শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশের আলেমদের ঐক্য জরুরি: আল্লামা কমরুদ্দিন আহমদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উপমহাদেশের বিখ্যাত দীনি বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের প্রবীণ মুদার্রিস হজরত শায়খ আল্লামা কমরুদ্দিন আহমদ গৌরখপুরী (হাফিযাহুল্লাহ৷) যিনি দেওবন্দে একসময় দীর্ঘ দিনের জন্য শিক্ষাসচিবও ছিলেন৷ হাদিস শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব 'মুসলিম শরিফে'র দরস দিচ্ছেন প্রায় ৪০বছর ধরে৷ ক' মাস আগে তিনি দেওবন্দে শায়খে সানী হিসেবেও দায়িত্বগ্রহণ করেছেন৷

হজরতের বাসা দেওবন্দ মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে 'তাইয়্যিবে'র সাথেই৷ বাংলাদেশী মুসলমানদের চলমান নানা বিভক্তি, মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশি বেশি চক্রান্ত, চলমান আরো নানা সমস্যার সাথে খৃষ্টান মিশনারীর তৎপরতা সম্পর্কেও কথা হয়৷

কথা বলেছেন, দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষার্থী হাওলাদার জহিরুল ইসলাম

বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম, তাদের দীনি খেদমত ও জাতীয় ইস্যু নিয়ে তাদের প্রয়াস সম্পর্কে জানতে চাই। 

বাংলাদেশে উলামাদের সংখ্যা আশা জাগানিয়ার মতো৷ তাদে দীনি খেদমতও প্রশংসার দাবিদার৷ তবে উলামাদের মাঝে ঐক্যের একটা অভাব রয়েছে৷ ছোট ছোট বিষয়ে মতভেদ করে হকপন্থী উলামাগণ বিভিন্ন দলে বিভক্ত৷ ছোট খাটো বিষয়ে এখতেলাফ থাকতে পারে৷ এটা স্বাভাবিক৷ তবে জাতীয় ও ইসলামি স্বার্থে সবার মাঝে এত্তেহাদ-ঐক্যটা জরুরি৷

বাংলাদেশে জনসংখ্যার দিক থেকে মুসলিম হলো ৯০ শতাংশ৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উলামাদের কর্তৃত্ব তেমনটা দেখা যায় না৷ এর পেছনে কারণ কী বলে মনে করেন?

ঐ একই কথা৷ এখতেলাফটা কম হতে হবে৷ তাহলে উলামাদের জন্য সংসদে যাওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ খুবই সহজ৷ দেখো, তোমাদের বাংলাদেশে মওদূদী মতবাদে বিশ্বাসী জামায়াতে ইসলামি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে বড় বড় পদের অধিকারী হয়েছে৷ (যদিও এখন তারা স্বাধীনতাবিরোধী কাজের জন্য ভালো অবস্থানে নেই৷) এটা তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার ফসল৷ অথচ উচিত তো ছিলো হক্কানী উলামায়ে কেরামের বড় একটা অংশ সংসদে যেতে পারা৷ উলামাদের সংখ্যা তো কম না৷ সাধারণ মানুষরাও উলামাদের ভালোবাসে৷

বাংলাদেশে খৃষ্টান মিশনারী সম্পর্কে সম্ভবত জানা আছে?

বিষয়টা আমরা জানি৷ বাংলাদেশ সফরে গিয়েও শুনেছি৷ বাংলাদেশে চাটগাম-চট্টগ্রাম, নোয়াখালিতে খৃষ্টান মিশনারীগুলো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের আড়ালে যে হারে 'খৃষ্টবাদ' প্রচার করছে তা খুবই আশঙ্কাজনক। এসব দ্রুত থামিয়ে দেয়া দরকার৷ অন্যথায় তারা আগামীতে ইসলাম ও দেশের জন্য ক্ষতিকর বলেই সাব্যস্ত হবে৷ যেমটি করেছিলো তৎকালীন ব্রিটিশরা৷

এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের করণীয় সম্পর্কে যদি বলতেন?

আলহামদু লিল্লাহ! বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম দীনের বহুমুখি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন৷ দিন দিন মাদরাসা বাড়ছে, আলেমেদের সংখ্যা বাড়ছে৷ তবে মিশনারীগুলোর মোকাবেলা শুধু দীনিভাবে করলেই যথেষ্ট হবে না৷ মিশনারীগুলো সাধারণত গরিব অসহায় মুসলামনদের টার্গেট করে থাকে৷ সে ক্ষেত্রে উলামাদের জন্য করণীয় হলো-দীনদার বিত্তশালী মুসলমানদের সহযোগিতায়,
১৷ বিভিন্ন এলাকায় (যেখানে মিশনারীগুলো কাজ করছে) শিক্ষাকেন্দ্র বা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা৷
২৷ বাচ্চাদের বিনা মূল্যে (দীনি ও আধুনিক) শিক্ষা প্রদান করা৷
৩৷ বড়দের মাঝে দাওয়াতি কাজ জোরদার করা৷
৪৷ প্রাথমিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা৷
৫৷ গরবিদের মাঝে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা৷
৬৷ সময়ে সময়ে কল্যাণ তহবিল গঠনপূর্বক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা৷
এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ দিয়েই মিশনারীগুলোর সফল মোকাবেলা সম্ভব৷ এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবেও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের সহযেগিতা করা প্রয়োজন৷ যাতে তারা অভাবের কারণে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ না করে!

উলামায়ে কেরাম ও দীনদার মুসলমানগণ জোরালো ভূমিকা (দীনি ও আর্থিকভাবে) পালন করলে আশা করি সাময়িক সব সমস্যা কেটে যাবে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দীনে ইসলামের জন্য কবুল করুন৷ ইসলামের সেবা করার তাওফিক দিন৷ আমিন!

এআর


সম্পর্কিত খবর