শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


বৈশ্বিক চরমপন্থা: দুটি কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Musa al hafijমুসা আল হাফিজ

ভারতের মোম্বাইয়ে চরমপন্থীদের হামলার ঘটনার তাপ কিছুটা কমে এসেছে। ভারতে ইসলাম বিরোধী তুফান রাজনীতির মঞ্চ থেকে কিছুটা সরে গিয়ে সামাজিক চারণভূমি অধিকার করেছে। বিজেপির সদস্য সংখ্যা এক বছরে আরো আশি লক্ষ বেড়ে গেলো। সেখানকার আলেমরা মোম্বাই এর পাশে প্রবলভাবে দাঁড়িয়ে। ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে তুমুল সোচ্চার।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এলেন সাইয়িদ সালমান হুসাইনী নদবী। তিনি হযরত আলী নদভীর রক্ত, চেতনা,কলম ও ইলমের উত্তরাধিকারী। ইসলামী বুদ্ধিজীবিতার বিশ্বব্যক্তিত্ব। সিলেটে তিনি অবস্থান করেন দুই দিন। এক অভিজাত হোটেলে উলামা সম্মেলনে যোগ দেবেন। তার আগে মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী ও আমি দেখা করলাম হযরতের সাথে, একান্তে।

সেদিন প্রশ্ন করেছিলাম যে ভারত কাশ্মীরকে মুসলমানদের গোরস্থান বানায়, বাবরী মসজিদকে বধ্যভূমি বানায়, গুজরাটে মুসলমানদের আগুনে পোড়ায়, সে ভারতে সামান্য এক হামলার কারণে আপনারা প্রতিবাদী হলেন, ভারতপ্রেমে সোচ্চার হলেন।

কিন্তু কেন? তীর্যক প্রশ্ন তিনি হয়তো আশা করেন নি। অল্পক্ষণ চুপ করলেন। তারপর বললেন, ভারতে মুসলমানরা খুব সুখে নেই। তবে বেঁচে আছে আপন ধর্ম ও ঐতিহ্য নিয়ে। তাদের সমস্যা হাজারো। কোনো সন্ত্রাসী হামলা সে সব সমস্যার সমাধান দেবে না। কাশ্মীরের মুসলিমদের মুসিবত কমাবে না। ঘাতকদের হাতকে দুর্বল করবে না। বরং একটি হামলা তাদেরকে আরো সবল করবে, মুসলিমদের আরো দুর্বল করবে। এ হামলার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হলাম। কারণ এটা আমাদের দায়িত্ব।

হামলাটি কী ইসলামের পক্ষ থেকে?  না। একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে, যারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। ভারতের আলেমরা একে দেখেছেন কিছু মুসলিমের অপরাধমূলক হটকারিতা হিসাবে। যার দায়ভার থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজত করা ছিলো তাদের দায়িত্ব। হামলাকারীরা এতোই নির্বোধ যে, তারা জানে না এ রকম কয়েক শত হামলা ভারতের মতো রাষ্ট্রের কোনোই ক্ষতি করবে না। কিছু মানুষকে ওরা মারবে। কিন্তু পরিণতিতে মুসলমান ও ইসলামের যে ক্ষতি হবে, তা সুদূরপ্রসারী।আমরা সেই ক্ষতি হতে দিতে চাই না। এমন হামলাকে তাই মুসলিমদের নিরাপত্তাবিরোধী হামলা হিসেবে গণ্য করি।

দুই.

খতীব উবায়দুল হক রহ. এর এহসান এদেশের মুসলমানদের উপর বিপুল।এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চরমপন্থার মেরুদণ্ডে তিনি আঘাত করেছেন। জেএমবি দানব এ দেশকে আরেক সিরিয়া ও ইয়ামন বানাতে পারতো। ওরা সফল হলে কী হতো? আরো কয়েক হাজার বোমা ফুটতো, কয়েক হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। এই তো?

কিন্তু তারপর? তারপর বাংলার আকাশে উড়তো বোমারু বিমান। ছাই হয়ে যেতো হাজারো মসজিদ-মাদরাসা-জনপদ। ঘটতো শত শত গণহত্যা। নির্মমতার আগুনে পুড়তো লক্ষ লক্ষ মুসলিম জীবন। যারা এ পরিস্থিতির জনক, তারা থাকুক বা থাকুক, থাকতো না ইসলামী জনতার কোনো নিরাপত্তা। ইসলামকেই দাঁড় করানো হতো জাতিসত্তা বিরোধীর কাঠগড়ায়।এখন যা হচ্ছে, তার তুলনায় হাজার গুণ বেশি। ঘরে ঘরে জন্ম নিতো তসলিমা-অভিজিৎ। স্রোতের মতো। সে পরিস্থিতি এলো না বলে কারো যদি দুঃখ হয়, তাকে আমরা মুসলিমদের বন্ধু বলতে পারি না।

তিন.

আইএস কি ইসলামের প্রতিনিধি? না। একটি বা কয়েকটি হামলা কি ব্রিটেনের শক্তি কমিয়ে দেবে? না। এমন হামলা চলতে থাকলে পশ্চিমারা কি মুসলিম নিধন বন্ধ করবে? না আগামী পঞ্চাশ বছরে ইউরোপ ইসলামের ভূমিতে পরিণত হবার সম্ভাবনাকে এ হামলা কি বিকশিত করবে? না। ইসলামের দাওয়াত ও বিশ্বময় ইসলামের উত্থান-প্রয়াসে এমন হামলা কি ইতিবাচক গতিসঞ্চার করবে? না।  এ হামলা ফিলিস্তিন-সিরিয়া-আফগান বা আরাকানের মুসলমানদের জন্য কোনো সুদিন বয়ে আনবে? না। ইউরোপে বসবাসরত মুসলমানদের জন্য এ হামলা কোনো ইতিবাচক বার্তা? না। কয়েক কোটি মুসলমানের জন্য ইউরোপকে নরক বানিয়ে মুসলমানদের জন্য যে প্রেম দেখানো হচ্ছে, সেটা কি প্রেম? না।

অতএব এ হামলাকে সমর্থন করতে পারি না।যে যুক্তি ও দায়িত্ববোধ থেকে আরশাদ মাদানী, মাহমুদ মাদানী, সালমান নদভী কিংবা খতীব উবায়দুল হক রহ. চরমপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার, সে যুক্তি ও দায়িত্ববোধ থেকে আমরাও চুপ থাকতে পারি না।

লেখক : কবি, গবেষক ও কলামিস্ট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ