শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


পোশাক কোথাও বাধা নয়, সমস্যাও নয়, সমস্যা হলো দৃষ্টিভঙ্গির: আবদুস সাত্তার আইনী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Ainyআবদুস সাত্তার আইনী সম্ভাবনাময় একজন দুরন্ত তরুণের নাম। সংগ্রামী প্রত্যয়ের প্রতিকৃতী। জন্ম ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। জন্মের ছয় দিন আগে বাবা মারা যায়। লালিত পালিত হন নানা বাড়ি।সেখানেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি তার। অফূরন্ত উদ্যোম ও সাহসে ভরপুর এ তরুণ পড়েছেন দেশের সেরা সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০০৫ সালে দাওরা সম্পন্ন করেছেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়াতে এবং ২০১৫ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগে।

তবে তার মূল পরিচয় তিনি একজন লেখক ও ভালো অনুবাদক। বর্তমানে তিনি মাসিক আল জান্নাত-এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। বাজারে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ। ফিলিস্তিনের স্মৃতি, সিরাত থেকে শিক্ষা, লাল কর্কট, আগামী দিনের পৃথিবী, বিচূর্ণ সিংহাস, কাসাসুল কুরআন,  দেশ-দেশান্তার তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ।

ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এ তরুণ আলেম জানিয়েছেন জীবন ও শিক্ষা জীবনের কথা। ক্যাম্পাস জীবনের টুকরো স্মৃতি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অবস্থা ও অবস্থান ও লেখক হওয়ার গল্প। উদ্দীপ্ত তরুণ আবদুস সাত্তার আইনীর গল্পগুলো পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

আওয়ার ইসলাম : আপনার জন ও বেড়ে ওঠার দিনগুলো কেমন ছিলো?
আইনী : আমার জন্ম আমার নানার বাড়িতে, ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার তেরশিরা গ্রামে। আমার জন্মের ছয় দিন আগে আমার বাবা মারা যান। আমার মা যখন আমার নানার বাড়িতে আসেন সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য, তখন আবার বাবা কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। পরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাঁকে ফিরিয়ে দেন। বাড়িতে আনার পর ঐ দিনই তিনি মারা যান। আমার বাবার বাড়ির কেউ আমার নানার বাড়িতে মৃত্যুসংবাদ দেন নি। পরেরদিন আমার নানার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর আসে যে, আমার বাবা মারা গেছেন।

নানার বাড়িতেই আমার শৈশব কেটেছে। শৈশবে বেশ দুষ্টু ছিলাম বলে নানাজনে নানা রকম মন্তব্য করতো। আসলে দুষ্টু অনেকেই ছিলো; কিন্তু আমি নানা বাড়িতে বেড়ে উঠছি এবং আমার বাবা নেই বলে আমার দুষ্টুমিটা সবার চোখে বেশি পড়তো। আরেকটি বিষয় আমাকে খুব পীড়া দিতো, এখনো দেয়। তা এই যে, আমার নানা ও মামারা আমার অন্য খালাতো ভাইবোনদের সামনে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করতেন। যেমন: ওদের কতো বুদ্ধি, আমার বুদ্ধি নেই; ওরা পড়াশোনা করে, কাজ-কামও করে, আমি পড়াশোনাও করি না, কাজ-কামেও মন নেই, শুধু দুষ্টুমি করি; ওরা আদব-কায়দা ভালো জানে, আমি জানি না, ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ এর কোনোটিই সত্য নয়। আমার প্রতি কেন এই আচরণ করা হতো সেটা তখনই আমি বুঝতাম। কিন্তু বলতে পারতাম না। এসব বিষয় এবং আমাকে আমার মামারা যেসব শাস্তি দিতেন সেগুলোর কথা বাদ দিলে আমার শৈশব আনন্দময়ই ছিলো। তবে সবার শৈশব সমান আনন্দময় নয়।

শৈশবে পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। প্রাইমারি স্কুলে ভালো ফলাফলই করতাম। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলাম। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ঢাকায় চলে এলাম।

জনকল্যাণমুখী কোনো শিক্ষাই ইসলামি চেতনার বিপরীত নয়। ধর্মশিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা, আর কোনো শিক্ষা যথার্থ শিক্ষা নয়- এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক স্লোগান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষা জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
আইনী : আমার বড়মামা আর্মড পুলিস ব্যাটালিয়নে চাকরি করতেন। তিনি আমাকে এনে উত্তরা বাইতুস সালাম মাদরাসায় ভর্তি করেন। এই একটি কাজের জন্য আমি তাঁর কাছে চিরঋণী। মক্তব ১ম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগতো, লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম এবং পড়াও তেমন পারতাম না। পরের বছর থেকে আমার অবস্থা বদলে যায়। আমি পরীক্ষায় প্রথম হতে শুরু করি। মাদরাসায় সবসময় ভালো ফলাফলই করেছি। প্রথম বা দ্বিতীয় হয়েছি। জামাতে জালালাইন পর্যন্ত আমার গড় নাম্বার ৯০-এর বেশি ছিলো। এর মধ্যে যখন হেদায়েতুন্নাহু পড়ি সেই বছর কুরআন শরীফ হেফজ করেছি। বললে বাহুল্য হবে না যে, আমি কখনো সময়ের অপচয় করি নি।

জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় (নতুন) মেশকাত ও দাওরা হাদিস পড়েছি। এই দুই বছর আমার খুব দুরবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। আমার শিক্ষক মুফতী ইবরাহিম হাসান সাহেব আমার পাশে না দাঁড়ালে হয়তো পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তো। তারপরও আমি পড়াশোনায় যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেছি। দাওরা হাদিস পড়ার পর দুই বছর শিক্ষকতা করেছি। এরপর দারুল মাআরিফে পড়েছি।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষা জীবনে কেউ কী আপনাকে প্রভাবিত করেছে? করলে কেনো?
আইনী : মক্তব দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে একটি বই পুরস্কার পেয়েছিলাম : মনীষীদের গল্প শোন। লেখক ছিলেন আতোয়ার রহমান। এই বইয়ে বিখ্যাত মুসলিম মনীষীদের জীবনী ছিলো। বইটি আমার খুব ভালো লেগেছিলো এবং মনে হয় আমাকে প্রভাবিতও করেছিলো। পরে কিতাব বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় শায়খ আবদুল কাদির জিলানী রহ.-এর একটি জীবনী রচনা করি, আরবিতে। এটি ৫৬ পাতার একটি পা-ুলিপি ছিলো। আমার এক শিক্ষক (মাওলানা আরিফ হক্কানী) বলেছিলেন যে, বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা তিনি করবেন। পরে বুঝতে পেরেছি যে, বইটি আসলে উঁচু মাপের কিছু ছিলো না, যদিও এতে ব্যাকরণগত কোনো ত্রুটি ছিলো না। সেই সময় আমি নিজেকে এই মনীষীর জায়গার ভাবার চেষ্টা করতাম। এটা একটা ব্যাপার ছিলো, যা আমার অবচেতন মনে কাজ করতো।

আওয়ার ইসলাম : কেনো মনে হলো, মাদরাসা শিক্ষা সম্পন্ন করেও আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন?
আইনী : ব্যাপারটা যে হুট করে মনে হয়েছে তা নয়। বাইতুস সালামে পড়ার সময় বাইরের লোকদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করতাম। যেমন, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি দিবস উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান হতো সেগুলোতে যেতাম। শিশু একাডেমিতে বেশি যেতাম। বাইরের বই-ও তো পড়তাম। মনের ভেতর যে-বিষয়টা তখন ঘোরাফেরা করতো সেটা হলো বাইরের লোকেরা কেন মাদরাসার ছেলেদেরকে ভিন্ন চোখে দেখে? আমার তখন দাড়ি-টারি ওঠে নি, সেই সময় শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে একটি বই পড়ছিলাম। দেখলাম আমার সামনে এসে এক যুবক বসলো এবং আমাকে দেখে হাসতে লাগলো। আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি ওকে মনে মনে ধমকালাম কিন্তু আমার জায়গায় যদি স্কুলের ছেলে থাকতো তাহলে হয়তো যুবকটি বলতো, আহ কী চমৎকার! কী পড়ছ তুমি! এইসব কারণে মনের ভেতর একটা প্রশ্ন জেগেই থাকতো। কিন্তু তখনো আমি সিদ্ধান্ত নিই নি যে মাদরাসার বাইরে কিছু পড়াশোনা করবো। বড় মুহাদ্দিস হওয়ারই স্বপ্ন দেখতাম।

জামিয়া রাহমানিয়ায় যখন পড়ি, আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক আমার নানা (আমার নানার চাচাতো ভাই) বললনে, তুই এক কাজ কর, দাখিলে রেজিস্ট্রেশন করে ফেল, সুযোগ পেলে পরীক্ষ দিয়ে দিবি। আমার কোনো আগ্রহই ছিলো না। তারপরও ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলাম। যা করার তারাই করলেন। কিন্তু প্রথমবার পরীক্ষা দিই নি, দ্বিতীয়বারও না। কেন যেন মনটাকে ওদিকে নিতে পারছিলাম না। তা ছাড়া পারিবারিক ঝামেলাও ছিলো। তৃতীয়বার ও শেষবার নানা বললেন, দেখ! এটাই শেষ সময়। পরীক্ষা দিতে চাইলে এবারই দিতে হবে। পরে আর পারবি না।

মাসিক রহমতের সম্পাদক মনযূর আহমদ সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। তিনি বললেন, পরীক্ষা দাও। তখন পরীক্ষা দিলাম। খুব ভালো ফল হলো। আলিমে ঢাকা আলিয়ায় ভর্তি হলাম। তখন আমি বাড্ডায় একটি এনজিওর সঙ্গে কাজ করি।

Image may contain: 1 person, standing, hat, beard and outdoorআওয়ার ইসলাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গল্পটা?
আইনী : মনযূর আহমদ সাহেবের সঙ্গে রিকশায় চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, এই প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার মান এখনো সর্বোচ্চ। দেখো, এখানে ভর্তি হতে পার কি-না। আমি দোনামোনায় ছিলাম। তিনি বারবার একই কথা বললেন। আলিম পরীক্ষাতেও ভালো ফল হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই টিকে গেলাম। আমার আশা ছিলো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়বো। কিন্তু মাদরাসার ছাত্রদের ওই বিষয়টি দেয়া হয় না বলে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে ভর্তি হলাম।

আওয়ার ইসলাম : ক্যাম্পাস জীবন সম্পর্কে অনুভূতি কী? কখনো বিচ্ছিন্ন বোধ করেছেন কী?
আইনী : আমার ক্যাম্পাস জীবন ছিলো ‘অল টাইম দৌড়ের ওপর’। জীবনটাকে সেভাবে উপভোগ করতে পারি নি। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা গোটা পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হয়েছে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করতে হয়েছে। তারপরও নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।

না, কখনো বিচ্ছিন্ন বোধ করি নি। আমার শিক্ষকবৃন্দ বা সহপাঠীরা আমার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করেন নি যাতে আমার নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয়েছে। প্রথম দিকে খুব আড়ষ্ট ছিলাম। মেয়েদের সঙ্গে কথাই বলতাম না। ওরা ডাকলেও সাড়া দিতাম না। একদিন রুচি শ্রাবস্তী (সে হলিক্রস কলেজে পড়েছে, অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী, বর্তমানে দিল্লিতে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে) সেমিনার রুমে আমাকে বেশ জোরগলায় বললো, সাত্তার! তোমার সমস্যা কী? তুমি আমাদের সঙ্গে কথাও বলো না, ডাকলেও সাড়া দাও না, তোমার সমস্যা কোথায়? রুচির এভাবে কথা বলার পর আমার নাম হয়ে গেলো ‘সমস্যা আছে’। যাইহোক, আমার আড়ষ্টতা কাটাতে সময় লেগেছে।

আওয়ার ইসলাম : আপনার পোশাক ও অতীতের শিক্ষা ক্যাম্পাস পারমর্ফমেন্সের উপর কোনো প্রভাব ফেলেছে কী?
আইনী : আসলে পোশাক কোথাও কোনো বাঁধা নয়, সমস্যাও নয়। সমস্যা হলো দৃষ্টিভঙ্গির। অনেকে মনে করে, গায়ে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি থাকলে মানুষ কী ভাববে? বা তারা আমাকে অবজ্ঞা করবে। আপনার যদি যোগ্যতা থাকে এবং বলার মতো ভাষা থাকে, আপনার পোশাকের কারণে কেউ আপনাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করতে পারবে না। তবে, কিছু কিছু জায়গায় ড্রেসকোড মেইনটেইন করতে হয়, কোর্ট-টাই পরতে হয়, সে কথা ভিন্ন।

আওয়ার ইসলাম : এখন ক্যাম্পাসকে কীভাবে অনুভব করেন?
আইনী : ২০১৫ সালে আমার মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এখন তেমন যাওয়া হয় না। তবে ক্যাম্পাসে গেলে বা ক্যাম্পাস লাইফের কথা ভাবলে বেশ উদ্দীপিত বোধ করি।

আওয়ার ইসলাম : আপনি এখন কী করছেন? কর্মক্ষেত্রে ভার্সিটির শিক্ষা আপনার জন্য কতোটা সহায়ক হয়েছে?
আইনী : আমি নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রকাশিত একটি ইসলামি পত্রিকা দেখাশোনা করি। এই পত্রিকায় আগে আমি লিখতাম। এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে আমার লেখালেখির যোগ্যতাকেই ধর্তব্যে আনা হয়েছে। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয় নি।

সরকারি কর্মক্ষেত্রের ব্যাপারে আমার খানিকটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। দেখি কী হয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনি কী মনে করেন, ইসলামি সমাজ গঠন এবং সামাজিক বিপ্লবের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন তরুণের জন্য আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক?
আইনী : আসলে আধুনিক বা সাধারণ শিক্ষাকে ইসলামি চেতনার বিপরীতমুখী করে দেখার বিষয়টাতে আমার আপত্তি আছে। জনকল্যাণমুখী কোনো শিক্ষাই ইসলামি চেতনার বিপরীত নয়। ধর্মশিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা, আর কোনো শিক্ষা যথার্থ শিক্ষা নয়- এই ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক স্লোগান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এটা হলো ধর্মকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলার একটা স্লোগান। কোনো শিক্ষা ইসলামি চেতনার পরিপন্থী কিনা সেটা নির্ণয় করার জন্য সেই শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাঠামো নিয়ে ভাবতে হবে।

অনেকে মনে করে যে, আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষের চিন্তাচেতনা ইসলামের বিপরীতে চলে যায়। আসলে কথাটা হলো, মানুষের চিন্তা-চেতনা ইসলামের বিপরীতে চলে যায় যদি ইসলাম সম্পর্কে তাঁর পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকে বা খণ্ডিত ধারণা থাকে। ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জনের পর কেউ গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়েছে এমন উদাহরণ কমই আছে। অনেকে আছে, যারা মাদরাসায় তাদের জীবনের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করে, ফলে একূল ওকূল দুটিই হারায়। মাদরাসার পরিম-লে বা এই পরিম-লের বাইরে তারা কিছু করতে পারে না। ফলে তারা একসময় মাদরাসাবিদ্বেষী হয়ে পড়ে। তারপরও বলতে হবে যে, কিছু মানুষ থাকে যারা পরিপূর্ণ ইসলামি শিক্ষা অর্জনের পরও ইসলামের অসমর্থিত বিষয়কে ধারণ করে জীবনযাপন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই টিকে গেলাম। আমার আশা ছিলো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়বো। কিন্তু মাদরাসার ছাত্রদের ওই বিষয়টি দেয়া হয় না বলে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে ভর্তি হলাম

আওয়ার ইসলাম : লেখালেখির সূচনা কীভাবে হয়? অনুপ্রেরণায় কে ছিলেন?
আইনী : বাইতুস সালামে পড়ার সময়ই লেখালেখির সূচনা হয়। যখন প্রথম বর্ষে পড়ি তখনই খন্দকার মনসুর আহমদ (হাফিজাহুল্লাহ) কর্তৃক সম্পাদিক একটি ছড়া-সংকলনে আমার একটি ছড়া প্রকাশিত হয়। এটি আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা। তারপর ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সবুজ পাতায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় পুষ্প বের হলো। লেখালেখির আগ্রহ ও চর্চা অনেকটা বেড়ে গেলো।

আওয়ার ইসলাম : প্রথম প্রকাশিত লেখা ও তার অনুভূতি কেমন ছিলো?
আইনী : আনন্দ লেগেছে বটে, তবে সেটা অবিমিশ্র নয়। তবে যখনই কোনো পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে উদ্দীপিত বোধ করেছি।

আওয়ার ইসলাম : আপনার লেখায় কার চিন্তা ও দর্শনের ছাপ খুঁজে পান?
আইনী : আমার লেখালেখির পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেকের অনুপ্রেরণা রয়েছে। আমি আমার মতো করে লেখার চেষ্টা করি। তারপরও কারো না কারো প্রভাব থাকতেই পারে।

আওয়ার ইসলাম : জীবন সায়াহ্নে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
আইনী : আসলে মানুষের জীবনের যাত্রাপথ একইভাবে এগোয় না। জীবনে আশাভঙ্গের বেদনা আছে, ভ্রান্তি ও অনুতাপ আছে, অনিশ্চয়তা আছে, উত্থান ও পতন আছে। আমার কিছু চিন্তা আছে, কিছু পরিকল্পনা আছে। সেগুলোকে বাস্তবরূপ দেয়ার ক্ষেত্রে আমার পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ। সময়ের প্রেক্ষাপটেই নির্ণীত হবে আমি কতটুকু পেরেছি এবং কতটুকু পারি নি।

আরআর

মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনায় ফেসবুক স্ট্যাটাস; ইমাম গ্রেফতার

কাতারে ইমাম নিয়োগ: কিছু কথা কিছু ব্যথা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ