শিক্ষার ব্যাপারে রয়েছে?

ড. আবুল কালাম আজাদ : এখন আসি, অভিযোগের জায়গায়। ধর্মীয় শিক্ষা তথা ইসলামি শিক্ষা উগ্রতা উস্কে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রথম বলবো, ইসলামি শিক্ষায় কোনো উগ্রতা নেই। তবে ইসলামের নামে উগ্রতা হচ্ছে। ইসলামের কথা বলেই হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

সেটা ইসলাম নয়; ইসলামের বিকৃত রূপ। আর পৃথিবীতে শুধু মূল্যবান জিনিসেরেই জালিয়াতি হয়। যেমন টাকায় জালিয়াতি হয়, স্বর্ণে জালিয়াতি হয়। পৃথিবীতে ইসলামের মূল্য আছে বলেই ইসলামের নামে মানুষ জালিয়াতি করছে।

তাছাড়া আমাদের সমাজে সামান্য জিনিসকে বড় করে দেখার অভ্যেস আছে। যেমন ধরুন। সারা বছর দেশে যে পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয় তা এক ভাগ পরিমাণ অর্থও জাল হয় না। তবুও আপনি এক শ্রেণীর মানুষকে বলতে শুনবেন জাল টাকায় বাজার ছেয়ে গেছে। ইসলামি শিক্ষার ব্যাপারে অভিযোগটিও ঠিক এমন।

পৃথিবীতে শুধু মূল্যবান জিনিসেরেই জালিয়াতি হয়। যেমন টাকায় জালিয়াতি হয়, স্বর্ণে জালিয়াতি হয়। পৃথিবীতে ইসলামের মূল্য আছে বলেই ইসলামের নামে মানুষ জালিয়াতি করছে।

আওয়ার ইসলাম : ইংরেজি কারিকুলামে এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণরা জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থার সাথে জড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই দাবি করেছেন, আমাদের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষা থাকলে তরুণরা বিভ্রান্ত হতো না। আপনি কী মনে করেন?

ড. আবুল কালাম আজাদ : হ্যাঁ, আমিও মনে করি জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে পরিপূর্ণ ইসলাম থাকা প্রয়োজন। তাহলে ইসলামের নামে কোনো কথা সহজে চালিয়ে দেয়া যেতো না। আমরা এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিতে পারি। মুসলিম দেশ দুটোতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অভিন্ন ইসলামি শিক্ষা রয়েছে। আমাদের দেশেও তা হতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : অভিযোগ উঠেছে, ধর্মীয় নেতারা উগ্রতা মোকাবেলায় যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন না। আপনার কী মনে হয়, তাদের ভূমিকা আরও জোরালো হওয়ার সুযোগ ছিলো?

ড. আবুল কালাম আজাদ : আমার যদি ভুল না হয়, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশের আইপিজি মহোদয় এ অভিযোগটি করেছেন। আমি বলবো, ‘ধর্মীয় নেতারা’ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। কারণ, তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মসজিদের মেম্বারে বলেন আর মাদরাসাগুলোতে বলেন তাদের ভূমিকা নির্ধারণে তার সমাজ ও আশপাশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মসজিদের ইমামের চাকরি ও বেতন উভয়টা নির্ভর করে তার মসজিদের কমিটি ও মুসল্লিদের উপর। সুতরাং সে চাইলে মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস ও ধারণার বাইরে চেয়ে কিছু বলতে পারে না। সরকার যদি মনে করে, এ লোকগুলো দ্বারা উপকৃত হওয়া সম্ভব। তাহলে সরকারের উচিৎ হবে তাদের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা। এটা সরকারের জন্য খুব বড় কোনো ব্যাপার না। সরকারের অভয় ও আশ্রয় পেলে তারা সরকারের প্রত্যাশিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন।

আওয়ার ইসলাম : তাহলে তাদের কী কিছুই করার নেই?

ড. আবুল কালাম আজাদ : হ্যাঁ, আছে তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অবশ্যই জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করবেন। ইসলামের সঠিক অবস্থান মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। এটা তাদের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উগ্রতায় জড়িয়ে পড়া তরুণ ও যুবকদের আহবান করেছেন তারা যেনো ফিরে আসে। তিনি তাদের কাউন্সিলিংয়ের কথা বলেছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের কথা বলেছেন। এগুলো কারা করবে? এগুলো করবে, সমাজের ধর্মীয় নেতারাই।

‘ধর্মীয় নেতারা’ যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। কারণ, তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মসজিদের মেম্বারে বলেন আর মাদরাসাগুলোতে বলেন তাদের ভূমিকা নির্ধারণে তার সমাজ ও আশপাশের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মসজিদের ইমামের চাকরি ও বেতন উভয়টা নির্ভর করে তার মসজিদের কমিটি ও মুসল্লিদের উপর

আওয়ার ইসলাম : প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের পুনর্বাসনের কথা বলেছেন। কিন্তু অনেকেই তাতে ঝুঁকি দেখছে। আসলে ইসলামে অপরাধীর পুনর্বাসনের ব্যাপারে নির্দেশনা কী?

ড. আবুল কালাম আজাদ : প্রত্যেক ভালো কাজে এবং উপকারী কাজে ঝুঁকি আছে। ঝুঁকি থাকাটাই প্রমাণ করে এ কাজে কল্যাণ আছে। ইসলাম উপকারী বিষয়ে ঝুঁকি গ্রহণের কথা বলে। ইসলামি ফিকহের একটি মূলনীতিই হলো, ‘ঝুঁকি ব্যতীত কোনো উপকার বা লাভ নেই’। আমার মনে হয়, এ ঝুঁকি গ্রহণ করলে তা জাতির জন্য কল্যাণকরই হবে।

প্রধানমন্ত্রীর একথাই প্রমাণ শুধু অভিযান ও দমনই উগ্রতার শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং ভুল পথে চলে যাওয়া তরুণ, যুবক ও মধ্য বয়সী মানুষের জন্য ফিরে আসার সুযোগটুকু রাখতে হবে। ভালোবাসা, মায়া ও মমতা দিয়ে তাদের সুপথে আনার চেষ্টা করতে হবে।

আওয়ার ইসলাম : সমাজ থেকে উগ্রতার শেকড় উপড়ে ফেলার জন্য আর কী করা প্রয়োজন?

ড. আবুল কালাম আজাদ : পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষা প্রদানের কথা তো বললামই। সাথে সাথে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। তাহলো, সমাজ থেকে অন্যায় ও অবিচার দূর করতে হবে। দুর্নীতি দূর করতে হবে। আমাদের সামাজিক অবস্থা এমন পযায়ে নেমে গেছে যে, সমাজে অন্যায়কেই ন্যায় বলা হচ্ছে এবং ন্যায়কে অবহেলা ও তাচ্ছ্বিল্য করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হলে, একজন তরুণ ও যুবক তার ভবিষ্যতের ব্যাপার হতাশ হয়ে যান। তারা উগ্রতায় জড়িয়ে পরেন।

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সা. সে সমাজের ধ্বংসের কথা বলেছেন, যেখানে অন্যায় ন্যায় বলা হয়। যারা মিথ্যাকে সত্যের উপরে মযাদা দেয়। যারা জেনে-শুনে-বুঝে অন্যায় করে। সমাজের তরুণ প্রজন্ম যদি উগ্রতায় জড়িয়ে পড়ে, ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় তবে তার চেয়ে বড় অভিশাপ আর কী হতে পারে?

01

আওয়ার ইসলাম : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মেও উগ্রতা আছে। কিন্তু ইসলামি উগ্রপন্থার কথায় কেনো বেশি চর্চা হচ্ছে?

ড. আবুল কালাম আজাদ : আপনি চমৎকার একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন। ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদে উগ্রতা আছে। এটা ইতিহাস স্বীকৃত। কিন্তু এখানে সে আলোচনার অবতারণার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রবন্ধ হতে পারে।

ইসলামের বিষয়টি সামনে আসছে কারণ হলো, ইসলামের পুরো ইতিহাসটাই শান্তিপূর্ণ। ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা. কে একজন হত্যা করতে আসলো। তিনি যখন লোকটির তলোয়ার হাতে পেলেন, তখন তাকে ছেড়ে দিলেন। ইসলামের এ রূপটিই পৃথিবী হাজার বছর ধরে দেখেছে। তাই মানুষ ইসলাম অনুসারীদের কাছে উগ্রতা প্রত্যাশা করে না।

বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করা যায় এভাবে, যদি কোনো অঙ্গে কোনো ক্ষতই না থাকে এবং সেখানে ক্ষত তৈরি হয় তবে তা মানুষের চোখে পড়বেই। আর অনেক ক্ষতের মাঝে একটি ক্ষত যোগ হলে তা মানুষের চোখেই পড়বে না।

তাছাড়া ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের প্রতি পশ্চিমা মিডিয়ার বিদ্বেষ নতুন কিছু নয়। সব মিলিয়েই ইসলামের নামটা বার বার সামনে চলে আসছে।

আমাদের সামাজিক অবস্থা এমন পযায়ে নেমে গেছে যে, সমাজে অন্যায়কেই ন্যায় বলা হচ্ছে এবং ন্যায়কে অবহেলা ও তাচ্ছ্বিল্য করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হলে, একজন তরুণ ও যুবক তার ভবিষ্যতের ব্যাপার হতাশ হয়ে যান। তারা উগ্রতায় জড়িয়ে পরেন।

আাওয়ার ইসলাম : ইসলামি হোক বা ইসলামের নামে হোক উগ্রতা বৈশ্বিক রূপ নিলো কেনো?

ড. আবুল কালাম আজাদ : ইসলাম সত্ত্বাগতভাবেই বিপ্লবী ধর্ম। ইসলাম প্রকৃতির মধ্যেই বিপ্লব আছে। তাই ইসলামের নাম যেখানেই আছে সেখানেই বিপ্লবের হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কিছু মানুষ ইসলামের এই স্পৃহাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে।

তবে তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, বৈশ্বিক ব্যবস্থায় আজ মুসলমান অবিচারের শামিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পূর্ব তিমুর ও ফিলিস্তিন। পূর্ব তিমুরে বিশৃংখলা হলো সরকার তা দমন করতে কঠোর হলো। কিছুটা বাড়াবাড়িও হলো। সারা বিশ্ব প্রতিবাদ করলো পূর্ব তিমুর স্বাধীন হলো। কিন্তু তার পাশেই প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রোহিঙ্গারা নিযাতিত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে বিশ্বশক্তি নিরব।

ফিলিস্তিনের বিষয়টিও আসতে পারে। যে কোনো বিচারেই ফিলিস্তিনে মুসলিমরা মাজলুম। অথচ বিশ্বশক্তির সমর্থন বরাবর অত্যাচারির পক্ষে। এমন অবিচার মুসলিম যুবকদের বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষ্যাপিয়ে তুলছে। ফলে উগ্রতাও বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আপনি এবং আপনার মতো আরও যারা আছেন তারা উগ্রতা দমনে আপনি কী করতে পারেন?

ড. আবুল কালাম আজাদ : আমরা যা করতে পারি তাহলো, প্রধানমন্ত্রী যে কাউন্সিলিংয়ের কথা বলেছেন তা আমরা দিতে পারি। আমাদের বিভাগের কারিকুলাম এমনভাবে সাজাতে পারি যাতে শিক্ষার্থীরা উগ্রতায় নিরুৎসাহিত হয়। ইসলাম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ গবেষক তৈরি করতে পারি।

আওয়ার ইসলাম : আমাদের দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. আবুল কালাম আজাদ : আপনাদেরও ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য।

আরআর

যে মাদরাসায় অমুসলিম ছাত্রই বেশি

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সার্বজনীন করার সুযোগ নেই: অধ্যাপক মাহবুব


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ